পিরোজপুর প্রতিনিধিঃ পিরোজপুর বাস মালিক সমিতির ২৪ কোটি টাকা আত্মসাত ও অনিয়মের অভিযোগে সমিতির সদ্য সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মলিক পক্ষ। শনিবার দুপুরে স্থানীয় কুটুমবাড়ি কমিউনিটি সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ সম্বলিত লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারন ও ভুক্তভোগী বাস মালিক নিজাম উদ্দিন মোল্লা। সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সদস্য বাবুল হালদারের স্বাক্ষরিত লিখিত বক্তব্যে পিরোজপুর বাস মালিক সাবেক সভাপতি মসিউর রহমান মহারাজের ব্যপক দূর্নীতি ও চাঁদাবাজির খতিয়ান তুলে ধরা হয়। এ সময় সাংবাদিকদের সামনে নানা খাত থেকে ২৪ কোটি টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলে ধরেন মালিকরা। দির্ঘ নয় বছর সাবেক এমপি এ কে এম এ আউয়ালের ছোট ভাই মসিউর রহমান মহারাজের শারীরিক ও মানুষিক অত্মচারের করুন চিত্র তুলে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন বেশ কয়েকজন মালিক। লিখিত বক্তবের মাধ্যমে জানা যায়, মালিকদের গাড়ি সরাসরি রোটেশন বিক্রি,কোটা ভাড়া দিয়ে টাকা আদায়,গাড়ি বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে টাকা আদায়, বিভিন্ন ফেরি ঘাট থেকে অবৈধভাবে চাঁদা আদায়,সমিতির নামে দূরপাল্লার গাড়ি থেকে চাঁদা নেয়া, শ্রমিকদের নামে ও সমিতির গাড়ি ও পরিবহন থেকেও নেয়া হয় চাঁদা। এ সব কাজে মসিউর রহমান মহারাজকে সহযোগীতা করেছেন সিনিয়র সহ-সভাপতি,আলতাফ হোসেন নান্না,সহ-সভাপতি রফিকুল ইসলাম গাজি, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল হক খোকন, কোষাধ্যক্ষ রিপন দাসসহ কিছু দালাল চক্র। এই সব অভিযোগের প্রতিবাদ করতে গেলে তারা (মহারাজের) নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে মালিকদের ভয়ভীতি হুমকি দেয়। তারা অভিযোগ করেন,উল্লেখিত ব্যক্তিরা যখন মালিক সমিতির বিভিন্ন পদ দখল করেন তারা কোন গাড়ির মালিক ছিলেন না। এমনকি মহারাজ নিজেই ২০১৯ সালে গাড়ির (বাস) মালিক হন। মালিকদের কেউ তার নির্দিষ্ট করে দেওয়া চাঁদা না দিলে মালিকদের উপর শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন চালাতেন। হতাশ হয়ে ও দেনার দায়ে ডুবে প্রায় ৭/৮ জন মালিক ধুকে ধুকে মৃত্যু বরন করেন। এভাবে মৃত্যুবরনকারী মতলেব খানের ছেলে সুমন খান কান্নায় ভেঙে পরে বলেন, আমার বাবা এক সময় ড্রাইভার ছিলেন। বহু কষ্টে ধার দেনা করে একটি বাস কিনেন। কিন্তু সভাপতি মহারাজ রোটেশন দিচ্ছিলেন না। তাঁর কাছে গেলে তিনি গালাগালি করে তাড়িয়ে দেন। তার দুইদিন পড়েই আমার বাবার মৃত্যু হয়। অথচ বাস মালিক সমিতির বাইরে (অন্য জেলার) ১৫০টি গাড়ির কাছে রোটেশন বিক্রি করেন। অপর এক বাস মালিক ফয়সাল হাওলাদার বলেন, আমি রোটেশন চাইতে গেলে আমাকেও গালাগালি করে তাড়িয়ে দেয়। তখন আমি ক্যান্সারে আক্রান্ত অসুস্থ মায়ের কথা জানাই। তাও আমাকে রোটেশ দেয়নি। এর পর সমিতির অফিস সহকারি জাহিদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ধার বাবদ নেই। রাজনৈতিক পথ পরিবর্তনের পর গৃহায়ন ও গনপূর্ত মন্ত্রী ও পিরোজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য শ.ম.রেজাউল করিমকে অভিযোগ করলে তার নির্দেশে দুইটি রোটেশন পাই। সেই রোটেশন জাহিদ নিজে বিক্রি করে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। জানতে চাইলে বলে, ৪০ হাজার টাকায় ২০ হাজার টাকা সুদ হয়েছে। মূলত দুই রোটেশন থেকে আমি এক টাকাও পাইনি। বরং আমার মা মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে ফ্রী চিকিৎসা নিয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এই মসিউর রহমান মহারাজ পিরোজপুর জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির নাম পাল্টিয়ে পিরোজপুর জেলা বাস,মিনিবাস,কোচ ও মাইক্রোবাস মালিক সমিতি নাম করন করে। এর মধ্যে কোচ ও মাইক্রোবাস থেকেও চাঁদা আদায় শুরু করে। তার অত্যাচার ও নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে গত ২ অক্টোবর বুধবার বাস মালিকগন সমিতির সভাপতি মহারাজের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। এবং আগের কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে রতন চক্রবর্তীকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে এই কমিটি ৪৫ দিনের মধ্যে নতুন কমিটি গঠন করবেন।
আহবায়ক কমিটির আহবানে সংবাদ সম্মেলনে ১৭১ জন মালিকের মধ্যে ১৩৬ জন উপস্থিত ছিলেন। এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সাবেক সভাপতি ও আওয়ামীগ নেতা জসিম উদ্দিন খান, সাবেক সাধারন সম্পাদক আক্তারুজ্জামান ফুলু,বাবুল হালদার,সাধারন সদস্য ডাঃ সিদ্দকুর রহমান,নিজাম উদ্দিন মোল্লা প্রমূখ।