ইয়ালামলাম নামক স্থানে জাহাজ পৌঁছিলে আমরা ইহরাম পরিধান করিলাম। একটী তাওলিয়া পরিধেয় ছিল, আর একটী তাওলিয়া বদনাবরণ ছিল। নগ্ন পদ ও নগ্ন মস্তকে দিনের পর দিন অতিবাহিত হইত। জাহাজ জিদ্দা বন্দরে পৌঁছিল। তখন জিদ্দা বন্দরে পানীয়ের সুবন্দোবস্ত ছিল না…
মদিনা শরীফ ২৫০ মাইল দূরে অবস্থিত, পথিমধ্যে অনেকগুলো মঞ্জিল বা স্টেশন আছে। প্রত্যেক মঞ্জিলে জ্বালানী কাঠ ও মশক-ভরা পানি পাওয়া যায়। কোন কোন মঞ্জিলে চাউল বা আটাও পাওয়া যায়। কাফি সর্ব্বত্রই পাওয়া যায়, আর পাওয়া যায় খেজুর ও তরমুজ।
রাস্তা-পথে সুকদুক ব্যতীত কোন বাহন নাই। একটী উটের পিঠে নাগরদোলার ন্যায় দুইটিী আসন দুই দিকে ঝুলিতে থাকে, প্রত্যেকটিতে একজন আরোহী সাধারন বিছানাপত্র লইয়া বসিতে ও শুইতে পারে। আমাদের কাফেলা তিনশত উট ছিল। বাদ জোহর কাফেলা চলিত ও শেষ রাত্রিতে মঞ্জিলে আসিয়া পৌঁছাইত। পথিমধ্যে শত্রুভয়ে কাফেলা থামিত না। সুতরাং মঞ্জিলে থাকিতেই গোছল, আহারাদি ও পায়খানা প্রস্রাব সম্পন্ন করিয়া লইতে হইত।
আমাদের উষ্ট্রচালক ছিল দুইজন জাম্মাল, আর কাফেলার সকল জাম্মালের উপর একজন শেখুল জাম্মাল ছিল। ইনি শরীফ সাহেব কর্ত্তৃক নির্বাচিত। তার উপর শরীফ ছাহেবের কড়া নির্দেশ ছিল হজ্জের চারদিন পূর্ব্বে মদিনা শরীফ হইতে কাফেলা ফিরাইয়া আনিতে হইবে ও জিম্মা স্বরুপ তাহার ভাইকে নজরবন্দ রাখিতে হইবে। যদি হজ্জ করিবার কোন ব্যাঘাত হয়,তবে তাহার ভাইয়ের মস্তক দ্বি-খন্ডিত হইবে
কয়েকটি মঞ্জিল অতি কষ্টে অতিক্রম করিলাম। মহাসমরের পর তখনও আরবে শান্তি স্থাপন হয় নাই। রেলওয়ে স্টেশনের Post গুলি ভূমিসাৎ (হেজাজ রেলপথ, সম্মানিত পাঠক চাইলে ভবিষ্যৎতে হেজাজ রেলপথের ইতিহাস নিয়ে লেখার ইচ্ছা আছে), টেলিগ্রাফের তার নাই, বদ্ধুদিগের(দস্যু) অত্যাচার পূর্ণমাত্রায় বিদ্যমান। রাত্রি হইলেই শত্রুগণ বন্দুক ও তলোয়ার লইয়া সম্মুখীন হইত। প্রতি রাত্রিতে এক আধ হাজার টাকা দিয়া শত্রুদিগকে খুশি করিতে হইত। দূরে অগ্নিকুন্ড দৃষ্ট হইত, টোটার আওয়াজ আসিত, ছোলেহ না করিলে বদ্ধুদলের সহিত লড়াই করিতে হইত। প্রতি রাত্রি উৎকোচ দিতে দিতে আমরা সর্ব্বশান্ত হইয়া পড়িলাম। তাই একরাত্রি জাম্মালদিগকে লড়াই করিবার জন্য প্রস্তুত হইতে বলিলাম।
দু’ একটী গুলি আমাদের সুকদুকের অতি নজদিকে পড়িল, একজন হারামী (শত্রু) আসিয়া কাফেলার জনৈক ব্যক্তির হস্তাঙ্গুলি তলোয়ারের আঘাতে কর্ত্তিত করিল। কিন্তু অবশেষে হারামী গণ পলায়ন করিল। একদা রাত্রির প্রভাতে কাফেলার এক ব্যক্তি পায়খানায় বসিয়াছিল, জনৈক বদ্ধু তাহার মস্তকে বন্দুকের আঘাত করিয়া আহত করতঃ টাকার থলিটী লইয়া পলায়ন করে….
(চলবে)
৫ম পর্বের লিংক;
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=5308647229223610&id=100002351575118&mibextid=Nif5oz