সাইদুর রহমান রিমন : যে কোনো ঘটনায় সাংবাদিক ভিক্টিম হলেই হলো, তার যেন আর রেহাই পাওয়ার কোনো পথ থাকে না। সরকার বরাবরই সাংবাদিকদের সঙ্গে ইয়ার্কির নামে ইতরামি করেন, সরকারি কর্মকর্তারা শুরু করেন নির্মম রসিকতা। আর সরকারি দলের চাই চামুন্ডারা তো সাংবাদিক পেলেই যেন বর্বর জানোয়ার হওয়ার নেশায় মেতে উঠেন। নিরীহ সাংবাদিককে গাছের সঙ্গে রশিতে বেধে, খাটের পায়ায় শিকলে আট্কিয়ে কিংবা অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাড়া মহল্লা, হাটবাজার ঘুরিয়ে তবেই প্রাণটা ভিক্ষা দেয়ার দয়া (!) দেখান তারা। দুর্নীতিবাজ লুটেরা নেতা, পাতি নেতারা ধারেকাছে সাংবাদিক পেলেই হলো, অমনি যেন তাদের রক্তে পূর্ব পুরুষের পৈশাচিকতা ভর করে বসে। যে কোনো এলাকার নীপিড়িত নির্যাতিত সাংবাদিক আইনি সহায়তার আবেদন নিয়ে গেলেই শুরু হয় সরকার ও প্রশাসনের নির্মম ইতরামি। শালা শালীদের সঙ্গে নতুন ভগ্নিপতির মতো ফাজলামি স্টাইলের ইয়ার্কী করা হয় বলেই সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর রুনির চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ৭৯ দফা ঘুরিয়েও আদালতে দাখিল করা হয় না। দেশের আদালতপাড়ায় বোধকরি এরকম নির্মম পরিহাস সৃষ্টির আর একটি উদাহরণও খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আদালতে দফায় দফায় সময় প্রার্থনার ‘গ্যাড়াকল’ শুরু হয়েছে কক্সবাজারে নজিরবিহীন নৃশংসতার শিকার সাংবাদিক ফরিদুল মেস্তফা খানের মামলা নিয়েও। টেকনাফ থানায় সীমাহীন পৈশাচিক কান্ডে লিপ্ত ও মেজর সিনহা হত্যার ঘটনায় বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমারের বিরুদ্ধে জঘণ্য নির্যাতনসহ জেল জুলুম চাপানো, ক্ষমতার অপব্যবহার সংক্রান্ত মামলার আর্জি নিয়ে আদালতে হাজির হয়েছিলেন নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা। আদালত বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দায়িত্ব দেন পিবিআই কর্মকর্তাকে। আদালতের এ আদেশকে পুঁজি করেই পিবিআই’র সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা রীতিমত প্রদীপ দরদী হয়ে উঠলেন। প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্টের ফাইল প্রস্তুত করে ওই কর্মকর্তার অফিসে নিয়ে পৌঁছে দেয়া হয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শী শত মানুষ স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতেও প্রস্তুত রয়েছে, কিন্তু পিবিআই কর্মকর্তা অজ্ঞাত কারণে প্রতিবেদনটা দাখিল করছেন না আদালতে। তদন্তকারী এ কর্মকর্তার কাধেও সাগর রুনি মামলার প্রকান্ড ভুতটি চেপে বসেছে, তিনিও একই স্টাইলে দফায় দফায় সময় প্রার্থনা করে দীর্ঘসূত্রিতার জন্ম দিচ্ছেন।
আজব দেশের লাগামছাড়া ভুতুরে কান্ড চলছে যেন। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে সম্পাদন করার কাজটুকু ‘বুদ্ধেশ্বর তদন্ত কর্মকর্তা’ কোন্ যুক্তিতে তিন-চার মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখছেন? এজন্য ওই কর্মকর্তাকে তার পদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে কী জবাবদিহিতা পর্যন্ত করতে হয় না? তাহলে তো বলতেই হয় দেশের অদ্ভ‚ত উটটি তাহলে কক্সবাজারেই স্থায়ী ঘাঁটি গেড়ে বসেছে, আর ওই উটের পিঠেই সওয়ার হয়ে আছেন গোটা কক্সবাজারের পিবিআই। একবার ভেবে দেখুন তো, বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ এখনো তার ভক্ত সমর্থক অফিসারদের মনের গহীনে কতোটা দাপটের সঙ্গেই জিইয়ে রয়েছেন। জেলবন্দী প্রদীপের বন্দনায় নতজানু কক্সবাজারের কতিপয় কর্মকর্তা গোটা পুলিশ বাহিনীর মর্যাদাকে ধূলায় মিশিয়ে দিতেও দ্বিধা করছে না।
এসব বললাম মাঠ পর্যায়ের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সাংবাদিক বিরোধী কর্মকান্ডে অতি দায়িত্বশীলতার বিদঘুটে নমুনার কথা। এবার সরকারের মন্ত্রনালয় পর্যায়ে সাংবাদিকদের কথিত কল্যাণকর কাজগুলো কোন্ কৌশলে দীর্ঘায়িত ও পরিত্যক্ত বানানো হয় সেটাও একটু দেখুন।
দেশে দায়িত্ব পালনকারী কয়েক হাজার সাংবাদিকের তালিকা প্রনয়ণেও তথ্য মন্ত্রনালয়ের লেজেগোবরে পরিস্থিতি বানানোর পেছনে বুদ্ধিহীনতা নাকি দায়িত্বহীনতা-তা আমি ঠাওর করতে পারছি না। তত্য মন্ত্রনালয়ের ীতি নির্ধারক পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও জেলা উপজেলা পর্যায়ে তালিকা তৈরির নামে হ য ব র ল পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। এক্ষেত্রে কেবলমাত্র নিয়মিত প্রকাশিত/প্রচারিত মিডিয়াগুলোকে নির্ধারিত ছকে তাদের নিয়োগপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের তথ্য দাখিলের নির্দেশ দিলে তা সর্বোচ্চ ১০ কর্মদিবসে প্রকৃত তালিকা পাওয়া সম্ভব। অথচ তার পরিবর্তে ডিএফপি কর্মকর্তাদের থেকে শুরু করে জেলা তথ্য অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ হাজার হাজার কর্মকর্তাকে গলদঘর্ম বানিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকার মতো অজস্র ভুলত্রুটিযুক্ত সাংবাদিক তালিকা তৈরির বৃথা চেষ্টা চলছে। বিষয়টি রীতিমত আজব এক ধাঁধাঁয় পরিনত করার সব চেষ্টা দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। তার মানে হচ্ছে, দেশে প্রকৃত সাংবাদিকদের তালিকা প্রনয়ণের কাজটি যেমন শত ঝক্কির মধ্যে ফেলা হলো, তেমনি তালিকা হলেও তা নিয়ে অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, মামলা, বিতর্ক যুগ যুগ ঝুলতেই থাকবে…এতে কোনই সন্দেহ নেই।