“শনশন বাতাসের আওয়াজ”
(একটি পাঠ প্রতিক্রিয়া )
জয়িতা ভট্টাচার্য
বই_ কে তোমাকে ডেকে নিয়ে যায় বারে বারে
লেখক_তৌফিক জহুর
অন্তরীণ এইসব দিন,মলিন আবহ সৃষ্টি করে,শুরু করি পঠন পাঠন।হাতে এলো,আমার বাংলাদেশের ভাই তৌফিক জহুরের পাঠানো উপহার,তার কাব্যগ্রন্থ _
” কে তোমারে ডেকে নিয়ে যায় বারে বারে”( পুণ্ড্রবর্ধন),
বইটি আরো একবার পড়ার অবসর হলো।
উপহার পেতে ভালোবাসি,আর কবিতার বই হলে তো আরো ভালো।ভাইবোনের সম্পর্ক মানচিত্র বা ধর্মের বেড়াজাল টপকে জায়গা করে নেয় হৃদয় প্রদেশে।
ভাই তৌফিকের বইটি 2020 সালে একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে।
তরুণ কবি তৌফিকের এটি তৃতীয় কবিতার বই।রোমান্টিক মনের কবির এই বইয়ের কবিতাগুলিও সেই সাক্ষর রাখে।প্রকৃতিকে সে মিলিয়ে দেয় আবহমান মানবিক সম্পর্কের সঙ্গে।
” মাটির স্পর্শে বরং আলোড়ন জাগে শরীরে”
ভারি সুন্দর এইসব উচ্চারণ।জনারণ্যের মাঝে কবির মন সততই খোঁজে পরমা প্রকৃতিকে।স্নেহ ,প্রেম,দয়া প্রভৃতি অনুভূতির জন্য যেন মানবিক এক আবেদন ঝরে পড়ে কবিতাগুলিতে।
“যতদিন হায়াত ততদিন সম্পর্কের তাবিজ ঝুলিয়েছি হৃদয়ের মন্দিরে”
সনাতন কথা বলে।
মূলত গ্রামবাংলার যাপনচিত্র এঁকেছে তৌফিক তবু সে দাঁড়িয়ে আছে বাস্তবের মাটিতেই।তাই সে ভোলে না তার ধর্ম তার কর্তব্যবোধের কথাও।রবার্ট ফ্লস্টের (Robert Frost) কথা মনে পড়ে যায়।
“…..শন শন বাতাসের আওয়াজ চারিদিকে থমথম
কোদালের আওয়াজে কেটে যায় সাড়ে তিন হাত
আস্তে আস্তে তৈরি হয় প্রাচীন নকশার ঘর
একই গড়ন বাঁশ চাটাইয়ের ছাদ
আলোহীন অন্ধকার ঘর,নূরের বড় প্রয়োজন ”
কোনো অন্য ইঙ্গিতময়।
মানব মানবীর লৌকিক প্রেমের কবিতায় ভালো লেগেছে কোনো কোনো আন্তরিক উচ্চারণ, যেমন
“তোমার হাতে শরতের আকাশ আর কাশফুল
তোমাকে বলেই ফেললাম মেঘবালিকা….”মেঘবালিকাকে আরো অনেক কথা বলে রোমান্টিক কবি তৌফিক।
তবু সে ভোলে না আজকের পৃথিবীর বিপন্নতার কথাও,
“….ওহে ঘুমন্ত মানবজাতি!
অক্সিজেন ছাড়া পৃথিবী হয়ে যাবে ধূসর গন্ধহীন
পারবে না নিতে প্রিয়নারীর ঠোঁটের আদর
আমাজন পুড়ে যায়,…..”
তৌফিক জহুরের কবিতা আশা রাখে আগামী দিনের।তবে তাকে আরও গভীর ও পরিণত হতে হবে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী জায়গা করে নিতে।আশাকরি ভাই তৌফিক তার ডিকশন কে আরো উচ্চতর শিখরে নিয়ে যাবে।নতুন নিরীক্ষায় শব্দ চয়ন সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করবে।বইটি খুবই মনোগ্রাহী। তবে মাত্রা সম্পর্কে একটু সতর্ক হলে ভালো হয়।আর নতুন কবিতায় অন্তমিল বিশিষ্ট কবিতারও প্রত্যাশা থাকল।
কবি তৌফিক জহুর আরো লিখুক আরো পড়ি আর প্রাণ ভরে শুভেচ্ছা তো থাকলোই সামনের দীর্ঘ কাব্যপরিক্রমার জন্য।
“একটি চাহনি আমাকে টেনে নিয়ে যায়
সড়কের শেষ মাথায়, যেখানে চুপচাপ দাঁড়িয়ে
পাহারা দেয় পথ কুকুর আর রাতের প্রহরী।
আমি মাথা নিচু করে হাঁটতে থাকি,আমার পা
আটকে যায়, আমি থমকে দাঁড়াই
এই ভেবে
রাতের ভেতর ঘুমিয়ে আছে আমার শহর
জেগে আছে আমার চোখ।
এই চাঁদ জাগা রাতে দেখো ফুটেছে নাইট কুইন
বিদগ্ধ আমি,তুমি দূরে সরে থাকো স্পর্শহীন হয়ে”