শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
লাখো তরুণের বাংলাদেশ, আবু সাঈদের বাংলাদেশ’ গানে মুখরিত ময়মনসিংহ শ্যামনগর আল মারজানে পবিত্র মি’ রাজুন্নবী (স:) উপলক্ষে আলোচনা। ইন্টারপোল সৌদি আরবে আঞ্চলিক অফিস স্থাপন করবে: মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় অপরাধ দমনে নতুন দিগন্ত নওগাঁ জেলা অ্যাডভোকেট বার অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক নির্বাচন সম্পন্ন; ডিএমপি কমিশনারের সাথে ডিআরএসপি (DRSP) এর প্রতিনিধি দলের সৌজন্য সাক্ষাৎ বিশেষ অভিযানে পেশাদার ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ১৮ জনকে গ্রেফতার ৩০ কেজি গাঁজা ও ট্রাকসহ পেশাদার মাদক কারবারি চক্রের দুই সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিবি সিটিটিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশ হিসেবে সিটিটিসি প্রধানের সাথে ইইউ এর প্রতিনিধি দলের সাক্ষাৎ ১ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস ২০২৫ `জনগণ যদি হয় সচেতন, মেছো বিড়াল হবে সংরক্ষণ’ পিরোজপুরে শ্রীশ্রী গুরুচাঁদ পাঠাগার ও মানব কল্যাণ সংঘের পদযাত্রা ও মতবিনিময় সভা

১ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস ২০২৫ `জনগণ যদি হয় সচেতন, মেছো বিড়াল হবে সংরক্ষণ’

  • আপডেট টাইম : বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২৫, ৯.৩৭ পিএম
  • ৪ বার পঠিত

১ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস ২০২৫ `জনগণ যদি হয় সচেতন, মেছো বিড়াল হবে সংরক্ষণ’ -দীপংকর বর

গ্রামবাংলার একটি পরিচিত দৃশ্য, একটি নিরীহ বন্যপ্রাণীকে ঘিরে মানুষের উত্তেজনা, ধাওয়া, আর চিৎকার। মেছো বাঘ নামে পরিচিত এই প্রাণীটিকে তারা হিংস্র শিকারি ভেবে হত্যা করে বীরত্ব প্রকাশ করে। অথচ তারা জানেই না, এটি প্রকৃতির জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এক প্রাণী যার মেছো বিড়াল। জলাভূমির বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় এরা এক অনন্য সহযোগী। অথচ অজ্ঞতা আর ভুল ধারণার কারণে বারবার এদের জীবন সংকটের মুখে পড়ে।

মেছো বিড়াল (Prionailurus viverrinus) মূলত জলাভূমির অধিবাসী। এরা মাছ, ব্যাঙ, পাখি, কাঁকড়া, সাপ, ইঁদুরসহ নানা ছোট প্রাণী খেয়ে পরিবেশের খাদ্যশৃঙ্খল বজায় রাখতে সহায়তা করে। মরা ও রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে জলাশয়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখে, কৃষকদের উপকার করে। মেছো বিড়াল মানুষের ওপর আক্রমণ করে না, বরং বিপদের আভাস পেলে পালিয়ে যায়।

বাংলাদেশে আট প্রজাতির বুনো বিড়ালের মধ্যে একটি এই মেছো বিড়াল। নিশাচর স্বভাবের মেছো বিড়াল মাছ ধরার জন্য বিশেষভাবে অভিযোজিত। পানিতে ডুব দিয়ে শিকার ধরার অসাধারণ ক্ষমতা আছে তাদের। এ দক্ষতার কারণেই “Fishing Cat” নামটি প্রচলিত হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এই আশ্চর্য প্রাণীটি টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছে।

মেছো বিড়াল ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ তাদের অন্যতম প্রধান আশ্রয়স্থল। সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটসহ গ্রামবাংলার প্রায় সব বনে এদের উপস্থিতি রয়েছে। গড় উচ্চতা ৭০-৮৫ সেন্টিমিটার, ওজন ৮-১৬ কেজির মধ্যে। জলপাই-ধূসর দেহে কালো দাগ, ছোট লেজ, এবং ঝিল্লিযুক্ত পায়ের কারণে পানিতে সহজে চলাচল ও শিকার করতে পারে। চিতাবাঘের সঙ্গে কিছুটা মিল থাকায় অনেকেই ভুল করে এদের ভিন্ন কোনো ভয়ংকর প্রাণী ভাবেন।

মেছো বিড়ালের সবচেয়ে বড় হুমকি হলো তাদের আবাসস্থল ধ্বংস। জলাভূমি ভরাট করে কৃষিজমি, শিল্প এলাকা, আবাসন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। বন উজাড়, অতিরিক্ত মাছ ধরা, জলদূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মেছো বিড়ালের জীবন কঠিন করে তুলেছে। মানুষ অনেক সময় এদের ক্ষতিকর প্রাণী ভেবে হত্যা করে। চোরাশিকারও টিকে থাকার পথে বড় বাধা। অধিকাংশ মানুষই জানে না, এই প্রাণী প্রকৃতির কত উপকারে আসে।

মেছো বিড়ালের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে বলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উদ্বিগ্ন। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (IUCN) এদের “ঝুঁকিপূর্ণ” হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। কনভেনশন অন ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ইন এনডেঞ্জারড স্পিসিজ অব ওয়াইল্ড ফনা অ্যান্ড ফ্লোরা (CITES) এর আওতায় মেছো বিড়ালের বাণিজ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী এটি সংরক্ষিত প্রাণী।

মেছো বিড়াল সংরক্ষণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এর নেতৃত্বে মন্ত্রণালয় বিভিন্ন কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। মেছো বিড়াল হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। মেছো বিড়ালের জন্য বাসস্থান রক্ষা, বন সংরক্ষণ, এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চলছে। বন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন সংস্থা এদের আবাসস্থল চিহ্নিত ও সংরক্ষণে কাজ করছে। সুন্দরবন ও হাওর অঞ্চলে সংঘাত কমাতে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব মেছো বিড়াল দিবস ২০২৫- প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে উদযাপন করা হচ্ছে। বন অধিদপ্তরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য “জনগণ যদি হয় সচেতন, মেছো বিড়াল হবে সংরক্ষণ”। সচেতনতা বাড়াতে পোস্টার ডিজাইন প্রতিযোগিতাসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মানুষ ও মেছো বিড়ালের সংঘাত কমাতে স্থানীয় পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গ্রামে গ্রামে জনসচেতনতামূলক সভা, পোস্টার, র‍্যালি, স্থানীয় ভাষায় নাটক ও গান পরিবেশন করা হচ্ছে।

মেছো বিড়াল রক্ষায় জনসচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মেছো বিড়ালকে ক্ষতিকর মনে করে হত্যা করে, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। স্থানীয় জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচারপত্র, পোস্টার, সভা-সেমিনার এবং গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো দরকার। স্কুল-কলেজেও পরিবেশ শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মেছো বিড়াল রক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে। এদের আবাসস্থল সংরক্ষণ করতে হবে। জলাভূমি ও বনভূমি ধ্বংস হলে মেছো বিড়ালের খাদ্য সংকট দেখা দেয় এবং তারা লোকালয়ে চলে আসে। তাই জলাভূমি রক্ষা, বনভূমি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার জরুরি।

বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যারা এ প্রাণী শিকার বা পাচার করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে চোরা শিকার প্রতিরোধে নজরদারি বাড়ানো দরকার। গবেষণার মাধ্যমে মেছো বিড়ালের সংখ্যা, তাদের আবাসস্থল ও হুমকির কারণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা দরকার। বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতায় মেছো বিড়ালের সংরক্ষণে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।

তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হলে তারা নিজেদের পরিবার ও কমিউনিটিকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করতে পারবে। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মেছো বিড়াল সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টিভি ও রেডিওতে স্থানীয় ভাষায় সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার করা দরকার, বিশেষ করে হাওর ও সুন্দরবনের মানুষের জন্য। ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবে মেছো বিড়ালের ছবি-ভিডিও শেয়ার করে গণসচেতনতা তৈরি সম্ভব। পরিবেশবিদ, বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী ও সংরক্ষণ কর্মীরা এ নিয়ে প্রচার চালালে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহ বাড়বে।

স্থানীয় জনগণকে সংরক্ষণ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হলে এটি আরও সফল হবে। তাদের নিয়ে স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করে মেছো বিড়ালের চলাচল, হুমকি ও সংরক্ষণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। পাশাপাশি জলাভূমি দূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, কারণ পানির দূষণ মেছো বিড়ালের খাদ্যশৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সবশেষে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে মেছো বিড়াল সংরক্ষণে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মেছো বিড়াল রক্ষা করা সম্ভব, যা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

আমাদের সবসময় মনে রাখা প্রয়োজন প্রকৃতিতে সকল প্রাণীই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এবং মেছো বিড়ালও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রাণীটিকে আমাদের নিজেদের স্বার্থেই টিকিয়ে রাখতে হবে। আসুন, আমরা এই উপকারী বন্যপ্রাণীকে রক্ষায় সকলে মিলে কাজ করি।

লেখক: উপপ্রধান তথ্য অফিসার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় (পিআইডি-ফিচার)

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
  12345
20212223242526
2728293031  
       
15161718192021
2930     
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com