মোঃ মনির হোসেন শাহীন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর
উপজেলার শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের ৮ম শ্রেণির এক অসহায় দরিদ্র মেধাবী ছাত্র ত্রিশুক দত্ত।ত্রিশুক যখন অনেক ছোট তখন তার মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে বাবা একদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর আর ফিরে আসেনি। তার মা অভাব অনটনের সংসারে অর্ধহারে অনাহারে একদিন সেও ত্রিশুককে ফেলে চলে গেলে ত্রিশুকের দায়িত্ব নেন তার দাদী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ত্রিশুকের ঘর এমনই জরাজীর্ণ যে সামান্য বৃষ্টিতেই ভিজে যায়, বিদ্যুৎ নেই, একবেলা খাবার পেলে দুদিনেও আবার জোটেনা খাবার। তাই প্রায় অনাহারে থাকতে হয় ত্রিশুকদের। তারপরেও হাল ছাড়েনি ত্রিশুক। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। স্কুল শেষে বাড়ি ফিরে জীবিকার তাগিদে কাজের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে যায়। পানের বরজে কাজ করে, অন্যের বাড়ির ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে। আর তা থেকে যা অর্থ পায় তা দিয়ে দাদি নাতির খাবার জুটে। তার এই কষ্টের কথা শুনে এলাকার কিছু যুবক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় যা ছিল অপ্রতুল।
ত্রিশুকের কষ্টের জীবন নিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরা প্রতিবেদন তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করলে তা নজরে আসে নবীনগরের ইউএনওর। তিনি ছুটে যান ত্রিশুকের বাড়িতে। ত্রিশুকের দুরাবস্থা দেখে তাৎক্ষণিক তার জন্য একটি ঘর, সোলার প্যানেল, টিওবয়েল, শৌচাগার,নগদ অর্থ,পড়ার টেবিল, স্কুল ড্রেস ও ব্যাগসহ যাবতীয় দায়িত্ব নেন তিনি।
গতকাল বুধবার এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মাসুম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ত্রিশুকের কষ্টের কথা শুনে আমি তার বাড়ি আসি তারপর উপজেলা পরিষদ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় আজ তার মাথাগোঁজার ঠাই এর ব্যবস্থা করে দেই। এখন তার লেখাপড়া যেন চালিয়ে যেতে পারে সে জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা করেছি।
স্থানীয় এনজিও ‘হোপ’ কর্তৃপক্ষ আজীবন তার লেখাপড়ার দায়িত্ব ও মাসিক ১ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। স্কুলের লেখাপড়াসহ তার শিক্ষাসামগ্রী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহন করা হবে।
এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনির, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হাসান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রনোজিত রায়, চেয়ারম্যান আমির হোসেন বাবুল, শিক্ষক তৌফিকুর রহমান, সাংবাদিক মো. কামরুল ইসলাম, সাংবাদিক আবু কাউছার,শ্যামগ্রাম ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা কমল দাস, মো.মোছাদ্দেক হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।