আইন ও বিচার

ঢাকায় অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্ত: ১৫ দিনের মধ্যে হত্যা রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২

ঢাকায় অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্ত: ১৫ দিনের মধ্যে হত্যা রহস্য উদঘাটন, গ্রেফতার ২

আলী আহসান রবি : সহযোগী কর্তৃক অটোরিক্সা ছিনতাই ও আত্মসাৎ পূর্বক শ্বাসরোধ করে হত্যা,
লাশের পরিচয় সনাক্তসহ ১৫ দিনের মধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে পিবিআই, ঢাকা জেলা।

পিবিআই ঢাকা জেলা কর্তৃক অজ্ঞাতনামা লাশের পরিচয় সনাক্তসহ ১৫ দিনের মধ্যে হত্যা কান্ডের রহস্য উদঘাটন এবং ঘটনার সাথে জড়িত ০২ জন আসামীদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা। নিহত ব্যক্তির নাম জালাল শিকদার (৪৬), পিতা-নয়া মিয়া শিকদার, মাতা-ফাতেমা বেগম, গ্রাম-পশ্চিমনেতা, ডাকঘর- রাংগাবালী, থানা-গলাচিপা, জেলা-পটুয়াখালী, বরিশাল, বর্তমান ঠিকানা-চড়াইল (মসজিদ গলী রমজানের বাড়ীর ভাড়াটিয়া), ইউনিয়ন-কালিন্দী, থানা-কেরাণীগঞ্জ মডেল। গ্রেফতরকৃত আসামী ১) মোঃ শেখ নুরু (৫০), ২) মোঃ মোজাম্মেল ম্যোল্লা (৪৩)। আসামি মোঃ মোজাম্মেল ম্যোল্লা (৪৩) এর হেফাজত থেকে ভিকটিমের চালিত মিশুক অটোরিক্সাটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়েছে। আসামীদ্বয় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

গত ইং ২৬/০৯/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.৩০ ঘটিকার সময় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা পূর্ব পাড়া কামারপাড়া সাকিনস্থ জনৈক খোকন মিয়ার ৪ তলা ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে পরিত্যাক্ত ডোবায় পানির মধ্যে অজ্ঞাতনামা পুরুষের লাশ পাওয়া যায়। পিবিআই ঢাকা জেলার ক্রাইমসিন টিম লাশের পরিচয় সনাক্ত করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের স্ত্রী মোছাঃ হনুফা বেগম (৪২) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন, (মামলা নং- ৬৫, তারিখঃ ২৭/০৯/২০২৫, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড)। থানা পুলিশ ০৩ দিন মামলাটি তদন্ত করে। পিবিআই এর সিডিউলভুক্ত মামলা হওয়ায় গত ২৮/০৯/২০২৫ তারিখে পিবিআই ঢাকা জেলা মামলাটি স্ব-উদ্দ্যোগে গ্রহণ করে এবং উপ পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মানিক চন্দ্র সাহা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে পিবিআই ঢাকা জেলা টিম প্রথম থেকেই ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

পিবিআই প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি জনাব মোঃ মোস্তফা কামাল মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় এবং পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার জনাব মোঃ কুদরত-ই-খুদা পিপিএম-সেবা এর তত্ত্বাবধানে পিবিআই এর চৌকস টিম গত ১১ অক্টোবর ২০২৫ শাহ আলী খানার গুদারা ঘাট নামক এলাকা থেকে ভিকটিম জালাল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সন্দিগ্ধ আসামি ১। মোঃ শেখ নুরু (৫০), পিতা- মৃত শেখ ত্রুটি মিয়া, মাতা-নূরজাহান বেগম, সাং-ওসমান মোল্ল্যার ডাঙ্গী, পোঃ- চর চাঁদপুর, থানা-সদরপুর, জেলা-ফরিদপুর, বর্তমান সাং-সাবান ফ্যাক্টরী, জেনারেটরের গলি, এলাহী মসজিদ সংলগ্ন রমজানের বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা- দক্ষিন কেরানীগঞ্জ, জেলা-ঢাকা'কে এবং ১নং আসামী কর্তৃক চুরি ও ছিনতাইকৃত রিক্সা, অটোরিক্সা ইত্যাদি ক্রয় বিক্রয় ও সহযোগীতার অপরাধে সন্দিগ্ধ অপর আসামী ২। মোঃ মোজাম্মেল মোল্লা (৪৩), পিতা-কালু মোল্ল্যা, মাতা-মোসাঃ রোকেয়া বেগম, সাং-চিংগুরিয়া, ডাকঘর-আমখোলা, থানা-গলাচিপা, জেলা-পটুয়াখালী, বর্তমান সাং-মুজাহিদনগর, নিউ ভিশন স্কুল, মোজাম্মেলের টিনশেড বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা-কদমতলী, ডিএমপি'কে কদমতলী থানাধীন রায়েরবাগ বাসষ্ট্যান্ড এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। আসামি মোঃ মোজাম্মেল মোল্লা (৪৩) এর হেফাজত হতে কদমতলী থানাধীন হাবিবনগর খানকা শরীফ নামক এলাকার সোহেল মিয়ার গ্যারেজ হতে ব্যাটারী চালিত মিশুক অটোরিক্সাটি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়েছে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ, এজাহার, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে জানা যায় যে, ভিকটিম জালাল একজন অটোরিক্সা চালক ও পেশাদার ছিনতাইকারী। সে ঢাকা জেলা ও ডিএমপির বিভিন্ন এলাকায় রাতের বেলায় অটোরিক্সা চালানোর পাশাপাশি তার দলসহ ছিনতাই কার্যক্রম চালাতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৬/০৯/২০২৫ ইং তারিখ রাত আনুমান ০২.৩০ ঘটিকার সময় ভিকটিম জালাল তার ভাড়া বাসা থেকে অটোরিক্সা চালানো পাশাপাশি ছিনতাই এর উদ্দেশ্যে বের হন। ভোরে তার স্ত্রী তাকে ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ইং ২৭/০৯/২০২৫ তারিখ সন্ধ্যা অনুমান ০৬.৩০ ঘটিকার সময় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে জালালের মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারেন এবং পরে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা রুজু করেন। দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানা অত্র মামলাটি ০৩ দিন তদন্ত করেন।

পিবিআই ঢাকা জেলা ছায়া তদন্ত অব্যহত রাখেন এবং রহস্য উদঘাটনে কিছু অগ্রগতি হওয়াতে স্ব-উদ্যোগে মামলাটি গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় পিবিআই ঢাকা জেলার একটি চৌকস টিম অভিযান পরিচালনা করে ১নং আসামী মোঃ শেখ নুরু (৫০) 'কে গ্রেফতার করে। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মুরু শেখ জানায়, সে একাই এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। ১নং আসামী মোঃ শেখ নুরু (৫০), গত ২৬/০৯/২০২৫ ইং তারিখ রাতের বেলা ভিকটিম জালালকে ফোন দিয়ে কদমতলী এলাকায় মিলিত হয়ে অটোরিক্সা নিয়ে চুরি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বের হন। কোন রিক্সা ও ভ্যান চুরি বা ছিনতাই করতে না পেরে আসামী মোঃ শেখ নুরু (৫০), ভিকটিম জালাল এর অটোরিক্সাটি চুরির টার্গেট করেন। চুনকুটিয়ার একটি দোকানে এসে ভিকটিম জালাল কে জুসের মাধ্যমে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে খাওয়ালে জালাল আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লে আসামী নূরু শেখ তাকে ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা পূর্ব কামারপাড়া সাকিনস্থ জনৈক খোকন মিয়ার ৪ তলা ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে নিয়ে যায় এবং আসামী নূরুর সাথে থাকা গামছা গলায় পেচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে পরিত্যক্ত ডোবায় পানির মধ্যে ফেলে দেয়। আসামী মোঃ শেখ নুরু ভিকটিম জালাল এর চালিত অটোরিক্সাটি চালিয়ে অনুমান ভোর ০৫.৩০ দিকে রায়েরবাগ এলাকায় ২নং আসামী মোঃ মোজাম্মেল মোল্লা (৪৩) এর নিকট ৩০,০০০/-(ত্রিশ হাজার) টাকায় বিক্রি করে পালিয়ে যায়।

গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে তারা ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

০১। তদারককারী কর্মকর্তা: জনাব মোঃ কুদরত-ই-খুদা, পিপিএম-সেবা, পুলিশ সুপার, পিবিআই ঢাকা জেলা, মোবাইলঃ ০১৩২০-০২৮০৩৫।

০২। তদন্তকারী কর্মকর্তা: জনাব মানিক চন্দ্র সাহা, এসআই (নিঃ), পিবিআই ঢাকা জেলা, মোবাইলঃ ০১৭২৫-১৩১৫২১।