মোঃ আহসানুজ্জামান : দিনাজপুরের চিকিৎসা কেন্দ্রে রোগীকে নিয়ে ঢোকা মাত্রই মানবসেবার নামে এক নীরব বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। শুরুতে ১০ টাকার টিকেট, কিন্তু ভর্তি হলেই সেই টিকেট হয়ে যায় ২৫ টাকার বিল! এরপর শুরু হয় একটার পর একটা ধাপ,হুইল চেয়ারে ওয়ার্ডে নিতে ১০০-২০০ টাকা, অবস্থা খারাপ হলে ট্রলিতে সরাতে ২০০-৩০০ টাকা বেড পেতে গুনতে হয় আরও ১০০ টাকা, নয়তো ঠাঁই মেলে মাটিতে, আর ২০০ টাকা দিলেই কপালে জোটে তথাকথিত ভিআইপি বেড এই হচ্ছে ভেতরের চিত্র দৈনন্দিন,এমন অনেক বিরম্বনার ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ...
এরপর ডাক্তার এলেই শুরু হয় , প্রয়োজনের থেকে বেশী অপ্রয়োজনীয় চার-পাঁচটি পরীক্ষার নির্দেশ, সাথে স্যালাইন ও বিভিন্ন ওষুধের লম্বা তালিকা। রিপোর্ট নিয়ে নতুন ডাক্তারের কাছে গেলে খরচ হয় আরও বাড়ে নতুন পরীক্ষা, নতুন পরামর্শ, নতুন বিল। মজার বিষয় হলো, পরীক্ষার জন্যেও আবার আলাদা করে হুইলচেয়ারে ১০০ এবং ট্রলিতে ২০০ টাকা দিতে হয় এভাবে প্রতিদিন রোগীর পরিবারকে নতুন নতুন খরচের মুখে পড়তে হয়।
সব পরীক্ষার শেষে যদি অপারেশন লাগে, তবে রোগীর পরিবারকে হাজার কয়েক টাকার ওষুধ নিজ খরচে কিনে ডাক্তারের হাতে দিতে হয়, এরপরের পরিণতি আরও নির্মম: অপারেশন ব্যর্থ হলে রোগী মা*রা গেলে পকেট শূন্য করে শুনতে হয় টাকাও শেষ, মানুষও শেষ আর যদি কোনোভাবে অপারেশন সফল হয়, তবে শুরু হয় আরও এক পর্বের অর্থদান ওটি বয় ,দারোয়ান পর্যন্ত খুশি করতে হয় বকশিশ দিয়ে। প্রতিদিনের ড্রেসিং আর ওষুধের খরচ তো আছেই।
শেষপর্যন্ত যখন রিলিজ বা ছাড়পত্র পাওয়ার পালা আসে, আবারো দারোয়ান, ওয়ার্ড বয়দের মুখে হাসি ফোটাতে অর্থদান সবাইকে টাকা দিয়ে পকেট শূন্য করে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখা যায় বিশাল ব্যানারে লেখা আমরা সাধু আমরা জনগণের সেবক!
প্রশ্ন একটাই যেখানে মানুষের জীবন নিয়ে এমন জঘন্য অবিচার চলছে, টাকা ছাড়া এক পা-ও চলা যায় না, এটা কি তাহলে সেবা? এমন নিয়মের বিরুদ্ধে কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না? স্বাস্থ্যসেবা হোক মানবিক অধিকার, ব্যবসা নয়! এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের সবারই প্রখর আওয়াজ তোলা দরকার .
এই অনিয়ম দুর্নীতি তো চলছে বহু বছর ধরেই, সাধারণ মানুষদের জিম্মি হয়রানি করে দিব্বি চলমান চিকিৎসা সেবা নামের এই নোংরা কার্যক্রম..
সেবার নামে এই নিষ্ঠুর শোষণ দিনাজপুরবাসী আর কতকাল এই অমানবিক নির্যাতন সহ্য করবে....