শফিকুল ইসলাম শফিক : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার হলহলিয়া গ্রামে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের জেরে প্রতিপক্ষের ১৯টি বাড়িঘর ভাংচুর ও লুটতরাজের ঘটনায় নতুন তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় গত ২৬ অক্টোবর (রবিবার) দুপুরে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আদালত, সুনামগঞ্জে ১৪ নম্বর মামলাটি দায়ের করেন হলহলিয়া গ্রামের আমির আলীর পুত্র সুলতান মিয়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি সোনা মিয়া হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিল। হত্যাকাণ্ডের পরদিনই আমির আলীর গোত্রভুক্ত ১৯টি বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটতরাজ চালানো হয়। প্রতিপক্ষ সাদেক আলীর গোত্রভুক্ত লোকজন এই হামলার নেতৃত্ব দেয় বলে জানা গেছে।
গত ৬, ৭ ও ৮ নভেম্বর মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা যায়, নুর ইসলাম নামের এক ব্যক্তি লুটপাটের নেতৃত্ব দেন। তার নেতৃত্বে একদল লোক আমির আলীর পরিবারের বাড়িঘর ভেঙে মালামাল লুট করে নিয়ে যায়।
অনুসন্ধানকালে শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের বড়ছড়া বালুরচর গ্রামের আলমগীরের স্ত্রী শেফালি বেগম, বড়ছড়া গ্রামের সেলিম মিয়া, ফুটিয়া গ্রামের ফজলুল হক, এবং হলহলিয়া গ্রামের আব্দুল খালেক, যমুনা বেগম, খালেক মিয়া, এমদাদুল হক ও আমির আলীসহ একাধিক লুটপাট ক্রয়ের ব্যক্তিরা জানান, নুর ইসলাম ও তার সহযোগীরা লুট করা মালামাল পরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও পরিবারের কাছে বিক্রি করেছে। আমরা নিজেরাই নুর ইসলামের কাছ থেকে টাকা দিয়ে এসব মালামাল কিনেছি।
ভুক্তভোগীদের দাবি, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অনেকে প্রভাব খাটিয়ে লুটের অর্থ ভাগাভাগি করেছে। তারা দ্রুত বিচার আদালতের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানান।
স্থানীয়রা জানান, হলহলিয়া গ্রামের এই সংঘাত শুধুমাত্র একটি হত্যাকাণ্ড নয় এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পারিবারিক বিরোধ ও গোত্রভিত্তিক ক্ষমতার দ্বন্দ্ব। হত্যার পর প্রতিশোধপরায়ণ একদল লোক পরিস্থিতিকে ঘৃণ্য লুটতরাজে রূপ দিয়েছে, যা গ্রামীণ সহিংসতার এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে।
আরো জানান,১৯ টি ঘরের ভিটায় হালচাষ করে মুলা ডেঙ্গা এসব ধরনের সবজি চাষ করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নিরপরাধ অনেকেও মামলার আসামি হয়েছেন। হলহলিয়া গ্রামের কাঠমিস্ত্রি উসমান গনি জানান, ঘটনার দিন তিনি পাশের এলাকায় লেদার বন্দ কাজে ছিলেন, কিন্তু হত্যাকাণ্ড মামলার ১৩নং আসামি হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এছাড়াও হত্যা মামলার আরেক আসামি দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা অবস্থান করলেও তাকে দেওয়া হয়েছে হত্যা মামলার আসামি।
অন্যদিকে, সৌদি আরব প্রবাসে থেকেও রক্ষা পাননি প্রবাসী মনোয়ারা বেগম। তার দুটি ঘর ও আসবাবপত্রসহ সবকিছু লুট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার প্রবাস জীবনের আট বছরের পরিশ্রমে যা কিছু অর্জন করেছিলাম, সবকিছুই নুর ইসলামের নেতৃত্বে একদল লোক লুট করে নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে লুটপাটে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসন ও নিরপরাধদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য।
তাহিরপুর থানা এস আই পঙ্কজ জানিয়েছেন, দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে লুটপাটে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে এবং এখন পর্যন্ত তদন্ত চলমান রয়েছে।