রাজনীতি

পরিবর্তিত নেতৃত্ব, স্থিতিশীল দেশ এবং তারেক রহমানের নতুন রাজনৈতিক দর্শন- অয়ন আহমেদ

পরিবর্তিত নেতৃত্ব, স্থিতিশীল দেশ এবং তারেক রহমানের নতুন রাজনৈতিক দর্শন- অয়ন আহমেদ

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২০২৪-২৫ সাল এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সাক্ষী। দীর্ঘ সময় ধরে দেশে বিরাজমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান এবং একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার আকাঙ্ক্ষা থেকে যে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছিল, তার পরবর্তী সময়ে দেশ সংস্কারের এক বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এই সন্ধিক্ষণে ‘পরিবর্তিত নেতৃত্ব’ হিসেবে তারেক রহমানের আবির্ভাব বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কেবল একটি ব্যক্তির ফেরা নয়, বরং একে দেখা হচ্ছে একটি নতুন রাজনৈতিক দর্শনের যাত্রা এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণ হিসেবে।

পরিবর্তিত নেতৃত্বের প্রেক্ষাপট-
তারেক রহমান এক সময় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে কেবল বিএনপির উত্তরাধিকার হিসেবে বিবেচিত হলেও, লন্ডনে দীর্ঘ  প্রবাস জীবনে তিনি নিজেকে একজন পরিণত, দূরদর্শী এবং প্রতিপক্ষের কাছেও দক্ষ রাজনীতিবিদ এবং একজন নেতা হিসেবে গড়ে তুলেছেন। তাঁর এই ‘পরিবর্তিত’ ভাবমূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিহিংসার পরিবর্তে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি। তিনি তাঁর বক্তব্যে বারবার উল্লেখ করছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন মানে কেবল ক্ষমতার রদবদল নয়, বরং এটি রাষ্ট্র ব্যবস্থার মৌলিক ও গুণগত পরিবর্তনের এক সুবর্ণ সুযোগ। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি আধুনিক, জবাবদিহিমূলক এবং স্বচ্ছ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে দাবি, তারেক রহমানের নতুন দর্শন সেই দাবির সাথেই সমান্তরালভাবে সুনির্দিষ্ট পথই নির্দেশ করছে।

রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা: তারেক রহমানের নতুন রাজনৈতিক ডিএনএ
তারেক রহমানের নতুন রাজনৈতিক দর্শনের মূল স্তম্ভ হলো বিএনপির ঘোষিত ‘৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার রূপরেখা’। এই রূপরেখাটি কেবল একটি রাজনৈতিক ইশতেহার নয়, বরং একটি গণতান্ত্রিক ও আধুনিক রাষ্ট্র গড়ার ব্লুপ্রিন্ট। এর প্রধান দিকগুলো হলো:
১. রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোতে, যেমন- প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে ভারসাম্য আনা যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো ব্যক্তি বা দল স্বৈরতন্ত্রের পুনরাবৃত্তি করা আর সম্ভব না হয় ।
২. উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট  বিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করা, যাতে বিশিষ্ট নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারেন।
৩. বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও দলীয় প্রভাবমুক্ত রাখা, যাতে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায়।
৪. নির্বাচনের পর সকল দলের সমন্বয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি, যা বিভাজনের রাজনীতি দূর করতে সহায়ক হবে।

স্থিতিশীল বাংলাদেশ ও অর্থনৈতিক দর্শন তারেক রহমানের প্রত্যাশা-
একটি স্থিতিশীল দেশ গড়তে হলে কেবল রাজনৈতিক সংস্কার যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন অর্থনৈতিক মুক্তি। তারেক রহমানের দর্শনে ‘সুশাসন’ ও ‘অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা’ একে অপরের পরিপূরক। তিনি একটি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া ব্যবসা করতে পারবেন। বিশেষ করে বাংলাদেশের বৃহৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের জন্য তিনি কারিগরি শিক্ষা ও আইটি সেক্টরের ওপর জোর দিয়েছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশ যদি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা নিতে চায়, তবে সেখানে মেধার মূল্যায়ন করতে হবে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার সুপারিশ রেখেছেন। এবং এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তিনি ‘রুল অফ ল’ বা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠারও অঙ্গীকার করেছেন।

জাতীয় ঐক্য ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে তারেক রহমান চাই-
তারেক রহমানের বর্তমান নেতৃত্বের অন্যতম বড় দিক হলো তাঁর অসাম্প্রদায়িক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বার্তা। তিনি পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেছেন, "বাংলাদেশের পরিচয় হবে আমরা সবাই বাংলাদেশি; এখানে সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে কোনো বিভাজন থাকবে না।" মন্দির, গির্জা বা প্যাগোডায় হামলা প্রতিরোধে তাঁর দলের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অবস্থান এবং পাহাড়ে সমতলে সবার অধিকার নিশ্চিত করার বার্তাটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ গড়ার পথে একটি মাইলফলক। প্রতিহিংসার রাজনীতির বদলে ‘রেইনবো নেশন’ বা রংধনু জাতির মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন তিনি ফেরি করছেন। তাঁর নতুন দর্শনের প্রধান ভিত্তি হলো প্রতিহিংসার বদলে 'জাতীয় সমঝোতা'। রাজনৈতিক পরিবর্তন মানে কেবল ক্ষমতার বদল নয়, বরং রাষ্ট্র ব্যবস্থার গুণগত পরিবর্তন। 


গণতান্ত্রিক উত্তরণে তারেক রহমানের ভূমিকা-
গণতান্ত্রিক উত্তরণে তারেক রহমানের ভূমিকা এবং তাঁর নতুন রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গভীর ও সময়োপযোগী মনে করছেন বুদ্ধিজীবি মহল। তাই গত ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে দীর্ঘ ১৭ বছর পর তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে আন্তর্জাতিক ও দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটিকে "রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ" এবং গণতান্ত্রিক যাত্রার জন্য একটি "টার্নিং পয়েন্ট" হিসেবে আখ্যা দিয়েছে রাজনীতি বোদ্ধারা।

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে দেশবাসী দেখতে পেয়েছে তারেক রহমান তাঁর প্রতিদিনকার কর্মযজ্ঞে অর্থাৎ ১৭ বছর বিদেশে থাকা অবস্থায় প্রযুক্তির সহযোগীতায় প্রথমতঃ দলের চেইন অফ কমান্ড ঠিক রাখা। এবং দেশে ফেরার পর পরই  তিনি নেতাকর্মীদের স্পষ্ট অনুরূপ নির্দেশ দিয়েছেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বা দখলবাজি বরদাস্ত করা হবে না, যা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। নেতৃত্বের এই দৃঢ়তা দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করছে যে, আগামীর বাংলাদেশ হবে আইনের শাসনের দেশ।

তাঁর প্রাথমিক লক্ষ্য হলো জনগণের ছিনতাই হওয়া ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। তিনি এমন এক ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখছেন যেখানে কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারবেন না।

তিনি বিশ্বাস করেন, শক্তিশালী অর্থনৈতিক ভিত্তি ছাড়া গণতন্ত্র টেকসই হয় না। এজন্য তিনি শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, তরুণদের কর্মসংস্থান  ও  উৎপাদনমুখী অর্থনীতি ভিত্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন।

সর্বশেষ বলতে হয়- তারেক রহমানের বর্তমান ভূমিকা কেবল একজন দলীয় নেতার নয়, বরং তিনি দেশের জনগণের কাছে নিজেকে একজন "রিফর্মার" বা সংস্কারক হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এই পরিবর্তিত নেতৃত্ব ও দর্শন যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ আরও মসৃণ ও দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে এমনটি মনে করছে দেশবাসী।

লেখক- অয়ন আহমেদ, সম্পাদক, দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র
ই-মেইল: protidinerchitro14@gmail.com 

পরিবর্তিত নেতৃত্ব বলতে আমরা যখন তারেক রহমানকে বুঝি, তখন আসলে আমরা একজন নেতার আধুনিকায়ন ও বিবর্তনকে বুঝি। তাঁর রাজনৈতিক দর্শন কেবল একটি দলের এজেন্ডা নয়, বরং এটি আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার এক জাতীয় আকাঙ্ক্ষা। একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাঁর এই রূপরেখা যদি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক শক্তি।


তারেক রহমানের এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এবং তাঁর ঘোষিত সংস্কার পরিকল্পনাগুলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি স্বর্ণালি অধ্যায় হয়ে থাকবে, যা দেশপ্রেম, ত্যাগ এবং আধুনিক চিন্তার এক অনন্য সমন্বয়।