সম্পাদকীয়

গোলাম মাওলা রনি আটক হন আমার রুম থেকে

গোলাম মাওলা রনি আটক হন আমার রুম থেকে

সময়টা ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই। অফিসে বসে আছি। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস‍্য গোলাম মাওলা রনি আসলেন । তিনি আমার রুমে বসলেন। বললেন এই সপ্তাহের লেখাটি এখানে বসে লিখব। বাসা, অফিস কোথায়ও বসতে পারি না। সালমান রহমানের মালিকানাধীন ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের দুই জন সাংবাদিক ও ক‍্যামরাম‍্যান বসে থাকে। আমাকে দেখলে টিভি ক‍্যামরা অন করে। 
বুঝলাম আমাদের কাগজে প্রকাশিত লেখার কারণে তিনি বিব্রতকর অবস্থায় আছেন। বললাম , পাশের রুমে বসে লিখুন। খাবার আনাচ্ছি । এক সঙ্গে খাব। 

আইন নিয়ে পড়াশোনা করলেও গোলাম মাওলা রনি জীবন শুরু করেছিলেন আমাদের সঙ্গে ৯১ সালের শুরুতে দৈনিক আজকের কাগজে। পরে ভোরের কাগজে না গিয়ে তিনি ব‍্যবসা করেন। একজন সফল ব‍্যবসায়ী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হন । স্পষ্টবাদী সাহসী মানুষ । হাসি মুখে কঠিন কথা বলেন এবং লেখেন।  তাঁর লেখা ভীষণ জনপ্রিয় ছিলো আমাদের কাগজে। 

যাই হোক পাশের রুমে বসে তিনি লিখতে শুরু করলেন। হঠাৎ টেলিভিশনে ব্রেকিং নিউজ দুই সাংবাদিকের দায়ের করা মামলায় এমপি রনির বিরুদ্ধে পরোয়ানা। অবাক হলাম। বিষয়টি তাকে জানালাম । তিনি আইনজীবীর সঙ্গে কথা বললেন। বললেন , আদালতে গিয়ে জামিন নিবেন। তার লিখা শেষ হয়নি। 
মুহুর্তে এসবি , ডিবির লোকজন আমার রুম ঘিরে ফেললো। বের হয়ে জানতে চাই আপনারা কারা? জবাবে কেউ বললেন এসবি, কেউ ডিবি। আমার সহকর্মীরা হৈ চৈ করেন আপনারা এই ভাবে পত্রিকা অফিসে আসতে পারেন না। তাদের বললাম আপনারা আমার ফ্লোর থেকে নামুন। তারা বের হয়ে নীচে গেলেন।রনির কাছে আবার গেলাম। বললাম তারা বের হয়েছে। আপনি চাইলে পিছন দিয়ে বের হয়ে সোজা আদালতে যেতে পারেন। 
তিনি বললেন, না ওদের ফেস করবো। আমি রাজনীতিবিদ । 
এক সঙ্গে দুপুরের খাবার খেলাম । তিনি অসমাপ্ত লেখা আমার হাতে দিয়ে নীচে নামলেন। তাকে আমাদের অফিসের নীচ থেকে ডিবি পুলিশ আটক করে নিয়ে যায়। 
সরকারি দলের একজন এমপি কেন আটক হলেন? বাংলাদেশ প্রতিদিনে তিনি একটি লেখা লিখেছেন শেয়ার কেলেংকারি নিয়ে। এতে কারও নাম উল্লেখ না করে একজন দরবেশকে ইংগিত করেছেন, যিনি সপ্নের ভেতরে শেয়ার লুটের কারণে তাঁর প্রয়াত মেয়ের আত্মার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ । ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারের বাইরে এই আত্মা তাকে তাড়া করছে। লেখাটি প্রকাশের আগে অনেক বার পড়েছি । 
কারও নাম নেই। এমন লেখা প্রকাশ করা যায়। তাই করলাম। সালমান সাহেব বিষয়টি সিরিয়াসলি নেন। রনির অফিসের দরজায় বসে থাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে তার ঝগড়া  হয়। সাংবাদিকদের দিয়ে মামলা করান সালমান সাহেব। মুহুর্তে অ‍্যাকশন। রনি আটক হন। জেলে যান। তিনি ৪৯ দিন জেল খাটেন। 
জেলে বসে লেখালেখি করেন। সেই লেখা প্রকাশ করেছি “এমপির কারাদহন” নামে। যা পরে বই আকারে প্রকাশ হয়। গুম, খুনসহ বিভিন্ন বিষয়ে কঠিন সব লেখা প্রকাশে সাহসের অভাব ছিলো না। 
শুধু রনি নন, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, মাহমুদুর রহমান মান্না , ড. তুহিন মালিক, দিনকাল সম্পাদক কাজী সিরাজসহ যে যা লিখেছেন তাই প্রকাশ করেছি। তখন সংসদে বিরোধী দল ছিলো বিএনপি। গনতন্ত্রে সংসদে সাহসী বিরোধী দল থাকলে শক্তিশালী থাকে মিডিয়া। 
অনেক বছর পর ভাবছি এখন কেউ কী পারবে গোলাম মাওলা রনির সেই সময়ের মতো এমন সাহসী লেখা প্রকাশ করতে?

তথ্য সূত্র : সম্পাদক নঈম নিজামের ফেসবুক আইডি থেকে....