আলী আহসান রবি : ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও ডিজিটাল মিডিয়ার প্রিয় সাংবাদিক বৃন্দ, নবগঠিত সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এসএবিসিসিআই এর পক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য শুরুতেই আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত।
ব্যবসায়ী মহল অনেক আগেই সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবার আমরা সেই মাইলফলক অর্জন করতে যাচ্ছি।
আমরা ব্যবসায়ী মহল উপলব্ধি করি যে, বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সম্পর্ক বিনির্মাণে এই যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় বিকল্প বাজার হয়ে উঠবে। বিশেষত টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক (আরএমজি), জনশক্তি রপ্তানি, তথ্যপ্রযুক্তি, ডিজিটাল ফাইন্যান্স, কৃষিপণ্য ও পরিবেশবান্ধব পাটজাত পণ্যের বিশাল সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সক্রিয়ভাবে সৌদি বাজারে উপস্থিতি বাড়াতে কাজ করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মতো প্রচলিত বাজারের ওপর নির্ভরতা কমানো যায়। অনেক সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক প্রবৃদ্ধি কমে
যায়।
আপনারা জানেন, বিদায়ী অর্থবছরে সৌদিতে আমাদের রপ্তানি ছিল ২৯ কোটি ডলার। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যা ছিল ৩১ কোটি ডলার। তৈরি পোশাক, টুপি, কৃষিপণ্যসহ নানা ধরনের পণ্য আমরা রপ্তানি করি। উল্লেখ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, আমাদের দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ দুই বিলিয়ন
ডলার প্রায়। সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ সার, প্লাস্টিকের কাঁচামালা, স্বর্ণ, খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করে।
বাংলাদেশের দক্ষ-অদক্ষ জনশক্তির সবচেয়ে বড় বাজার সৌদি আরব। বর্তমানে ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশি সৌদি আরবে বিভিন্ন কর্মে নিযুক্ত। দেশটিতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর সংখ্যাও বাড়ছে। বর্তমানে বাংলাদেশ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তি সরবরাহে প্রস্তুত-যেমন নার্স, প্যারামেডিক, ল্যাব টেকনিশিয়ান, ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইটি বিশেষজ্ঞ, খাদ্য প্রযুক্তিবিদ, হসপিটালিটি সেক্টরের পেশাজীবী, নির্মাণ ও রিয়েল এস্টেট, অর্থ ও ব্যাংকিং খাতের বিশেষজ্ঞ প্রভৃতি সম্ভাব্য সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ও সৌদি আরব-উভয় দেশেই সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) অথবা যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে পেট্রোকেমিক্যাল, ক্রুড অয়েল রিফাইনারি, ইস্পাত, খাদ্যশিল্প, কৃষি রাসায়নিক, সার, টেক্সটাইল, বন্দর ব্যবস্থাপনা, গ্রিন টেকনোলজি, সাইবার সিকিউরিটি, আইটি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-ভিত্তিক প্রযুক্তি, সেমিকন্ডাক্টরসহ নানা খাতে বিনিয়োগ হতে পারে। বিশেষত চট্টগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্দকৃত শিল্পভূমি তাদের জন্য সুবর্ণ সুযোগ হয়ে উঠবে। সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়নেও বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হওয়ার সুযোগ উন্মোচিত হয়েছে।
এবার আমি সৌদি-বাংলাদেশ চেম্বারের গ্র্যান্ড উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তুলে ধরছি। সৌদি-বাংলাদেশ চেম্বারে গ্ল্যান্ড লঙ্কিং উপলক্ষে ৬-৮ অক্টোবর তিন দিনের বিশেষ আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসছেন সৌদি আরবের ব্যবসায়ী ও নীতিনির্ধারণী মহলের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে থাকছেন শেখ ওমর আব্দুলহাফিজ আমিরবকশ। যিনি মাজদ আল উমরান গ্রুপের মালিক। হসপিটালিটি, আবাসনসহ বেশ কিছু খাতে ব্যবসা আছে এ গ্রুপের। প্রতিনিধি দলে থাকবেন আল ইসায়ি গ্রুপের পরিচালক নাজি আব্দুল্লাহ। সেবা, উৎপাদলসহ নানা খাতে বিনিয়োগ আছে এ কোম্পানির। প্রতিনিধি দলে থাকবেন বাদশাহ আব্দুল আজীজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ আসিফ সালাম। যিনি একটি আইটি কোম্পানিরও কর্ণধার। এছাড়া প্রতিনিধি দলে আছেন অধ্যাপক ডক্টর খালিদ আল হারবি, যিনি আল তৈয়বা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অধ্যাপক এবং ৩০ বছর ধরে স্বাস্থ্যখাতের বিশেষজ্ঞ।
৬ অক্টোবর বিকেলে সৌদি প্রতিনিধি দল ঢাকায় অবতরণ করবেন। রাতে তাদের সৌজন্যে ডিনার আযোজন করেছে এসএবিসিসিআই। এই রিসিপশন ডিনারে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও এসএবিসিসিআই সদস্যরা।
৭ অক্টোবর আমাদের মূল আয়োজন। ঢাকার বনানীর হোটেল শেরাটনে সকাল ১০টায় শুরু হবে বিজনেস সামিট। আমরা আশা করছি, এতে প্রধান অতিথি থাকবেন মাননীয় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্নর ডক্টর আহসান এইচ মনসুর। এতে একাধিক আলোচনা সেশন অনুষ্ঠিত হবে। দুদেশের ব্যবসায়ী প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞগণ পেপার প্রেজেন্ট ও আলোচনা করবেন। এ বিজনেস সেশনে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। দুপুর দেড়টা পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। এরপর সন্ধ্যা পর্যন্ত চলবে প্রোডাক্ট শোকেসিং ও বিটুবি মিটিং।
৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭টায় সৌদি আরব-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি - এসএবিসিসিআই এর শুভ উদ্বোধন। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মাননীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধান অতিথি থাকবেন মাননীয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, ব্যাংকার, ব্যবসায়ী, চেম্বার নেতা ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতগণ উপস্থিত থাকবেন।
৮ অক্টোবর আমাদের সামিটের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিন। দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় সম্মানিত অতিথিদের সৌজন্যে লাঞ্চ আয়োজন করবেন মাননীয় পররাষ্ট্র সচিব। এরপর হোটেল সোনারগাঁওয়ে এই তিন দিনের সম্ভাবনা ও প্রাপ্তি নিয়ে সমাপনী সংবাদ সম্মেলন করা হবে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ
দেশ ও জাতির কল্যাণে আমরা এ