মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি :করোনাভাইরাসের কারণে সরকার জুন পর্যন্ত সব এনজিওর কিস্তি আদায় কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করলেও মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে সেই নির্দেশনা অমান্য করে কিস্তি আদায় কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। এমনকি কিস্তি আদায়ের জন্য গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে বসে থাকা ও হুমকি পাওয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এদিকে আয় উপার্জন ও ব্যবসা না থাকায় কিস্তি দেওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
এই উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫-২০টির মতো বিভিন্ন এনজিও কার্যক্রম চলমান। উপজেলার আড়িয়ল ইউনিয়নের ফজুশাহ গ্রামের আলাউদ্দিন জানান, করোনার কারনে ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ, আমি দৈনিক কাজ করে যে টাকা পাই সেই টাকা দিয়েই সংসার চালাতাম আর কিস্তি পরিশোধ করতাম। কখনো কিস্তির টাকা ঘুরাইতাম না। এইবার করোনার কারনে কাজ কাম করতে না পেরে কিস্তি দিতে সমস্যা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার হাসাইল বানারী ইউনিয়নের একাধিক ব্যক্তি জানান, এনজিও কর্মীরা আমাদের বাড়িতে গিয়ে কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন। যদি বলি সরকার কিস্তি বন্ধ রাখছে তাহলে তারা রেগে গিয়ে বলে সরকার যদি কিস্তি বন্ধ রাখতো তাহলে আমরা কিস্তি নিতে আসলাম কেন। সরকার কিস্তি বন্ধ রাখছে এমন প্রমান থাকলে নিয়া আসেন।
এ সময় তারা আরো বলেন, আমরা যে আপনাদের কাছে এই কথা গুলো বলছি তা যদি ম্যানেজার স্যারেরা জানে তাহলে আমাদের আর ঋন দিবোনা।
যশলং ইউনিয়নের জহিরুল ইসলাম বলেন, এই সংকটের সময়ে কিস্তি উত্তোলন স্থগিত করা হোক। না হয় মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আরও অতিষ্ঠ হবে প্রান্তিক জনজীবন।
উপজেলার দীঘিড় পাড়ের দোকানদার সুকুমার ও রহেলা বেগম জানান, আমাদের নিজেদের কোনো টাকা নেই। সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে দোকানের মালামাল কিনে দোকান চালাই। করোনা ভাইরাসের কারনে দোকান বন্ধ থাকায় সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছি এর মধ্যে কিস্তি দিতে খুব সমস্যা হচ্ছে।
ডেকোরেটর শ্রমিক মতিন , মনির ও লাল মিয়া বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে বিয়ে, মুসলমানি বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ এখন আমরা কিভাবে দিন কাল পার করছি আমরাই জানি। এর মধ্যে আবার কিস্তির জন্য চাপ। যেখানে সংসার চালানোটাই কষ্টকর সেখানে আবার কিস্তির জ্বালা। এ সময় তারা কিস্তি বন্ধ রাখার জন্য এনজিও কর্মীদের অনুরোধ করেন।
সরেজমিনে সোমবার টঙ্গীবাড়ী উপজেলার হাসাইল বানারী ইউনিয়নের বাবুল মিস্ত্রীর বাসায় স্থানীয় আশা নামের একটি এনজিও কে কিস্তি আদায় করতে দেখা গেছে।
এ সময় ওই এনজিও-র ফিল্ড অফিসার সোহেল বলেন, কে বলেছে কিস্তি বন্ধ, বন্ধ কি আপনারা দিছেন নাকি আমরা দিছি। তিনি আরো বলেন, আপনি দেখাইতে পারবেন সরকার বন্ধ দিছে? আপনি কমপ্লেইন দেন আমরা কিস্তি নিচ্ছি।
টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার জানান, একটি চিঠি নিয়ে এনজিও কর্মীর লোক আমার কাছে এসেছিলো যেখানে উল্লেখ্য ছিলো জোরপূর্বক কারো থেকে কিস্তি আদায় করবে না।কিন্তু কিস্তি বন্ধের সরকারি কোনো চিঠি তিনি পাননি।