বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০১:৩৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে মাঠের লড়াই জমে উঠেছে নাটোরে বিভিন্ন উপজেলায় থামছেনা অবৈধ পুকুর খনন যাচ্ছে নিরীহ মানুষের পান পোশাক শিল্পের হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হবে … বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী নিরপেক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে— পুলিশ সুপার সিইসি বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা প্রভাব খাটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রফেসর আলতাফ পুনরায় দিঘলিয়া উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গৃহায়ণ তহবিলের ১০ কোটি টাকা অনুদান লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে শপথবাক্য পাঠ করালেন প্রধানমন্ত্রী অবৈধভাবে দেশি-বিদেশি টিভি চ্যানেল বন্ধে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শুরু সরকারি বিধি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় জনবল নিয়োগ

ধর্মঘট অর্থ,ধর্মকে সাক্ষী করে ঘটস্থাপন।।মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন

  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ১৬ মার্চ, ২০২১, ১০.১৯ এএম
  • ১৭২ বার পঠিত

‘ধর্মঘট’ শব্দটির উৎস সম্পূর্ণ আলাদা। আসলে ধর্মকর্ম ই। এর সঙ্গে সত্য সত্যই যোগ আছে ধর্মের। মানব ধর্ম বা কোনও পেশায় নিযুক্ত মানুষের কর্মজাত ধর্ম নিয়েই শুরু হয়েছিল ধর্মঘটের যাত্রা।
ধর্মঘট শব্দটির আসল অর্থ ‘ধর্মার্থে ঘট বা কলসদান ব্রত’। সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় ধর্ম+ঘট। দেবতার উদ্দেশে বৈশাখ মাসে প্রতিদিন সুগন্ধী এবং জল ভরতি ঘটদান করার এক ব্রত ছিল। আর সেটারই নাম ছিল ধর্মঘট। এর অর্থ ওই ধর্মকে সাক্ষী করে ঘটস্থাপন।
ধর্মঘট শব্দার্থের আরও গভীরে গেলে দেখা যাবে, তৎকালীন সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষ স্বর্ণকার, কর্মকার, কুম্ভকার, তাঁতশিল্পী ইত্যাদিদের প্রধানরা স্বজাতিয় প্রতিনিধিদের ডেকে নিতেন নির্দিষ্ট কোনও জায়গায়়। (যেমন আটচালা, দেবস্থান ইত্যাদি) সভা করে জাতিগত বা ব্যক্তিগত অভিযোগ ব্যক্ত করা হত। এই সভায় ধর্মের নামে একটি জলপূর্ণ ঘট আম পাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হত। এরপর ঘটের গায়ে তেল সিঁদূরে আঁকা চক্র এঁকে পুরোহিত দিয়ে পুজো করানো হত। এরপর সংশ্লিষ্ট পেশা বা ধর্মের ধর্মরাজকে আহ্বান ও পূজো করে সকলকে প্রসাদ বিতরণ করা হত। এরপরে ঘটের সামনে রাখা পান-সুপারি-কাঁচা হলুদ নিয়ে ঘট স্পর্শ করে শপথে করানো হত। শপথ বাক্য বলা হত, “আমি অদ্যকার ‘ঘোঁট’ অনুসারে, মাতব্বরদের মত এবং সকলের মতে আমিও এক ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে আমরা আমাদের শিল্পজাত সামগ্রী যোগাব না বা তার বা তাদের জন্য কোনও কাজ করব না। আজ ধর্মরাজের পান-সুপারী গ্রহণ করলাম। তাঁর আদেশ, নির্দেশ কোনওটাই অমান্য করব না, এবং আমার গ্রামের সকলকে হুকুমের মতো কাজ করতে বাধ্য করবো।” অর্থাৎ সেই সুপারী দেওয়ার রেওয়াজ। এবং এখানে সুপারী দিচ্ছেন স্বয়ং ধর্মরাজ।
এই যে কাজ ধর্মের বা ধর্ম দেবতার শপথ নিয়ে মতবিরোধীদের হয়ে কাজ না করার যে বিষয় এবং ধর্মরাজের আদেশে নিজের বক্তব্য এবং দাবি অন্যন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া এবং প্রভাবিত করার চেষ্টাই ছিল ধর্মঘট। আর সেটাই এখন কর্মনাশা ‘ধর্মঘট’ হিসাবে পালিত হচ্ছে।
তথ্যসূত্র – ক্ষিতীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত কলিকাতায় চলাফেরা বই।

বাংলায় প্রথম ধর্মঘটের একটি ইতিহাস তথা উদাহরণ :
ধর্মঘটের প্রথম উদাহরণ : ১৮২৭ সালে কোলকাতা শহরের পাল্কীবাহকদের এক মাস ব্যাপী ধর্মঘট। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসকদের জারি করা নিয়মের প্রতিবাদেই সংগঠিত হয়েছিল এই ধর্মঘট। কোনও নির্দিষ্ট রাজনৈতিক নীতি, তত্ত্ব ছাড়াই কী ভাবে সংগঠিত হয়েছিলেন পাল্কীবাহকরা, সেই আখ্যান চমৎকার। অন্তত সরকারী দস্তাবেজ তেমনটাই বলছে।
এই কাহিনি পুরনো কোলকাতার। যখন কোলকাতায় আস্তে আস্তে ভিড় বাড়ছিল জনবসতির। দলে দলে জাহাজে করে ব্রিটিশ সাহেব-মেমরা এসে নোঙর ফেলছিল চাঁদপাল ঘাটে, সেই সময় কোলকাতার বেশ কিছু অঞ্চল ছিল জঙ্গলে ভর্তি। বিশেষ করে দক্ষিণ, মধ্য ও উত্তর কোলকাতা বিস্তৃত ছিল এই জঙ্গলে। এতে ভর্তি ছিল খুনে ডাকাত ও বন্য জন্তু। লাল পাগড়ি মাথায় বেঁধে, লাল তিলক কপালে এঁকে হাতে লাঠি ও বল্লম নিয়ে এই ডাকাতদের দল সাধারণ মানুষের পথ আটকে দাঁড়াত। চলত লুঠপাঠ, এমনকী খুন করা হত মানুষকে।
ব্রিটিশদের সময়কার এই কোলকাতায় কালিঘাট ছিল এক পূণ্যস্হান। কিন্তু উত্তর কোলকাতায় বসবাসকারী সাহেব-মেমদের কালিঘাট অঞ্চলে যেতে হলে পার করতে হত চৌরঙ্গির অঞ্চলে থাকা এক বিশাল জঙ্গল। সেই সময় কলকাতার বুকে চৌরঙ্গি বলে কোন জায়গা ছিল না। যাতায়াতের অন্যতম বাহন ছিল পাল্কী। কিন্তু খুনে ডাকাতদের ভয়ে জঙ্গলের পথ মাড়াতে চাইতেন না পাল্কীবেহারারা। যদিও বা তাঁরা এই পথে পাল্কী নিয়ে যেতেন তাহলে বিশাল অর্থ দাবি করতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাজের জন্য সাহেবদের প্রায়শই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে কালীঘাটে যেতে হত। কিন্তু পাল্কী বেহারারা অত্যাধিক ভাড়া দাবি করায় সাহেবরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে।
পাল্কী বেহারাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে কোম্পানি এক নিয়ম লাগু করে। কোম্পানি জানিয়ে দেয় পাল্কী বইতে গেলে বেহারাদের নিতে হবে লাইসেন্স, হাতে পরতে হবে কোম্পানির নম্বর দেওয়া ব্যাজ। যাতায়াতের মাশুল হবে ঘন্টাপিছু। কোম্পানির ফতোয়া মানতে রাজি ছিল না পাল্কী বেহারারা। তাঁরা মনে করছিলেন হাতে ব্যাজ পরা মানে জাত খোয়ানো। এর ফলে তাঁরা সমাজে অপাঙক্তেয় হয়ে যাবেন বলে আশঙ্কা করেছিলেন। উপরন্তু ব্যাজের জন্য কোম্পানিকে কোনও অর্থ দিতেও রাজি ছিলেন না পাল্কী বেহারারা।
ফলে পাল্কী বেহারারা একসঙ্গে পাল্কী বওয়া বন্ধ করে দেন। পাল্কী না পেয়ে বিপাকে পড়ে সাহেবরা, পরিস্হিতি মোকাবিলায় তৎপর হয় কোম্পানি। ইতিমধ্যে কলকাতার ময়দানে মিটিং করে প্রায় ১২০০০ পাল্কী বেহারা। তাঁরা মিটিং করে দল বেঁধে হাজির হন ম্যাজিস্ট্রেটের দরবারে। সব কথা শুনে ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাজের দাম মকুব করে দেন। এরপর পাল্কী বেহারারা লালবাজারের সুপ্রিম কোর্টের সামনে হৈ হুল্লোড় করতে থাকেন। লোকে ভাবল পাল্কী বেহারারা হয়ত কাজে ফিরতে চলেছেন। কিন্তু পরের দিন থেকে রাস্তায় কোনও পাল্কীর দেখা পাওয়া যায়নি। কোম্পানি বুঝতে পারে পাল্কী বেহারারা আদপেও কাজে ফেরেনি ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে। ১৮২৭ সালের এই ঘটনা কলকাতা শহরের প্রথম এই ধর্মঘট নিয়ে তর্কের অন্ত নেই। একদল মানুষ পাল্কী বেহারারাদের পক্ষে জোর সওয়াল করেছিল। এই সব মানুষদের দাবি ছিল পাল্কী বেহারাদের কোনও ভাবে ঠকানো যাবে না। তাঁরা যেভাবে বিপদ সংকুল জঙ্গলে পাল্কী বয়ে নিয়ে যান তাতে জীবনের ঝুঁকি থাকে। এই পাল্কী ধর্মঘট ওঠার পেছনেও চমকপ্রদ কাহিনি রয়েছে। এই সময় কোলকাতার পাল্কী বেহারাদের অধিকাংশ ছিল ওড়িয়া। ধর্মঘটে যে পাল্কী বেহারারা গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন ওড়িয়া। এই ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে কলকাতায় প্রবেশ ঘটে বিহারের হিন্দুস্হানী রাউনিদের। এরা এসে ওড়িয়া বেয়ারাদের না ছোঁয়া পাল্কী চওড়া কাঁধে তুলে নিয়েছিল। কোলকাতায় ফের সরগরম হয়েছিল পাল্কী বেহারাদের ডাক………

[তথ্য সহায়তা প্রখ্যাত সাহিত্যিক সাংবাদিক প্রয়াত পূর্ণেন্দু পত্রী-র বিভিন্ন লেখা]

লেখকঃ রাজশাহী পুলিশ একাডেমির আইন প্রশিক্ষক, হাসান হাফিজুর রহমান ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
    123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com