আলী আহসান রবি : কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কোন অবস্থাতেই ফসলি জমি নষ্ট করা যাবে না। দুই ফসলী ও তিন ফসলী জমিতে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কৃষি জমি সংরক্ষণে কঠোর বিধান রেখে ভূমি ব্যবহারও কৃষি ভূমি সুরক্ষা অধ্যাদেশ প্রণয়ণের কাজ চলছে।
উপদেষ্টা আজ কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বিগত এক (০১) বছরে মন্ত্রণালয়ের সাফল্য, অর্জন ও সার্বিক অগ্রগতি সম্পর্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন।
এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ানসহ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা জুলাই অভ্যুথ্থান পরবর্তী সময়ে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ০১ বছরে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অগ্রগিত সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে ৮৮ লক্ষ ৫৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সার, বীজ ও চারা এবং অন্যান্য সহায়তা বাবদ ৮৯৩ কোটি ২০ লক্ষ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হয়েছে।
উপদেষ্টা মন্ত্রণালয়ের সাফল্য ও অর্জন সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করতে গিয়ে বলেন, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে দেশে আমন- ১৬৫.১৪৫ লক্ষ মে. টন (চালে), আউশ- ২৭.৯৩৪ লক্ষ মে. টন (চালে), বোরো- ২২৬.০৮২ লক্ষ মে. টন (চালে), মোট ধান (চালে)- ৪১৯.১৬১ মে.টন, আলু- ১১৫.৭৩৬ মে.টন, গম- ১০.৪১১ মে.টন, ভূট্টা- ৭৩.৯৯৪ মে.টন, পেঁয়াজ- ৪৪.৪৮৭ মে. টন, রসুন- ৭.৮৮৭ মে. টন, আদা- ২.৫১৪ মে.টন, কাঁচা মরিচ- ১৬.৪২৮ লক্ষ মে. টন উৎপাদিত হয়েছে।
সারের বকেয়া ২০,৬৯১ (বিশ হাজার ছয়শত একানব্বই) কোটি টাকাসহ মোট ২৭,৬৮৪.৯৭ (সাতাশ হাজার ছয়শত চুরাশি দশমিক সাতানব্বই) কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। রাশিয়া থেকে বিনামূল্যে ৩০,০০০ মে.টন সার প্রাপ্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। সার আমদানীর সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ায় সরকারের ২৩৩.৬১ (দুইশত তেত্রিশ দশমিক একষট্টি) কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সার ডিলার নিয়োগ ও সার বিতরণ সংক্রান্ত সমন্বিত নীতিমালা-২০০৯ হালনাগাদ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। পাটকলের অব্যবহৃত গুদামকে সার মজুতের জন্য ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে উপদেষ্টা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘International Islamic Trade Finance Corporation বিএডিসিকে সার ক্রয়ে ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার ঋণ প্রদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে ১০০ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে । জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বালাইনাশক বিধিমালা সংশোধন করা হচ্ছে। গত এক বছরে ২,৬৪৬.১১ (দুই হাজার ছয়শত ছেচল্লিশ এগার কোটি) টাকা ব্যয়ে ০৯টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং ০৩ টি পরিমার্জন ও ০২ টি প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে ।’
শাক-সবজি সংরক্ষণে ১০০ মিনি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করা হচ্ছে। পেঁয়াজ ও আলু সংরক্ষণের জন্য এয়ারফ্লো মেশিন ও বিশেষ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে। আলুর দাম হিমাগার গেইটে সর্বনিম্ন ২২ টাকা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কৃষকের কাছ থেকে ৫০,০০০ মে.টন আলু ক্রয় করা হবে বলে উপদেষ্টা জানান।
উপদেষ্টা তার দায়িত্বকালীন সময়ে কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় ১০% বৃদ্ধি, চীনে প্রথমবারের মত আম রপ্তানি , চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার ৫১ টন আলু রপ্তানি হয় এবং গাবতলীতে রপ্তানীর জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ হচ্ছে বলে জানান।
উপদেষ্টা বলেন, ‘ফল ও সবজি চাষে উন্নত কৃষি চর্চার (GAP) অনুসরণ করা হচ্ছে। ১৫ টি ফসল [যথা আম, কাঁঠাল, পেয়ারা, বেগুন, বরবটি, লাউ, পটল, কাঁচা পেঁপে, আলু, বাঁধাকপি, চিচিঙ্গা, করলা, কচুর লতি, আনারস ও জারা লেবু]-এর GAP প্রোটোকল চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
দেশে উৎপাদিত আঁশ তুলা (Raw Cotton)-কে কৃষিপণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা ০৫ জুন ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে।
পরিবেশ রক্ষায় আকাশমণি ও ইউক্যালিপটাসের চারা ধ্বংস করা হয়েছে, বিপরীতে প্রতি চারায় ৪ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ৩৩ লাখ দেশীয় জাতের ফলজ ও বনজ গাছ বিনামূল্য বিতরণ করা হয়েছে।
টেকসই, আধুনিক কৃষি ও সবার জন্য পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিতে কৃষি উন্নয়ন রূপরেখা পরিকল্পনা ২০২৫-২০৫০ তৈরি করা হচ্ছে।
বিনা, ব্রি, বারি ও বিএআরসি উদ্ভাবিত বিভিন্ন ফসলের জাত কৃষকের হাতে সময় মতো পৌঁছানো হয়েছে। নতুন বীজ উদ্ভাবন দ্রুত মাঠে পৌঁছাতে সমন্বিত বীজ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
দেশের প্রতিটি ভূমি মৌজাকে ডাটাবেইজের আওতায় এনে সার, বীজ, বালাইনাশক, সেচ, ফসল বৈচিত্র্য, আবহাওয়া ও রোগ-বালাইসহ কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য সন্নিবেশিত করে একটি মোবাইল অ্যাপস ‘খামারি’ চালু করা হয়েছে। কর্মকর্তাদের জন্য ‘খামারি অ্যাপস’ ও ‘ক্রপ জোনিং সিস্টেম’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।
কৃষকের পণ্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণে প্রণোদনা হিসেবে কৃষি বিভাগের ট্রাক ও ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহারের , কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে আধুনিকীকরণ এবং আন্তর্জাতিক বাজার গবেষণায় সম্পৃক্তকরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
বীজ ব্যবস্থাপনা অনলাইনভিত্তিক করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থার ১০৯ জন বঞ্চিত কর্মকর্তাকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়েছে; ১৯ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা; ৬৪৫ জন কর্মকর্তাকে বদলি ও শতাধিক কর্মকর্তার দুর্নীতির তদন্ত করার জন্য দুদুকে প্রেরণ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অর্থে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্থাপনার নামকরণের ক্ষেত্রে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।’