করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সারাদেশে অঘোষিত লকডাউন পালনের সময় মোবাইল ফোনে রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাকিংয়ের দোকান বন্ধ থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন অনেক গৃহবন্দী সাধারণ মানুষ। দেশের অনেক জেলায় সীমিত পরিসরেও খোলা নেই এসব দোকান। রিচার্জ করতে না পেরে ঘরে থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না কেউ কেউ।
এদিকে গত শুক্রবার রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জনগণের সঙ্গে সহিষ্ণু আচরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। ওই নির্দেশনায় তিনি ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনের সেবাকে ‘জরুরি সেবা’ বলে অবহিত করেন। তবে আজ সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি কাটেনি।
বার্তায় আইজিপি বলেছেন, ‘জনজীবন সচল রাখতে চিকিৎসা, ওষুধ, নিত্যপণ্য, খাদ্যদ্রব্য, বিদ্যুৎ, ব্যাংকিং ও মোবাইল ফোনসহ আবশ্যক সকল জরুরি সেবার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও যানবাহনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করুন। দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ জনগণের সাথে বিনয়ী, সহিষ্ণু ও পেশাার আচরণ বজায় রাখুন।’ বার্তাটিকে ‘অধীনস্থ সকলের নিকট পৌঁছে দিয়ে এর বাস্তবায়ন নিশ্চিত’ করতে বলেছেন আইজিপি।
আজ রাজধানীর নতুনবাজার এবং মাদানী এভিনিউ ঘুরে মুদি, কাঁচাবাজার, ফার্মেসি ও ফলের দোকান ছাড়া সব দোকানই বন্ধ দেখা গেছে। শহীদনগর অটোস্ট্যান্ডের কাছে ‘সুরভী জেনারেল স্টোরের’ নামে মুদির দোকানের সঙ্গে মোবাইল ফোন রিচার্জ ও মোবাইল ব্যাকিং রয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে মোবাইল রিচার্জ ও ব্যাংকিং বন্ধ করে দিয়ে গেছে পুলিশ।
দোকানের মালিক রাসেল বলেন, ‘ভিড় হয় দেখে পুলিশ বন্ধ রাখতে বলছে। সব বড় রিচার্জের দোকানই তো বন্ধ।রবিবার থেকে আমি সীমিতভাবে খুলছি।’ স্থানীয় বাসিন্দা শাকিল করিম বলেন, ‘আমি ফোনে টাকা ঢুকানোর জন্য বের হয়ে কোথাও পেলাল না। বিকাশেও টাকা নেই যে রিচার্জ করবো। রিসক নিয়ে অনেক দূরে গিয়ে একটি ােকান খোলা পেয়েছি।’ সোলমাইদ এলাকার দোকনদার আব্দুল হাকিম বলেন, ‘আমি এক বেলা দোকানটা খোলা রাখছি। তবে সবাই বলে সমস্যা হবে, ভয়ে আছি।’
জানতে চাইলে ভাটারা থানার ওসি মোক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ফার্মেসি ও নিত্যপণ্য ছাড়া সব বন্ধ করে দিছি। মোবাইল রিচার্জ বা বিকাশ জরুরি সেবার আওতায় পড়বে এমন নির্দেশনা পাইনি।’ শুক্রবার আইজিপির নির্দেশনার কথা বললে তিনি বলেন, ‘যারা কাজে বের হচ্ছে তাদের সাথে পেশাদার আচরণ করার কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া আর কোনো কিছু তো পাইনি।’
আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকার সব মোবাইল ফোনের রিচার্জ ও ব্যকিং দোকানই বন্ধ আছে। মাসুদ রানা নামে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা দুই বন্ধু একটি ব্যাচেলর বাসায় এক রুমে থাকি। তাই বাসায় ওয়াইফাই নাই। নেট শেষ হয়ে গেলে পুরো এলাকা ঘুরে টাকা ঢুকানোর রাস্তা খুঁজে পাই না। জরুরি এই সেবার বিষয়টি কেন বন্ধ রাখা হলো বুঝতে পারছি না।’
মোবাইল ফোনে স্থানীয় ‘সমির টেলিকমে’র মালিক সমির আহমেদ বলেন, ‘নির্দেশনা মেনে আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। পরিচিত কেউ কেউ ফোন করে টাকা পাঠাতে বলছে।’
লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ভিড় ও আড্ডা হওয়ার কারণে এগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। জরুরি সেবা হবে কিনা সেক্ষেত্রে পরিস্কার নির্দেশনা নেই।’
ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার পৌরশহরে কাচাবাজার ও ফার্মেসি ছাড়া সব দোকানই বন্ধ রয়েছে বলে জানান স্থানীয় ব্যবসায়ী জহিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিকাশ ও রিচার্জের কিছু দোকান গামগঞ্জে খোলা আছে।
অসুস্থ এক আত্মীয়কে নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে আসেন সুমন মাহমুদ নামে এক যুবক। তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে ফোনে কথা বলতে গিয়ে তার মোবাইল ফোনে টাকা শেষ হয়ে যায়। গাবতলীতে পৌছে মোবাইল ফোনে রিচার্জ করার মতো কোনো দোকান খোলা পাননি তিনি। শেষে এক পথচারীর ফোন দিয়ে কল করেন।
জানতে চাইলে দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এসব দোকান খোলা বা বন্ধ রাখার বিষয়ে সিভিল প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেবে।’
সূত্র: কালেরকণ্ঠ