উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে:
সাদাকালো রঙের ষাঁড়টির ওজন ৩২ মণ। লম্বায় ১০ ফুট ও ৬ ফুট উচ্চতার ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম ‘রাজা বাবু’। নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ইউনিয়নের উড়নী গ্রামের আবদুল কাদের মোল্লা তিন বছর ধরে এই ষাঁড় লালন-পালন করেছেন। উদ্দেশ্য ছিল, কোরবানিতে ষাঁড়টি বিক্রি করবেন। কিন্তু বিক্রি করতে পারেননি। ফলে ষাঁড় নিয়ে এখন পড়েছেন বিপাকে। খামারি আবদুল কাদের দাবি করেন, তাঁর রাজা বাবু নড়াইল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় গরু। প্রতিদিন খাবার লাগে প্রায় ৬০০ টাকার। প্রাকৃতিক খাবারে পালন করা। তিনি বলেন, তাঁর খামারে ছোট–বড় মিলে ৯টি গাভি আছে। এর মধ্যে একটি গাভির বাছুর হলো রাজা বাবু। কোরবানিতে ষাঁড়টি বিক্রি করতে না পারায় এখন তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, শুধু রাজা বাবুই নয়, জেলায় কোরবানিযোগ্য ৮ হাজার ৯৭৮টি গরু অবিক্রীত থেকে গেছে। কোরবানি হয়েছে ১১ হাজার ৮১৪টি গরু। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ হাজার ২৯টি, লোহাগড়ায় ৫ হাজার ৭২১টি ও কালিয়া উপজেলায় ২ হাজার ৬৪টি গরু কোরবানি হয়েছে। তবে গরুর চেয়ে ছাগল কোরবানি হয়েছে বেশি। জেলায় ছাগল কোরবানি হয়েছে ১৫ হাজার ৪৬৮টি। জেলায় গরুর খামার আছে ৪ হাজার ৬২টি। এ ছাড়া ব্যক্তিগতভাবে অনেকে গরু পালন করেছেন। এত গরু অবিক্রীত থেকে যাওয়ায় বড় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন খামারিরা। নড়াইল শহরের দুর্গাপুর গ্রামের খামারি ঈমান আলী পাঁচটি ষাঁড় কোরবানিতে বিক্রি করতে চেষ্টা করেন। দুটি বিক্রি হয়েছে দুই লাখ টাকায়। অন্য তিনটি বড়, তাই বিক্রি হয়নি। এ গ্রামের মোশারেফ মোল্লা তাঁর ১০টি বড় গরু বিক্রি করতে পারেননি। ছোট ৯টি বিক্রি করেছেন লোহাগড়া উপজেলার মাকড়াইল গ্রামের খোকন আলী তাঁর ২৪ মণ ওজনের ষাঁড়টি বিক্রি করতে পারেননি। বিক্রি হয়নি এ গ্রামের হেমায়েত হোসেনের ২২ মণ ওজনের ষাঁড়টি। এ উপজেলার বড় খামারি রামকান্তপুর গ্রামের আমিনুর রহমান চারটি, চরকোটাকোল গ্রামের খন্দকার ফারুক ছয়টি, দিঘলিয়া গ্রামের জান্নাত ১২টি, ধানাইড় গ্রামের আমিরুল ইসলাম একটি ও পারমল্লিকপুর গ্রামের মিরাজুল ইসলাম দুটি গরু বিক্রি করতে পারেননি। অবিক্রীত এসব গরুর অধিকাংশই বড় আকৃতির।জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মারুফ হাসান বলেন, এবার গরু না দিয়ে অনেকেই ছাগল কোরবানি দিয়েছেন। ছোট গরুর চাহিদা ছিল বেশি। লকডাউনের কারণে সময়মতো ঢাকা ও চট্টগ্রাম গরু নেওয়া যায়নি। করোনার কারণে স্বাস্থ্যের কথা ভেবে অনেকেই বড় গরু কেনেননি। তারপরও প্রাকৃতিক খাবারে পালন করলে বেশি দিন রাখা যাবে। এগুলো আরও বড় হবে।