ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ সাজ্জাত আলী, এনডিসি বলেছেন, বইমেলায় স্থাপিত পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (কন্ট্রোল রুম) থেকে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে। কন্ট্রোল রুমে রাতেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকি করবেন।বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে।
আজ শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি, ২০২৫) সকালে বইমেলা প্রাঙ্গণে স্থাপিত পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সামনে বইমেলা-২০২৫ উপলক্ষে ডিএমপি কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং কালে এসব কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, বইমেলায় বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গেইট কেন্দ্রিক ও অভ্যন্তরীন কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোষাকে পুলিশের বিশেষ টিম মোতায়েন থাকবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলা প্রাঙ্গণ কেন্দ্রিক ফুট পেট্রল ব্যবস্থা ও মুক্তমঞ্চ কেন্দ্রিক বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি আরো বলেন, বইমেলার প্রবেশমুখে মেটাল ডিটেক্টর ও আর্চওয়ে দ্বারা চেকিং এর পাশাপাশি ম্যানুয়াল চেকিং এর ব্যবস্থা থাকবে। বড় ব্যাগ, কার্টুন, দাহ্য পদার্থ নিয়ে মেলায় কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে মেলার ভিতরে ও চারপাশে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করা হবে। ডগ স্কোয়াড দ্বারা মেলাপ্রাঙ্গণ ও আশেপাশের এলাকা সুইপিং করা হবে। হকার, বখাটে, ছিনতাইকারী ও পকেটমারের তৎপরতা রোধে বিশেষ টিমের ব্যবস্থা থাকবে। মেলায় আগত নারী-শিশুদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। বইমেলা কেন্দ্রিক বিভিন্ন প্রবেশ পথে নিরাপত্তা ব্যারিকেড স্থাপন করা হবে। এছাড়া পিকেট ও দূরবর্তী চেকপোস্ট ব্যবস্থা থাকবে।
কমিশনার বলেন, বইমেলা প্রাঙ্গণে ফায়ার টেন্ডার, অ্যাম্বুলেন্স ও প্রাথমিক চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকবে। সার্চ লাইটের ব্যবস্থা থাকবে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিবি, সিটিটিসি, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াটসহ ডিএমপির বিশেষায়িত টিমগুলো সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে। বইমেলায় লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, হেল্প ডেস্ক ও শিশু পরিচর্যা কেন্দ্র থাকবে। মেলার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং আগত দর্শনার্থীদের সুস্বাস্থ্য রক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করা হবে। বইমেলায় বিশুদ্ধ খাবার পানি বিতরণের ব্যবস্থা থাকবে।
তিনি বলেন, ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক পৃথক ট্রাফিক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। বইমেলা উপলক্ষে কয়েকটি জায়গায় ট্রাফিক ডাইভারশন দেয়া হবে।বই মেলা চলাকালীন সময়ে দিনে ও রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোন ভারী যানবাহন প্রবেশ করবেনা। এবার টিএসসি হতে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত রাস্তা সবসময় বন্ধ থাকবে না। আগত দর্শনার্থীদের সংখ্যা বিবেচনা করে কখনো বন্ধ থাকবে, কখনো খোলা থাকবে।
এছাড়া মেলায় স্থাপিত ফুড কোর্টে খাদ্যদ্রব্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এবং মেলায় পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ করেন ডিএমপি কমিশনার।
প্রেস ব্রিফিং এ ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ সরওয়ার, পিপিএম-সেবা বইমেলায় আগত জনসাধারনের নিরাপদ চলাচল, যানবাহনসমূহের নিয়ন্ত্রণ ও পার্কিং ব্যবস্থাপনার জন্য ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ কর্তৃক গৃহীত ট্রাফিক পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, বই মেলায় আগত অনুমোদিত যানবাহনের জন্য পাঁচটি পার্কিং স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। পার্কিং এলাকায় যানবাহন সুশৃঙ্খলভাবে প্রবেশ ও বাহির নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নো-পার্কিং জোনে কোন গাড়ি পার্কিং করা যাবেনা। তিন নেতার মাজার গেট ও টিএসসি/ রাজু ভাস্কর্য এলাকায় ব্যারিকেড/ডাইভারশন দেয়া হবে। ব্যারিকেড সমূহে গাড়িসমূহের ইউ-টার্নের ব্যবস্থা থাকবে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন,বইমেলাকে ঘিরে কোন নিরাপত্তা শঙ্কা নেই। বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
প্রেস ব্রিফিং শেষে ডিএমপি কমিশনার বইমেলার সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি বইমেয়ায় স্থাপিত কয়েকটি স্টলে প্রবেশ করেন ও মেলা প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরিদর্শনকালে তিনি উপস্থিত ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং বইমেলার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ সরওয়ার, পিপিএম-সেবা; অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস্) এস, এন, মোঃ নজরুল ইসলাম, পিপিএম; যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ; উপ-পুলিশ কমিশনারগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।