রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
সখিপুরে বন বিভাগের আর একটি ঘরও ভাঙতে দেওয়া হবে না এ্যাড আহমেদ আজম খান খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (র.) এর ১৫১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত খুলনা সমিতির সভাপতি সালাম,সম্পাদক রবিউল খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.)’র জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত রবিবার থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়” -স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সচিবালয়ে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা: সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ জিয়ানগরে কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কমিটি গঠন বিধি লঙ্ঘনের জন্য আমলাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণে পরিবেশগত বিপর্যয় এবং উত্তরণের উপায় রিয়াজ উদ্দিন রানার নেতৃত্বে পিরোজপুর জেলা বিএনপি আজ ঐক্য বদ্ধ

পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণে পরিবেশগত বিপর্যয় এবং উত্তরণের উপায়

  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯.৩৯ এএম
  • ৪ বার পঠিত

পলিথিন ও প্লাস্টিক আধুনিক জীবনের বহুল ব্যবহৃত উপাদান হলেও, পরিবেশের জন্য তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ। পলিথিনের বহুল ব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার ফলে মাটি, পানি, এবং বায়ু দূষণের পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশের ২৫ শতাংশ প্লাস্টিক অপরিবর্তিত থাকে অর্থাৎ পুনর্ব্যবহার হয় না এবং পরিশেষে তা সমুদ্রে পতিত হয় । এর ফলে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ ৭ হাজার ৬৮৫ টন প্লাস্টিক সমুদ্রে যাচ্ছে। যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলার ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং নদী-নালার ধারণক্ষমতা কমে যায়। অধিকন্তু, একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উপস্থিতি প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিবেশসম্মত পুনর্ব্যবহারকে দুরূহ করে তুলছে।

পরিবেশের পাশাপাশি পলিথিন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও দীর্ঘমেয়াদি এবং ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। পলিথিন প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক খাবার বা পানির সংস্পর্শে আসলে ধীরে ধীরে খাদ্যে মিশে যায়। এই রাসায়নিকগুলো মানবদেহে ক্যান্সার, হরমোনগত অসামঞ্জস্য, এবং প্রজনন সমস্যার কারণ হতে পারে। পলিথিন পোড়ালে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর গ্যাস নির্গত হয়। এগুলো শ্বাসনালির প্রদাহ, অ্যাজমা, এবং ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। পলিথিন ধীরে ধীরে ছোটো ছোট মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়, যা খাদ্য ও পানির মাধ্যমে মানুষের দেহে প্রবেশ করে। মাইক্রোপ্লাস্টিক অন্ত্রের ক্ষতি, রক্তে প্রদাহ, এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। নদী-নালা বা সমুদ্রের পলিথিন বর্জ্য জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদকে বিষাক্ত করে তুলছে। এই দূষিত জলজ প্রাণী যখন মানুষ গ্রহণ করে, তখন তা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে। প্লাস্টিক খেলনা, প্যাকেটজাত খাদ্য, বা পানির বোতল থেকে নির্গত  বিষাক্ত পদার্থ শিশুদের স্নায়ুতন্ত্র ও মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। প্লাস্টিকের বস্তুটি মাটি ও পানিকে দূষিত করার ক্ষেত্রে খুবই ক্ষতিকর।

পলিথিন সহজে মাটিতে মিশে না। এটি মাটির উপরে একটি আস্তরণ তৈরি করে, যার ফলে মাটির স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পলিথিনের উপস্থিতি মাটিতে উপকারী জীবাণু ও কীটপতঙ্গের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করে, ফলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। পলিথিনের কারণে মাটিতে পানি জমে থাকে, ফলে ফসল নষ্ট হয় এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। পলিথিন উৎপাদনের সময় ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থ মাটিতে মিশে গিয়ে মাটির গুণাগুণ নষ্ট করে।  পলিথিনের কণা বৃষ্টির পানির সাথে নদী, হ্রদ ও সমুদ্রে চলে যায়, ফলে জলাশয় দূষিত হয়। জলজ প্রাণীরা পলিথিনকে খাবার ভেবে খেয়ে ফেলে, ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট হয় এবং মৃত্যু হয়। পলিথিন পানিতে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসৃত করে, ফলে পানির গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং মানুষের জন্য পানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। পলিথিনের ক্ষতিকরদিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে পলিথিন শপিংব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয় বা বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহণ, ব্যবহারকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় পলিথিন দূষণ রোধে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। পলিথিন উৎপাদনের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা করেছে। ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপগুলোতে এবং ১ নভেম্বর থেকে কাঁচাবাজারসহ সারাদেশে পলিথিন শপিংব্যাগের ব্যবহারের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। গত ৩ নভেম্বর ২০২৪ হতে এ পর্যন্ত সমগ্র বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন উৎপাদন বিক্রয়, সরবরাহ ও বাজারজাত করার দায়ে ১৯৮টি মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করে ৪১৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট পঁচিশ লক্ষ সত্তর হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ আনুমানিক ৫০ হাজার ৫৫২ কেজি নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন জব্দ করা হয়েছে এবং ৪টি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার সেবা তথা গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে পলিথিন ও পলিপ্রপাইলিন শপিংব্যাগ বিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাজার মনিটরিং এর জন্য উচ্চপর্যায়ের মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি নিয়মিত বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা মহানগরের বাজারে বাজারে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন, ক্লিনআপ পোগ্রামসহ বিকল্প বিতরণ করা হয়েছে। পরিবেশ আইন অমান্য করে অর্থাৎ অবৈধ পলিথিন শপিংব্যাগ যারা উৎপাদন, পরিবহণ, বিক্রয় এবং মজুদদারকে মোবাইল কোর্টের আওতায় এনে নিয়মিত জরিমানা ধার্য ও আদায় করা হচ্ছে এবং অবৈধ পলিথিন সামগ্রী জব্দ, কারখানাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

পলিথিনের বিকল্প সোনালী ব্যাগের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের মাধ্যমে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, বায়োডিগ্রেডেবল মোড়কের ব্যবহার বৃদ্ধি এবং এ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনের সমন্বয়ে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় পলিথিনসহ সকল প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১০ বছর মেয়াদি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার শহরের প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা নদী দূষণের হট স্পটগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। অচিরেই সেগুলো অপসারণ এবং প্রয়োজনীয় পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা হবে।
মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকজাত পণ্য ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় কর্তৃক তিন বছর মেয়াদি বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা মোতাবেক সমুদ্র সৈকত, সৈকত সংলগ্ন হোটেল মোটেলে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের বিভিন্ন আইটেম পর্যায়ক্রমে বন্ধের বিষয়ে কার্যক্রম চলমান। আশা করা যায় যে, দেশে প্রথমবারের মতো ইপিআর এর আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের সাথে বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি ব্রান্ডের মালিকগণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থায়নসহ সার্বিক বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ করবেন। মহামান্য হাইকোর্ট উপকূলীয় এলাকায় সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকসহ সারাদেশে পলিথিন শপিংব্যাগ বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

পলিথিনের কারণে পরিবেশ দূষণের মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। তাই পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সুরক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। পলিথিনের বিকল্প হিসেবে আমরা অনেক কিছু ব্যবহার করতে পারি। পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাগজ থেকে তৈরি ব্যাগ খাদ্যসামগ্রী এবং হালকা পণ্য বহনের জন্য জনপ্রিয়। এটি সহজেই পরিবেশে মিশে যায়, ফলে দূষণের কোনো ঝুঁকি থাকে না। সুতির কাপড় বা অন্যান্য টেকসই উপাদান দিয়ে তৈরি কাপড়ের ব্যাগ টেকসই এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য। দৈনন্দিন বাজার এবং ব্যক্তিগত কাজে এটি একটি আদর্শ বিকল্প। পাট থেকে তৈরি ব্যাগ পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। বাংলাদেশে সহজলভ্য এই পণ্যটি বাজার, কেনাকাটা এবং প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি মাটিতে সহজে মিশে যায় এবং দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। পানি, তেল, মশলা ইত্যাদি রাখার জন্য কাঁচের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। কাঁচের বোতল পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব। পানি বহন করার জন্য স্টেইনলেস স্টিলের বোতল ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি দীর্ঘস্থায়ী এবং স্বাস্থ্যকর। কাচ ও স্টিলের পাত্র খাবার সংরক্ষণ এবং বহনে কার্যকর। এটি বারবার ব্যবহার করা যায়, ফলে এটি দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগতভাবে উপকারী।

বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি ব্যাগ, ঝুড়ি বা অন্যান্য পণ্য পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘস্থায়ী। এগুলো কৃষিপণ্য পরিবহণ ও সাজসজ্জায় ব্যবহৃত হয়। কর্নস্টার্চ বা ভুট্টার গুঁড়া থেকে তৈরি বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক পলিথিনের কার্যকর বিকল্প হতে পারে। এটি দ্রুত পচনশীল এবং পরিবেশে কোনো ক্ষতি করে না। নারকেলের খোসা বা ধানের ছোবড়া থেকে তৈরি পণ্য প্যাকেজিং এবং ব্যাগ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি সহজে মাটিতে মিশে যায়। বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমন সম্ভাবনাও রয়েছে। সচেতনতার অভাব, খরচ বেশি হওয়া, এবং সহজলভ্যতার সীমাবদ্ধতা চ্যালেঞ্জ তৈরি করলেও, প্রচারণা, নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং প্রযুক্তির উন্নয়নের মাধ্যমে এসব পণ্যকে জনপ্রিয় করা সম্ভব।

পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করার জন্য রেডিও ও টেলিভিশনে পলিথিন দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব এবং এর বিকল্প সম্পর্কে বিজ্ঞাপন, ডকুমেন্টারি ও বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা প্রয়োজন। পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিয়মিত নিবন্ধ, ফিচার এবং বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট, ভিডিও এবং তথ্যচিত্র প্রচার করা যেতে পারে।  স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিথিনের ক্ষতিকর দিক নিয়ে সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পলিথিন ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে স্থানীয় নেতাদের নেতৃত্বে প্রচারণা চালানোসহ সরকারি পর্যায়ে আইন বাস্তবায়নের পাশাপাশি সচেতনতামুলক নিয়মিত কর্মসূচি আয়োজন করা হচ্ছে। এনজিও ও পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার উৎসাহিত করতে পলিথিনের বিকল্প, যেমন পাটের ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ বা কাগজের ব্যাগের ব্যবহার জনপ্রিয় করার উদ্যোগ নিতে হবে। কম খরচে এসব পণ্য সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়নের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত। সরকার, শিল্পখাত এবং সাধারণ মানুষ সবাই মিলে কাজ করলে পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন সম্ভব। নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। সাধারণ মানুষের কাছে নতুন প্রযুক্তিগুলো সহজলভ্য করার উদ্যোগ নেওয়া দরকার। সর্বোপরি, নতুন প্রযুক্তিগুলোর পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনা করতে হবে।  পলিথিনের বিকল্প টেকসই প্রযুক্তির উন্নয়ন একটি জটিল প্রক্রিয়া, তবে এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ। অপরদিকে, আইনের পরিধি আরও বাড়িয়ে পলিথিন ব্যবহারের জন্য জরিমানা এবং অন্যান্য শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।  আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে পলিথিন ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে উৎসাহিত করতে হবে। পলিথিন উৎপাদনকারী এবং বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে বাজার থেকে পলিথিন উঠিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে।

পলিথিন দূষণ বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকট হিসেবে দেখা দিয়েছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংগঠন ও উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সাউথ এশিয়া কোঅপারেটিভ এনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম এর চলমান প্লাস্টিক ফ্রি রিভার্স অ্যান্ড সিজ ফর সাউথ এশিয়া প্রজেক্ট(প্লিজ) এর আওতায় একাধিক পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাকে প্লাস্টিক বর্জ্য হ্রাসকরণে ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করাসহ রিসাইকেল করার জন্য দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল প্লাস্টিক অ্যাকশন পার্টনারশিপের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা ও জিআইজেড এর সাথে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিষয়ক একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় উন্নত দেশের কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে হবে। পলিথিন দূষণ একটি বৈশ্বিক সংকট, যার প্রতিক্রিয়া স্থানীয় পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায়। এটি প্রতিরোধে সরকার ও জনগণের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এ সামগ্রী থেকে মুক্তি পেতে আমাদের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পলিথিনের ব্যবহার হ্রাস করে এবং পরিবেশবান্ধব পণ্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে।

পলিথিন দূষণ রোধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সফল করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারি, বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা গেলে একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পলিথিনের ব্যবহার কমানো গেলে পরিবেশ দূষণ কমবে। পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করে আমরা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারি। তাই আজ থেকেই আমরা সবাই মিলে পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তুলি। সাধারণ মানুষকে পলিথিনের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জানানো এবং তাদের জীবনযাত্রায় পলিথিনের বিকল্প ব্যবহার উৎসাহিত করা হলে এ সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।

লেখক: দীপংকর বর
উপপ্রধান তথ্য অফিসার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়”

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
28293031   
       
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com