খেলাধুলা

সাকিব আল-হাসানের রাজনীতি ও বিতর্ক: দেশপ্রেম নাকি স্বার্থপর অনুগামীতা?

সাকিব আল-হাসানের রাজনীতি ও বিতর্ক: দেশপ্রেম নাকি স্বার্থপর অনুগামীতা?

সেলিম মাহবুব : সাকিব আল হাসানের ভেতরে প্রকৃত অর্থে কোনো ক্রিকেটপ্রেম বা দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই। এ বিষয়ে কথা বলেছেন আমজনতার দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরিফ বিল্লাহ।  তার ভেতরে ভর করেছে লোভ, লালসা এবং স্বার্থপর দাসত্ব। তিনি ক্রিকেটকে শুধুমাত্র নিজের খ্যাতি, সম্পদ ও প্রভাব বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। জাতীয় দায়িত্ব ও দেশের সম্মান যেখানে বড় হয়ে উঠার কথা, সেখানে তিনি নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। খেলোয়াড় হিসেবে তার মেধা অস্বীকার করা যায় না, কিন্তু চরিত্র ও আদর্শের দিক থেকে তিনি বারবার বিতর্কিত হয়েছেন। দেশের মানুষের ভালোবাসা ও আস্থার প্রতিদান দেওয়ার পরিবর্তে তিনি বারবার দেখিয়েছেন, তার ভেতরে ক্রিকেটপ্রেমের চেয়ে বেশি কাজ করেছে অর্থলিপ্সা, ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ এবং ক্ষমতার দাসত্ব।

সম্প্রতি ভারতে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী শাসক এবং ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের হত্যা মামলায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানো প্রমাণ করে যে, সাকিব আল হাসান দেশপ্রেমিক নয়। বরং এটি ইঙ্গিত দেয় যে তিনি ফ্যাসিস্টমুখী এবং স্বার্থপর রাজনৈতিক অনুগামী। 

কুকুরের লেজ যত বছরই বাঁশের চুঙ্গায় আটকে রাখা হোক না কেন, বের করার পর সেটি আগের মতোই বাঁকানো থাকে। প্রকৃত স্বভাব পরিবর্তন করা যায় না—এটি একটি চিরন্তন সত্য। সেই তুলনায় বলা যায়, সাকিব আল হাসানের চরিত্রও কোনোদিন বদলাবে না। তার ভেতরে যতই দেশপ্রেম খোঁজার চেষ্টা করা হোক না কেন, আসল চিত্র বারবার স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

সাকিব বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং শেখ হাসিনার প্রতি অগাধ ভালোবাসা প্রকাশ করে এসেছেন। এটি যেন তার মজ্জাগত বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে স্বভাব মানুষের ভেতরে গেঁথে যায়, তা সময়, পরিস্থিতি কিংবা বাহ্যিক চাপ দ্বারা পাল্টানো যায় না। সাকিবের ক্ষেত্রেও বিষয়টি তাই—তিনি যেভাবে দলীয় রাজনীতি ও দলনেত্রীর প্রতি নিজের ঝোঁক প্রকাশ করেছেন, সেটি আজীবন বহমান থাকবে।

সমালোচকরা বলেন, একজন জাতীয় খেলোয়াড়ের প্রথম পরিচয় হওয়া উচিত দেশপ্রেমিক হিসেবে। তিনি হবেন দেশের গর্ব, সাধারণ মানুষের অনুপ্রেরণা। কিন্তু সাকিবের কর্মকাণ্ডে সেই দেশপ্রেমের ছাপ দেখা যায় না। বরং রাজনৈতিক পক্ষপাত, ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং ক্ষমতার প্রতি মোহই তার মধ্যে বেশি স্পষ্ট। ফলে দেশ ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার জায়গাটি বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠছে।

অতএব বলা যায়, কুকুরের লেজ যেমন কখনো সোজা হয় না, সাকিব আল হাসানের চরিত্রও কখনো বদলাবে না। তার রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব, বিশেষ দলের প্রতি অন্ধ প্রেম এবং শেখ হাসিনার প্রতি অটল আনুগত্য তাকে আজীবন তাড়িত করবে—কিন্তু দেশপ্রেমের আসল স্ফুরণ তার ভেতরে মিলবে না।

বাংলাদেশের যে সকল বুদ্ধিজীবীরা ব্যক্তি সাকিব আল হাসান ও ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে আলাদা করে দেখতে চান, তাদের উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট। তারা মূলত আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চান। কারণ বর্তমানে সাকিব আল হাসান সরাসরি কিংবা পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে বৈধতা দেওয়ার কাজে জড়িত। একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটার হিসেবে তিনি জনমনে গভীর প্রভাব ফেলতে পারতেন কেবল খেলার মাধ্যমে। কিন্তু যখন একজন খেলোয়াড় রাজনৈতিক দল বা স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীর মুখপাত্রে পরিণত হয়, তখন তার ব্যক্তিগত সুনাম ও অর্জিত সম্মান ক্ষুণ্ন হয়।

জনগণ চায় তাদের প্রিয় খেলোয়াড় খেলার মাঠে সেরা পারফরম্যান্স দিক, দেশের নাম উজ্জ্বল করুক, এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করুক। সাকিব যদি কেবলমাত্র ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দিয়ে জীবন কাটাতেন, তবে তিনি আজীবন জাতির নয়নমণি হয়ে থাকতে পারতেন। তার নাম উচ্চারণ হতো কেবল গৌরবের সঙ্গে। কিন্তু তিনি যখন রাজনৈতিক স্বার্থে জড়িয়ে পড়লেন, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে—তিনি কি সত্যিই দেশ ও ক্রিকেটকে ভালোবাসেন, নাকি নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

আজকের দিনে দেখা যায়, অনেক বুদ্ধিজীবী সচেতনভাবে সাকিবকে সাফাই দিতে চাইছেন। তারা বলেন—"ক্রিকেটার সাকিব আর ব্যক্তি সাকিবকে আলাদা করে দেখা উচিত"। কিন্তু বাস্তবতা হলো, একজন জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের কর্মকাণ্ড আলাদা করে বিচার করা যায় না। কারণ জনজীবনে তার প্রতিটি পদক্ষেপ সমাজকে প্রভাবিত করে। সুতরাং এই যুক্তি আসলে জনগণকে বিভ্রান্ত করার কৌশল।

২০১৯ সালে ভারতীয় এক জুয়াড়ির কাছ থেকে ম্যাচ ফিক্সিং সংক্রান্ত প্রস্তাব পান। আন্তর্জাতিক  ক্রিকেট কাউন্সিল (ICC) এর দুর্নীতি দমন কোড অনুযায়ী, খেলোয়াড়কে এমন প্রস্তাব সঙ্গে সঙ্গে জানাতে হয়। সাকিব সেটি না জানানোয় ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন এবং আরও ১ বছর স্থগিত নিষেধাজ্ঞা পান। এটি তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শাস্তি।

জুয়া খেলার অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে ভারতে ক্যাসিনোতে যাওয়ার ছবি ও খবর প্রকাশিত হয়।

একাধিকবার আম্পায়ারদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার। যেমন ২০১৪ সালে মিরপুরে আম্পায়ারের সঙ্গে খারাপ আচরণে ম্যাচ শাস্তি। একই বছরে মাঠে দর্শকের সঙ্গে খারাপ আচরণের জন্য নিষিদ্ধ হন।

২০১৪ সালে অনুমতি ছাড়া বিদেশি লিগে খেলতে চাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে সাময়িক নিষিদ্ধ করে। বোর্ড কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হয়। 

ক্রিকেটের বাইরে ব্যবসা ও রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় অনেকে মনে করেন তার মনোযোগ খেলায় কমে গেছে। এবং তার লাভের জন্য বারংবার দেশকে মূল্য দিতে হয়েছে। 

বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তার নিরপেক্ষ ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

সাকিব নিঃসন্দেহে একজন বিশ্বমানের ক্রিকেটার, কিন্তু তার ক্যারিয়ার জুড়ে নানা বিতর্ক, নিষেধাজ্ঞা ও সমালোচনা তাকে নিয়ে রয়েছে।

দুর্নীতি ও ফিক্সিং সরাসরি প্রমাণিত না হলেও ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করা তার সবচেয়ে বড় অপরাধ হিসেবে ধরা হয়।

মাঠের ভেতরে ও বাইরে শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা, জুয়া সংক্রান্ত অভিযোগ এবং রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা তার বারংবার সামনে এসেছে।