আলী আহসান রবি : সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ
আজকের এই জাতীয় পরামর্শ কর্মশালায় উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত বোধ করছি জানিয়ে বলেছেন, শিশুদের সুরক্ষার জন্য শিশু আইন ২০১৩ সংশোধন করা উচিত। এই আইনের মূল লক্ষ্য হলো—শিশুদের সুরক্ষা, ন্যায়বিচার, পুনর্বাসন এবং তাদের সার্বিক বিকাশ নিশ্চিত করা। কিন্তু একই মামলায় শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি জড়িত থাকলে ভিন্ন ভিন্ন আদালতে বিচারকার্য অনুষ্ঠানে জটিলতাসহ আইনটির বিধিমালা প্রস্তুত না হওয়ায় এই আইনের ৫ ধারায় বর্ণিত প্রবেশন কর্মকর্তা ও ১৪ ধারায় বর্ণিত শিশু বিষয়ক পুলিশ কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালনে দৈনন্দিন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে, ফলে প্রতিনিয়ত জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আজ ঢাকায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁয়ে আইন কমিশন ও ইউনিসেফ বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত শিশু আইন ২০১৩ : সংশয়, বিভ্রান্তি ও অসংগতি শীর্ষক জাতীয় মতবিনিময় ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। শিশু আইন ২০১৩ সম্পর্কিত সংশয়, বিভ্রান্তি ও অসংগতি সমূহ চিহ্নিত পূর্বক তৎসম্পর্কে সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে ওয়ার্কশপে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি জিনাত আরা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের কান্ট্রি প্রেজেন্টেটিভ রানা ফ্লাওয়ারস বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতিসংঘের সংস্থা ইউনিসেফ, ইউএনডিপি, ইউএনওডিসি, আইএলও, আইওএম, নাগরিক সমাজের সেভ দ্য চিলড্রেন ইন্টারন্যাশনাল এবং ব্লাস্ট, শিশু অধিকার বিশেষজ্ঞ, বিচার বিভাগের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, প্রবেশন অফিসার এবং নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলির প্রতিনিধি সহ গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারদের অংশগ্রহণে আইনের মধ্যে থাকা সংশয়, বিভ্রান্তি ও অসংগতি সমূহ সম্পর্কে আলোচনা হয় এবং শিশু সুরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার এবং বিদ্যমান পদ্ধতিগুলিকে সহজ করার জন্য সুপারিশ গুলির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, নোয়াখালী ,খুলনা, নওগাঁ জেলা ও দারাজজবৃন্দ, চট্টগ্রাম, ফেনী, সিলেট, ঠাকুরগাঁও , কুমিল্লা, নড়াইল জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল ও শিশু আদালতে কর্মকর্ত জেলা ও দায়রা জজ বিচারকবৃন্দ, চট্টগ্রাম ,মুন্সিগঞ্জ ,পটুয়াখালী, শেরপুর, দিনাজপুর, কুমিল্লা ও বগুড়া জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবীবৃন্দ, বাংলাদেশ অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধিবৃন্দ, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ , জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বর্ডার গার্ড অফ বাংলাদেশের প্রতিনিধিবৃন্দ, টাঙ্গাইল, চাঁদপুর, বরিশাল, রংপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউরবৃন্দ, তত্ত্বাবধায়ক শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র টঙ্গী, কোনাবাড়ি, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া , হবিগঞ্জ, ভোলা, নীলফামারী, সাতক্ষীরা জেলায় কর্মরত প্রবেশন কর্মকর্তাবৃন্দ ও আইন কমিশনের সহকর্মী কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, শিশু আইন ২০১৩ শিশুদের সুরক্ষার জায়গায় আমাদের অনেক চাওয়া পাওয়া ছিল এবং আছে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আইনের ঘাটতি আছে এবং কোথায় আমাদের সংকটগুলো যারা আমরা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি, আইনের শাসন নিয়ে কাজ করি সকলের উচিত এই শিশু সুরক্ষার আইনের যে ঘাটতি রয়েছে সেটি পূর্ণতার জায়গায় নিয়ে আসা।
তিনি আরো বলেন, শিশুদের সুরক্ষার জন্য আজকের এই আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের শিশুরা আগামী দিনের দেশের ভবিষ্যৎ । এ দেশটা যদি আমরা শিশুদের জন্য চিন্তা করি তাহলে তাদের সুরক্ষার জন্য সযত্নে গড়ে তুলতে হবে । শিশুদের মানবসম্পদে পরিণত করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশের সব রাজনীতি, রেওয়াজ ,কালচার, আইন সবটুকুই শিশুদের জন্য ফোকাস করা উচিত। শিশুকে সুরক্ষা করে বেড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হলে শিশুরা সুনাগরিক হয়ে বেড়ে উঠবে । উপদেষ্টা বলেন,
শিশুদের সুরক্ষা ও বিকাশ শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। কর্মশালায় শিশু সুরক্ষা এবং ন্যায় বিচারের আইনি কাঠামো শক্তিশালী করার জন্য বিচারবিভাগের প্রতিনিধিদের কাছে থেকে সেরা অনুশীলন এবং শিক্ষাগুলি সনাক্ত করে আমরা যদি আজকের শিশুকে নিরাপদ, শিক্ষিত ও আত্মনির্ভর ও সুনাগরিক করে গড়ে তুলতে পারি, তবে আগামীর বাংলাদেশও সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।