আমার নানী সাতাশ বছর বয়সে বিধবা হয়েছিলেন ! নানী শব্দটা শুনলে মানসপটে যে চেহারাটা ভেসে ওঠে তিনি আদপেই অমন নন! শিক্ষিত এবং স্মার্ট! নানীর বাবা মানে আমার আম্মার নানা লন্ডন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে এসেছিলেন! আমার নানী রূপবতী ছিলেন না - জাতের মেয়ে কালোও ভালো -এই থিওরির কারনে হোক বা অঢেল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবার কারনে হোক - আমার নানীকে বিয়ে করার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে গেল ! পরিবার থেকেও বিয়ের জন্য চাপ দেয়া হলো
কিন্তু তিনি রাজি হলেন না!
সাতাশ থেকে বিরাশি - জীবনের এই লম্বা সফর তিনি একাই পার করেছেন! বড় হবার পর জিজ্ঞেস করেছিলাম, বুবলী, তুমি দ্বিতীয়বার বিয়ে করো নি কেন ?
তিনি যা উত্তর দিলেন তার সারমর্ম হলো, তিনি কখনও একাই হন নি ! প্রতিটি রোমকূপে স্বামীর আদরের স্পর্শ, প্রতি রক্তকণায় তাঁর প্রতি ভালোবাসা, মগজের প্রতি কোষে স্বামীর কল্যান চিন্তা - স্বামী প্রতি মুহূর্তে তাঁর অস্থিত্বের সাথে মিশে আছে।
প্রস্থানের পরও স্বামী স্থান দখল করে আছেন তো আছেনই ! খোয়াবে খায়েশে শরীরে আত্মায়। মরে গিয়েও সরে যাবার নামগন্ধ নেই। তার উপস্থিতি যেমন জবরদস্ত ছিলো তার অনুপস্থিতিও ভীষণ জোরালো!
স্বামী যে শুধু কামনাবাসনার পাত্র ছিলো তা নয় - সে ছিলো সাধনার পুরুষ! শুধু আমার নানী নয় আমার ফেইসবুকে লাবণ্য লিপি সহ এমন অনেক বন্ধু আছেন যাদের জিজ্ঞেস করে আমি এমন ধরনের উত্তর পেয়েছি!
কিন্তু কেউ কেউ স্বামীর মৃত্যুর পর শূণ্যতায় ভোগেন! শুধু সংসার নয় সমগ্র বিশ্বসংসার তার ফাঁকা লাগে! স্বামীর স্মৃতি নিয়ে যতই নিজেকে ফাঁকি দিতে চান না কেন ফাঁক গলে অন্য পুরুষ জীবনে চলে আসে ! তিনি পুনরায় বিয়ে করেন !
একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিবাহ নিয়ে বাঁধা নেই! কারন, বিয়ে শুধু দেহের ক্ষুধা বা হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতে কেউ করেনা। বিয়ে সামাজিক মর্যাদা আর অর্থনৈতিক নিরাপত্তার পাশাপাশি একাকিত্ব দূর করে মানসিক শান্তিও দেয় !
যার জীবন তার সিদ্ধান্ত! যার পরিস্থিতি সেই বোঝে! তার পরণের জুতার ভেতর পেরেক গুতা মারছে কি না সেটা আপনি আমি কেউই বুঝব না। কারন সেই জুতা আমার বা আপনার পায়ে নেই!
লেখকঃ ডাঃ সাবরিনা হুসেন মিষ্টি।