লিয়াকত হোসেন রাজশাহী ব্যুরোঃ
আহ নির্দয় হৃদয়! রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজের (আইবিএনসি) দুর্নীতিবাজ প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে তাহমিনা খাতুন নামে ডিপ্লোমা পড়ুয়া এক ছাত্রীকে তার মৃত বাবার কাছে যেতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। পিতার জীবিত মুখটা শেষবারের মতো দেখার আকুতি জানিয়েও সাড়া পাননি ওই কলেজছাত্রী। পরে তার মা ও ভাই অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল থেকে কলেজ হোস্টেলে আসেন। এসময় তাকে বাসায় নিয়ে যেতে চাইলে বিভিন্ন ‘অজুহাত’ দেখিয়ে দেড় ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাহমিনার বাবার লাশবাহী ওই অ্যাম্বুলেন্স। ঘটনা গত ৩ ডিসেম্বর দিনগত রাতের।
জানা গেছে, তাহমিনা ওই কলেজের ডিপ্লোমা দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাসা চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরে। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছোট। একমাত্র বড়ভাই কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন প্রায় ৮ বছর আগে। মেয়েকে অসুস্থ রোগীদের সেবিকা তৈরির স্বপ্ন নিয়ে তার পিতা ভর্তি করেন নার্সিংয়ে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩ ডিসেম্বর রাতে স্ট্রোক করেন তাহমিনার পিতা নফের আলী। রাত ১২টা ১১ মিনিটে তাকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সঙ্গে আসেন তাহমিনার মা সুফিয়া বেগম ও চাচাতো ভাই মুনসুর আলী। সেসময় ইসলামী ব্যাংক নার্সিং কলেজ হোস্টেলে ছিলেন তাহমিনা। পিতার স্ট্রোকের খবর শুনে হোস্টেল থেকে হাসপাতালে যেতে অনুমতি চান। কিন্তু অনুমতি পাননি হোস্টেল সুপারের কাছে। তবে তিনি দায়িত্বে থাকলেও প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিকই তদারকি করেন হোস্টেলের বিষয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, তাহমিনাকে তার পিতার কাছে হাসপাতালে যাওয়ার অনুমতির জন্য আমরাও বারবার অনুরোধ করি। তার পিতার অবস্থা মুমূর্ষ হলে মেয়েকে একনজর দেখার জন্য ব্যাকুল হন। কিন্তু নার্সিং পড়ুয়া একমাত্র মেয়েকে শেষবারের মতো দেখার সৌভাগ্য হয়নি।
এ বিষয়ে কলেজছাত্রী তাহমিনা বলেন, আব্বু মারা গেছেন শোনার পরও ছাড়া হয়নি হোস্টেল থেকে। উল্টো আমার সঙ্গে এতটা রাফ বিহ্যাভ করেছে- যা বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আব্বু মারা যান রাত সাড়ে ১২টায়। এরপর হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়ে অ্যাম্বুলেন্সে আব্বুর লাশ নিয়ে হোস্টেলে আসেন আম্মু ও বড়ভাই। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্সে আব্বুর লাশসহ তাদেরকে প্রায় দেড় ঘণ্টা হোস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। রাত ৩টার পরে ছেড়েছে আমাকে।
কান্নায় ভেঙে পড়ে তাহমিনা বলেন, কতটা অমানবিক এরা! আমার বাবা মারা যাচ্ছেন, জীবিত অবস্থায় মেয়েকে কিছু বলবেন, আমি একমাত্র মেয়ে। সেই শেষ কথা শোনার সৌভাগ্য হয়নি। এর চেয়ে আফসোসের আমার কাছে কিছু নেই। ওই সময় ইচ্ছা হচ্ছিল, হোস্টেলের তালা ভেঙে বাবার কাছে আসি। কিন্তু পারিনি।
সবশেষ তিনি বলেন, কর্মকর্তার শাস্তি দাবি করে তো বাবাকে ফেরত পাব না। বিচার দিলাম আল্লাহর কাছে। সেটা ছাড়া আর কী করার আছে আমার। তবে একটা রিকুয়েস্ট, আমার সাথে যেরকম হয়েছে, আর কারো সাথে যেন এরকম না হয়।
তার মা সুফিয়া বেগম বলেন, সংসারের টানাপোড়েনের মধ্যেও অসুস্থদের সেবিকা তৈরির স্বপ্ন নিয়ে মেয়েকে নার্সিয়ে ভর্তি করেন তার বাবা। সেই বাবা হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় একমাত্র মেয়েকে কিছু বলার জন্য ব্যাকুল ছিলেন। কিন্তু বলার সুযোগ পেলেন না।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানভীর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি দু:খজনক। একটা ঘটনা ঘটে গেছে। এ ধরণের ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ারা খাতুন বলেন, এ ঘটনা তখন জানা ছিল না। পরে শুনেছি। কিন্ত করার কিছুই ছিল না আমার।