আকরাম হোসেন, আশুলিয়া প্রতিনিধি : এ যেন কাকের ঘরে কোকিলের বাসা! বাবা- চাচা এমনকি শ্বশুড় বিএনপি নেতা। আর তিনি বনে গেছেন যুবলীগের নেতা! আলোচিত এই যুবলীগ নেতার নাম আনোয়ার মন্ডল। সে চানঁগাও গ্রামের বিএনপির নেতা জসু মন্ডলের ছেলে।
তার ভাষায়, কুখ্যাত আনোয়ার মন্ডল এলাকার মূর্ত্তিমান ত্রাস। লাল নিশান টানিয়ে তুরাগে চলা সকল ভলগেট ( বালু পরিবহন ও উত্তোলনের নৌযান) থেকে চাঁদাবাজীর নায়ক এই আনোয়ার মন্ডল।
বিশ্বাস না হলে র্যাবকে ফোন দেন, বিস্তারিত পাবেন।
এ ব্যাপারে র্যাব-৪’র উদ্ধর্তন কর্মকর্তা জানান, অভিযোগ সত্য। আনোয়ার মন্ডলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। সময় পেলেই সব দেখতে পাবেন।
সূত্রমতে,সাভারের বিতর্কিত এক যুবলীগ নেতাকে কাড়ি কাড়ি টাকা দিয়ে আশুলিয়া ইউনিয়ন কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম ইউনিয়নের পদ কিনেছেন এই আনোয়ার মন্ডল।
বাবা জসু মন্ডল ছিলেন আশুলিয়া বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি।গা বাঁচাতে ছেলেকে যুবলীগে প্রবেশ করিয়েছেন। ছেলের পরামর্শেই নিজের পদ ছেড়ে সেই পদে বসিয়েছিলেন আপন চাচাতো ভাই জালাল মন্ডলকে।তার মৃত্যুর পর নেপথ্যে কলকাঠি নেড়ে শ্বশুড় নেছার উদ্দিন মোল্লাকে বানিয়েছেন ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক।
আপাদমস্তক বিএনপি পরিবারের এই অশিক্ষিত ও সন্ত্রাসী ছেলে যুবলীগের মতো ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নেতা কি করে হন? সেই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী।
চাঁনগাও এলাকার এক ব্যবসায়ি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,সাভারের একজন প্রভাবশালী নেতার নাম ভাঙিয়ে বিএনপি নেতার ছেলে আনোয়ার মন্ডল আজ যুবলীগের নেতা বনে গেছে।
তিনি জানান,প্রভাবশালী ওই নেতাকে বাড়িতে আমন্ত্রন জানিয়ে তাকে শয়ন কক্ষে সামান্য বিশ্রামের সুযোগ দেন। এক পর্যায়ে তার সাথে বিছানায় একসাথে ছবি তুলে ফেসবুকে দিয়ে নিজেকে জাহির করেন বড় নেতা হিসেবে।
ও একজন সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। এলাকার তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর মালিক কর্মকর্তারা থাকে আতংকে। সকাল না হতেই প্রভাবশালী নেতার বাসায় চলে যান। সরাসরি বেডরুমে ঢুকে সেলফি তুলে ফেসবুকে দেন।
কখনো বা ওই নেতার গাড়ি বহরের সামনে পেছন মোটরসাইকেলের বহর নিয়েও শো-ডাউন করে নেতার খাতায় নাম লেখান তিনি।
তবে প্রভাবশালী ওই নেতা মোটরসাইকেলের শো-ডাউনের রাজনীতি না করায় খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না আনোয়ার মন্ডল।
সাভারে অবস্থান নেয়া যুবলীগের একজন কেন্দ্রিয় নেতা জানান, অনুপ্রবেশকারী এসব নর্দমার কীটের কারণেই দলের আজ এই অবস্থা। তিনি জানান, তা দিলেই কাকের ডিম থেকে কখনোই কোকিল হয় না।
যার বাবা, চাচা এমনকি শ্বশুড় বিএনপি নেতা সে কোন ক্রমেই বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হতে পারেন না।
দলের নির্দেশনা রয়েছে এসব অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিত করতে। আমরা সাভার আশুলিয়ার যুবলীগের কমিটির বিষয়ে সরাসরি হাই কমান্ডকে জানিয়েছি। বলেছি, এসব নেতা টাকার বিনিময়ে নেতা হয়েছে। দলে এদের আদর্শ নীতি বলে কিছু নেই।
যোগাযোগ করা হলে বিএনপি নেতার ছেলে কথিত যুবলীগ নেতা আনোয়ার মন্ডলের ঘনিষ্ট সহযোগী ও ৪ নং নম্বর আহবায়ক মোশারফ খান দোশাইদীকে আনোয়ারের বাবা ও শ্বশুড়ের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে আমতা আমতা করে তিনি বলেন,আমি জানাযায় আছি।পরে ফোন কেটে দেন তিনি।
একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আনোয়ার মন্ডল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের আমলনামা ভারি হয়েছে। সময় এলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আশুলিয়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন মাতবর বলেন, যুবলীগের নাম ভাঙিয়ে আনোয়ার মন্ডলের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে ইউনিয়নের বাসিন্দারা অতিষ্ঠ। মাননীয় প্রতিমন্ত্রীকে বিষয়টি বহুবার জানিয়েছি। যুবলীগে যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে- আশা করি এ ধরনের অনুপ্রবেশকারী সন্ত্রাসী চাদাবাজ থেকে দল কলংক মুক্ত হবে।
তিনি জানান,নিউজ করেন। ড্যাম কেয়ার।এসব নিউজে আমার কিছু হবে না।
তবে যুবলীগ শীর্ষ পর্যায়ের একজন নেতা এ প্রসঙ্গে বলেন, পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে।আনোয়ার মন্ডলের আস্ফালন সেই ইঙ্গিত দেয়।
তিনি জানান,আনোয়ার মন্ডলদের কেই বা কেন দলে নিতে হবে? দলে কি নেতার অভাব পড়েছে? বিএনপির আন্ডা থেকে তো আর আওয়ামী লীগ হবে না হবে। হলে জামায়াত বিএনপিই হবে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন,আনোয়ার মন্ডলকে যারা আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছেন একদিন তাদেরকেও জবাবদিহি করতে হবে। সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর কাদের কারনে ডুবেছেন – সেই শিক্ষা নিতে হবে। কারন পতন বলে কয়ে আসেনা।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আনোয়ার মন্ডল জানান, যুবলীগ করলেও তো আমার বাবা চাচা আর শ্বশুড়ের রাজনৈতিক পদ পদবী আর মুছে ফেলা যাবে না। সন্ত্রাসী আর চাঁদাবাজীর ঘটনায় নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, তার নেতা হওয়া ঠেকাতেই ষড়যন্ত্র চলছে।