দেশে প্রায় সব কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ কিংবা দখল রয়েছে রাষ্ট্রের। কিন্তু একমাত্র সাংবাদিকদের বেলায় রাষ্ট্রের বুঝি কোন দায় নেই। দেশ স্বাধীনের ৪৮টি বছর পেরিয়ে গেলে আজও সরকার সাংবাদিকদের তালিকা পণয়নের কাজটি সম্পন্ন করতে পারেননি। এ দায় থেকে সরকার মুক্তি পেতে পারেনা। দেশজুড়ে গণমাধ্যমে ছাটাই, বেতন ভাতা বন্ধ, মামলা-হামলায় অস্থিরতা যেন বেড়েই চলছে। এ থেকে পরিত্রান জরুরী।
দেশের সাংবাদিকদের পক্ষ হতে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম ২০১৩ সাল থেকে পেশাদার সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের জন্য দাবি তুলে আসছে। বিএমএসএফ’র বিভিন্ন শাখা তথ্যমন্ত্রী থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন একাধিকবার। বিএমএসএফ দাবি তুলেছে সাংবাদিক নিয়োগ নীতিমালা ও সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধে যুগোপযোগী আইন প্রণয়নসহ মর্যাদা রক্ষায় সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহনের। দেশে সকল পেশাজীবীর তালিকা কিংবা নিবন্ধন রয়েছে। একমাত্র সাংবাদিকতায় শুধু ব্যতিক্রম। আমরা সকল সাংবাদিকের সরকারী তালিকা চাই। এটি আজ সময়ের দাবিতে পরিনত হয়েছে। এটি প্রণীত হলে অপসাংবাদিকতা, হলুদ ও ভুয়া সাংবাদিকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে ওঠবে। তৈরী হবে সুষ্ঠুধারার গণমাধ্যম। লোপ পাবে গণমাধ্যমের অস্থিরতা। ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশের সুযোগ থাকবেনা তখন। এরকমই গণমাধ্যম যুগের অপেক্ষায় সাংবাদিকেরা।
বিএমএসএফ দাবি করেছিল প্রেস কাউন্সিল কার্যকর করতে। দেশের জেলা-উপজেলায় প্রকৃত সাংবাদিকরা প্রেস কাউন্সিলের আওতায় প্রশিক্ষন পাবেন। সেখানে হাতেগোনা দু একটি সংগঠনের ব্যানারে উৎকোচ গ্রহনের মাধ্যমে অসাংবাদিককে প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। সরকার থেকে লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ অপচয় হচ্ছে।প্রকৃত সাংবাদিকরা প্রশিক্ষন পায়না এমন অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের।
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল আজ একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে রুপ নিয়েছে। যে আশায় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রেস কাউন্সিল গঠন করেছিলেন, তা আজ স্বপ্নই রয়ে গেলো। ১৯৭৪ সালে তিনি আইনজীবীদের জন্য বার কাউন্সিল আর সাংবাদিকদের জন্য প্রেস কাউন্সিল গড়ে তুলেছিলেন। বার কাউন্সিল তার প্রাতিষ্ঠানিক গতিতে এগিয়ে গেছে। পরিণত হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানে। পক্ষান্তরে বঙ্গবন্ধুর প্রেস কাউন্সিল বুড়ো ঘোড়া দিয়ে চালানোর ফলে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়ছে।
সারাদেশের সাংবাদিকদের দাবির মূখে ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের মহতী কাজটি শুরু করেন। তবে সেটি ছিল ভুল পথে। অর্থ্যাৎ স্থানীয় প্রেসক্লাবের মাধ্যমে তালিকা তৈরী করা। প্রেসক্লাব যদি তালিকা প্রস্তুত করে পাঠায় তবে আপনার এলাকার প্রকৃত কতজন সাংবাদিক নিবন্ধন কিংবা তালিকার আওতায় আসতে পারবেন! আমরা জানি কোনো জেলায় একাধিক প্রেসক্লাব রয়েছে। তাদের মাঝে রয়েছে চরম অনৈক্য। স্থানীয় প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সংগঠন সমুহের মাঝে কোন ঐক্য নেই বললে ভুল হবেনা। কারন বিএমএসএফ’র ১৪ দফা বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় যাবার সৌভাগ্য হয়েছে। যেখানে জুনিয়র সাংবাদিকদের সিনিয়ররা ন্যুনতম স্নেহটুকু করেন না। যার ফলে শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে ফেলে জুনিয়র সাংবাদিকেরা। ফলে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনাও বাড়ছেই। প্রেসক্লাবের বাইরের কেউই সাংবাদিক নয়, ভাবটা এমনই।
আসুন, আমরা ঐক্যবদ্ধ দাবি তুলে সারাদেশের সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের মহতী কাজটিকে এগিয়ে নেই। কিভাবে এগিয়ে নেবেন? আমরা দাবি করেছি, জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তথ্য অফিসার জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের তালিকাটি প্রণয়ন করবেন। তথ্য অফিসারের ঘোষণা অনুযায়ী নির্দিষ্ট তারিখে জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকেরা প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসহ উপস্থিত হয়ে কাগজপত্র জমা দিবেন। জেলা পর্যায়ে সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়ন কমিটি যাচাই বাছাই শেষে প্রেস কাউন্সিলে পাঠাবেন। সারাদেশে একযোগ পুরো কাজটি সম্পন্ন করতে একমাস সময়ের বেশি লাগার কোন কারন নেই। যেখানে প্রেস কাউন্সিল ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শুরু করে ২০২০ সালের ১২ফেব্রুয়ারি ২ বছর পেরিয়ে গেলো! আমাদের সন্দেহ এভাবে ভুলপথে দুই যুগেও তিনি সাংবাদিকদের তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন না। প্রেস কাউন্সিল পরিচালনা কমিটিও সংস্কার জরুরী।
তাই আপনিও আসুন, জাতির জনকের হাতেগড়া প্রতিষ্ঠান প্রেস কাউন্সিলকে বাঁচাতে প্রথমে দালালমুক্ত, দূর্ণীতিমুক্ত সাংবাদিক বান্ধব কার্যকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আওয়াজ তুলুন।
লেখক: আহমেদ আবু জাফর, প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম -বিএমএসএফ, কেন্দ্রীয় কমিটি ০১৭১২৩০৬৫০১।