সাহিত্য ও সংস্কৃতি

বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানপর্বের বুদ্ধিজীবী, বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী

বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থানপর্বের বুদ্ধিজীবী, বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী

আলী আহসান রবি : আগামী ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রেরণাদাতা, বাঙালি
জাতীয়তাবাদের উত্থানপর্বের বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদের ১৩ তম মৃত্যুবার্ষিকী। অধ্যাপক মুরশিদ ছিলেন বাংলাদেশ সৃষ্টির আগে ও পরে জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নির্মাণের সাথে সম্পৃক্ত এক অনন্য প্রতিভা। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা ও মুক্তিযুদ্ধসহ বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক আন্দোলনে প্রথম সারিতে থেকে প্রেরণা যুগিয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ। তিনি ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক জান্তার প্রধান ফিল্ডমার্শাল আইয়ুব খানের রক্তচক্ষুর বিরুদ্ধে সাহসীকতার সাথে রবীন্দ্রনাথের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করে এ-দেশে রবীন্দ্রচর্চার দ্বার উম্মোচন করেছিলেন। তিনি ঐতিহাসিক ছয় দফার নীতি নির্ধারণে এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বাধিকার আন্দোলনে সহযোগী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যোগ দিয়ে তিনি দীর্ঘ সময় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সময়ে তিনি বাঙালির রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে ও সাংস্কৃতিক পরিচয় গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দু'বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ের মধ্যেই তিনি তাঁর শিক্ষা ও সংস্কৃতিভাবনার স্থায়ী ছাপ রেখে গেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বাংলাদেশ ষ্টাডিজ' নামে একটি ঐতিহাসিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও নাগরিক উদ্যোগ-এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন ছিলেন।

খান সারওয়ার মুরশিদ পঞ্চাশের দশকে ইংরেজী পত্রিকা 'নিউ ভ্যালুজ' সম্পাদনা করার মধ্যে দিয়ে সাহিত্য, শিল্প ও সমাজকেদ্রিক নতুন ও সমালোচনামূলক চিন্তা বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। তিনি এক টানা সতের বছর এই সাময়িকী সম্পাদনা করে সামরিক সরকারসহ সাংস্কৃতিক মহলে ও শিক্ষিত সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯৬২ সালে শরীফ কমিশনের নেতৃত্বে শিক্ষানীতি প্রণয়নের পর তা প্রতিহত করতে যে শিক্ষা আন্দোলন সূচিত হয় তাতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন অধ্যাপক মুরশিদ। খান সারওয়ার মুরশিদ মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের উপদেষ্টা, মুক্তিযুদ্ধকালীন ও পরবর্তী সময়ে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এছাড়াও তিনি পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতসহ নানান গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। গুনী এই মানুষটি ২০১২ সালের ৮ই ডিসেম্বর দেহত্যাগ করেন। সতত স্মরণীয় এই ব্যক্তিত্ব থাকবেন আমাদের বোধে, চেতনায়, মননশীলতায়। তিনি থাকবেন শিক্ষার ধ্রুপদী আলোয়, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলের প্রতিরোধের আয়োজনে, জ্ঞানের গভীরতায়।

দ্বাদশতম মৃত্যুবার্ষিকীর দিন ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সোমবার সকাল ১০.৩০ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দো'আর আয়োজনের পাশাপাশি দুস্থ শিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে।

মরহুমের পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে সকলকে এ কর্মসূচীগুলোতে অংশগ্রহণ করতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।