রংপুর প্রতিনিধি : রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ইটভাটা গুলোতে শিশু শ্রমিকের এবং কয়লার স্থানে কাঠ । ঝুঁকিপূর্ণ এ কাজে স্বল্প পারিশ্রমিকে শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ত করে একদিকে যেমন মজুরি বৈষম্যের সৃষ্টি করছে, অন্যদিকে শিশু শ্রম আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলছেন ভাটা মালিকরা।
প্রকাশ, সম্প্রতি রংপুর বিভাগ ঘোষণার পর থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ উপজেলা গুলোতে নতুন নতুন সরকারি বে-সরকারি স্থাপনা তৈরি ও রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন কাজ চলছে। পাশাপাশি ব্যাক্তি মালিকানা উদ্দেগেও তৈরি হচ্ছে অসংখ্য স্থাপনা, এ কারণে ইটের চাহিদাও বেড়েছে আশংকা হারে। অধিক চাহিদা ও মুনাফার কারণে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ন্যায় পীরগঞ্জেও প্রতিযোগিতা মুলক গড়ে উঠেছে অর্ধশত নতুন নতুন ইটভাটা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, ২০০৮ ও ২০০৯ সাল পর্যন্ত খোদ পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৩টি ইটভাটা থাকলেও চলতি বছরে এর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১টি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এদের অনেকের লাইসেন্স পর্যন্ত নেই। পরিবেশ অধিদপ্তর ও শ্রম মন্ত্রনালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে উপজেলার অধিকাংশ ভাটায় স্কুল পড়া শিশুদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করানো হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বড়দরগাহ্ ইউনিয়নের বিশমাইল নামক স্থানে মহাসড়ক সংলগ্ন যোয়াদ ব্রিকস্ ফিল্ডে ৮ জন স্কুল পড়–য়া শিশু শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। তারা কাঁচা ইটের পাইয়ে থাকা ইটগুলো রোদে শুকানোর কাজ করছে। এর মধ্যে একজন ৫ থেকে ৬ বছরেরও একটি অবুঝ শিশু রয়েছে। প্রতিটি পাইয়ে প্রায় দুই হাজার থেকে ২২শ’ কাঁচা ইট থাকে। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ায় ভাটা মালিক যোয়াদ মন্ডল ৫জন স্কুল পড়–য়া শিশুকে কৌশলে তাড়িয়ে দেয়, এর ফাঁকে ৩জন শিশু ক্যামেরা বন্দি হয়। উক্ত ৩জন শিশু জানায়, এ পরিমাণ ইট উল্টিয়ে দিয়ে শুকানোর জন্য তাদের দেয়া হয় ২০ টাকা। অথচ এ কাজ করানোর জন্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক শ্রমিক নিয়োগ করা হলে তাকে দিতে হতো কমপক্ষে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অবুঝ শিশুটি পার্বতীপুর গ্রামের দিনমজুর রমজান আলীর পুত্র বলে জানাযায়। অপর দু-শিশু শ্রমিকের একজন আলম মিয়া (৭) পার্বতীপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র, সে অই এলাকার লাল মিয়ার পুত্র । অন্যজন বিশমাইলের এনামুল মিযার পুত্র রুবেল রানা (৯) বলে জানাযায়। সেও একই স্কুলের ছাত্র আলম মিয়ার সহপাঠী ।
একই রকম দৃশ্য দেখা যায়, উপজেলার একবারপুর মধ্যপাড়ার এম এস ব্রিকস্, চত্রা ইউনিয়নের অনিক ব্রিকস্ ফিল্ড্ এবং কাবিলপুর এস এল ব্রিকস্ ফিল্ডেও। এরকম অসংখ্য শিশু উপজেলার ৫১টি ইটভাটার অধিকাংশ গুলোতেই নিয়মিত কাজ করছে। অনেক শিশুকে দেখা গেছে ইটভাটার মূল প্লাটফরমের উপরিভাগেও কাজ করতে। তাছাড়া অনেককে চুল্লিতে কয়লা বা কাঠ দেয়ার কাজ করতেও দেখাগেছে, যা খুবই ঝুঁকিপুর্ণ। অনেক সময় তাদের মাটির গাদা তৈরির জন্য মাটিভর্তি ট্রলি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার কাজেও বাধ্য করা হয়।
এ ব্যাপারে জোয়াদ ব্রিকস্ ফিল্ডের এর স্বত্ত্বাধিকারী জোয়াদ মন্ডল বলেন, শিশুরা কাজ করছে তাতে কী হয়েছে। তারা কি খুব কষ্টদায়ক কোনো কাজে নিয়োজিত? গরিব মানুষ এখানে কাজ করার বিনিময়ে যতটুকু আয় করছে তাতে তাদের পরিবারের ব্যয় নির্বাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতাই তো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, এগুলো লেখালেখি আপনাদের বেকার হবে, কারন আমরা ভাটা মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তর, কাষ্টমস্, প্রশাসন সব কিছু ম্যানেজ করে চলি।
ব্রিকস্ ফিল্ডের মালিক হবিবর রহমান জানান, শিশুরা ইটভাটায় কাজ করে যে টাকা পায় তাতে তাদের পরিবারের উপকারই হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তাছাড়া শিশুরা তো এখানকার নিয়মিত শ্রমিক নয়। তাই এ ব্যাপারে কারো নাক গলানোর প্রয়োজন নেই।
এ ব্যাপারে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার টিএমএ মোমিন জানান, এ সংক্রান্ত কোন অভিযোগ আমাদের নিকট আসেনি। তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। বিশেষ করে শিশু শ্রম বিষয়ে।
রংপুর আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ছাদেকুজ্জামান এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, এটি আমাদের বিষয় নয় এটি কলকার খানা পরিদর্শন দপ্তরের বিষয়। অপরদিকে রংপুর বিভাগীয় কল কারখানা পরিদর্শন দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক সোমা রায় এর সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে, তাহার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।