মোঃ দেলোয়ার হোসেন:ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের থানাকান্দি গ্রামে বিবাদমান দুই পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলাকালে প্রতিপক্ষের একজনের পা কেটে হাতে নিয়ে অন্য পক্ষের লোকজনদেরকে উল্লাস ও ‘আনন্দ মিছিল’ করতে দেখা গেছে। এ সময় একজনকে বলতে শুনা যায় ‘শুধু হের পাওডা আনলি ক্যান, হের কাল্লাডা (মাথা) নিয়া আইলি না ক্যান? এই বলে চিৎকার করতে শোনা গেছে।
রবিবার সকালে থানাকান্দি গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে একদল মানুষকে পশুর মতো এমন হিংস্র আচরণ করতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের ঘটনায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২ জন দাঙ্গাবাজকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে আবারও সংঘর্ষের আশংকায় এলাকায় বর্তমানে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, এলাকায় গ্রাম্য আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান ও এলাকার সর্দার আবু কাউছার মোল্লার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিলো। ইতিমধ্যে এই দুই গ্রুপে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বহু হতাহতার ঘটনাও ঘটেছে।
এসব বিষয় নিয়ে এলাকায় আগামিকাল সোমবার সকাল ১০টায় পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে উভয়পক্ষের লোকজনকে নিয়ে একটি জরুরী বৈঠক হওয়ার কথা ছিলো।
কিন্তু এর আগেই আজ দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে ভয়ানক এক সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত লোক আহত হন। এ সময় একাধিক বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে কাউছার মোল্লার পক্ষের লোকজন প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমানের পক্ষের মোবারক মিয়া (৪৫) নামের এক ব্যক্তির একটি পা কেটে হাতে নিয়ে গ্রামে উল্লাস করতে দেখা যায়। এবং জয় বাংলা বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে দুই পক্ষের দুই শীর্ষ নেতার সাথে কথা বলতে গেলে উভয় পক্ষের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে স্থানীয় বাইশ মৌজা যুব সংগঠনের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, “কাল পু্লিশের উপস্থিতিতে যেই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটা হওয়ার কথা ছিলো, সেটি বানচাল করতেই পরিকল্পিতভাবে এই সংঘর্ষ হয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। তাই এই মুহূর্তে ই এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা উচিৎ।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, “চলমান করোনা মহা-দূর্যোগের সময় আজকে যেভাবে একজন মানুষের পা কেটে প্রতিপক্ষকে হাতে নিয়ে মানুষ রূপী কিছু নরপশুকে যেভাবে উল্লাস করতে দেখলাম, এরপর নিজেদেরকে আর কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের মানুষ বলে পরিচয় দিতে পারবো না।”
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন দুপুরে বলেন,”সংঘর্ষের পর ২২ জনকে আটক করা হয়েছে। আরও ধরা হচ্ছে। পরবর্তী যেকোন ঘটনা এড়াতে এলাকায় বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা হয়ে। “