বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ০৩:৪১ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম:
রবীন্দ্রনাথ মানুষের পরিশুদ্ধতার কথা ভাবতেন:                                        -খুলনায় মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ১৩৯টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে কুবিতে ‘উদ্ভূত পরিস্থিতি’ ও শিক্ষক সমিতির ‘দাবি দাওয়া’ নিয়ে পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিনেত্রী অদিতি রাও হায়দারি গল্পনির্ভর ও একাধিক ঐতিহাসিক চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চার হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে মাঠের লড়াই জমে উঠেছে নাটোরে বিভিন্ন উপজেলায় থামছেনা অবৈধ পুকুর খনন যাচ্ছে নিরীহ মানুষের পান পোশাক শিল্পের হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে উন্নীত হবে … বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী নিরপেক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে— পুলিশ সুপার সিইসি বলেন, মন্ত্রী-এমপিরা প্রভাব খাটালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

পুলিশ ভয় পেলে দেশ নির্ভয়ে রবে কিভাবে?

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ১০ মে, ২০২০, ১.১৬ এএম
  • ২৬৬ বার পঠিত

হৃদয়ে মিশে থাকা একটি নাম বাংলাদেশ পুলিশ। জানি, শত সহস্র অভিমান দেশবাসীর আমাদের নিয়ে। কিন্তু জানেন আমাদের অভিমান করে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার উপায় নেই। কারণ এই পোশাক গায়ে জড়ানোর সময় শপথ নিয়েছিলাম, দেশ মাতার জন্য দরকার হলে নিজের জীবন দিয়ে দেবো তবুও পিছপা হবো না। যত ভর্ৎসনা, তিরস্কার করুক না কেনো আমাদের মান অভিমান থাকতে নেই। আমাদের থাকতে নেই প্রতিবাদ করে ডিউটি অবহেলা করার আবদার। কারণ আমরা যে পুলিশ।

চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি আমাদের প্রাণপ্রিয় পুলিশ ভাইয়েরা প্রতিনিয়ত হাসিমুখে ঝুঁকিপূর্ণ পথে জীবনের মোহ-মায়া ত্যাগ করে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশ নামক একটি ফুল আর তার পাপড়িগুলো বাঁচানোর জন্য। জানেন এত কিছুর পরেও বুক ভরে ওঠে এক সমুদ্র গর্বে। কয়জনের সৌভাগ্য হয় দেশকে এই ক্রান্তিকাল থেকে টেনে তোলার? কয়জনের সৌভাগ্য হয় দেশকে প্রতিটি মুহুর্ত আগলে রাখার? আমি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রোটেকশন বিভাগে অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হিসেবে দায়িত্বরত। দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়, তা আমার সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশ মেনে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছি।

দেশের এই ক্রান্তিকালের শুরু থেকেই পুলিশের কাজের পরিধি আরও বেড়ে গেছে। সেই কাজের ফিরিস্তি আর নাইবা দিলাম। প্রতিদিন দেখতে পাচ্ছি করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। নিরাপদ থাকার জন্য সবাই ঘরবন্দি থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু ‘নিরাপদ’ শব্দটা পুলিশ নিজের জন্য প্রযোজ্য না রেখে অন্যের নিরাপত্তায় কাজ করে যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ অনেক পুলিশ সদস্য ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন। শহীদও হয়েছেন ছয়জন। আমাদের পাশাপাশি করোনার বিরুদ্ধে চিকিৎসকরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তারা জানছেন না কে আক্রান্ত? তেমননি পুলিশ ও জানেনা কে আক্রান্ত আর কে সুস্থ!

ঢাকা রেঞ্জ ডিআইজি প্রিয় হাবিবুর রহমান স্যারের একটা কথা মনে পড়ে গেল। স্যার বলেন- ‘চিকিৎসকরা সরাসরি দৃশ্যমান শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। আর পুলিশ সরাসরি যুদ্ধ করছে কিন্তু সেটা অদৃশ্য শত্রুর সঙ্গে। কেউ জানে না, কে আক্রান্ত।’ প্রটেকশন বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমার সহকর্মী ইন্সপেক্টর সারওয়ার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে সংখ্যা বাড়তে থাকে, আমার সহকর্মীদের কথা ভেবে খুব খারাপ লাগত। তবে আমার সরাসরি করোনা যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সুযোগ কম ছিল। এতে হয়ত আমার শুভাকাঙক্ষীরা খুশি হচ্ছিল এই ভেবে, যে আমি বিপদ থেকে দূরে আছি। কিন্তু আমার মনের ভেতরে প্রতিনিয়ত যেন একটা জিনিস কাজ করছিল, যেন একটা সুযোগ খুঁজছিল করোনা আক্রান্ত পুলিশদের নিয়ে সম্মুখভাগে থেকে কিছু করার। সৃষ্টিকর্তার কি কুদরত আমি সেই সুযোগ পেয়ে গেলাম।

রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে রোগীর জায়গা হচ্ছিল না। তাই ‘ট্রাফিক বেরাক’ খালি করে সেখানে বাড়তি সুবিধার ব্যবস্থা করা হলো। ডিএমপির পুলিশ কমিশনার মহোদয় আমাকে সমন্বয়ক করে সহকারী পুলিশ কমিশনারে (এসি) মহিউদ্দিনসহ আরও দশজনকে দায়িত্ব দিলেন সার্বিক ব্যবস্থাপনার। হেডকোয়ার্টারের যুগ্ম কমিশনার শাফিউর রহমান স্যার এবং অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) হেডকোয়ার্টার ফয়জুর রহমান স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। অন্যদিকে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ স্যার আমাদের (পুলিশের) কথা ভেবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে আলাদা আরও একটা হাসপাতাল (ইমপালস হাসপাতাল) ভাড়া নিয়েছেন। সেখানেও করোনা যুদ্ধের আয়োজন হচ্ছে। নিজ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আইজিপি স্যারের যে আন্তরিকতা, মমতা, দায়িত্ববোধ তা অন্যত্র একদম বিরল।

ঢাকায় পরিবারের কাছেও থাকি না, আলাদা থাকছি পরিবারের কথা ভেবে। বাচ্চারা আমায় না দেখে কান্নাকাটি করে। পরিস্থিতি সঠিকভাবে আঁচ করতে পারলাম এখানে আসার পর। পুলিশের অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। টেস্ট করাচ্ছেন, ভর্তি হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত থাকতে হচ্ছে তাদের সঙ্গে। ক্রমেই প্রতিদিনই সংখ্যা বাড়ছে। এরমধ্যে কেউ আবার সুস্থ হয়ে ডিউটিতে ফিরছেন। করোনা আক্রান্ত হলে সাধারণ রোগীদের বেশিরভাগ আতঙ্কিত দেখা যায়। কিন্তু পুলিশ সদস্যদের মধ্যে উল্টোটা দেখছি। এক অদৃশ্য উন্মাদনায় যেন তারা হাসি মুখে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছিল।

এক পুলিশ সদস্যকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি ভয় পাচ্ছো? সে হাস্যোজ্জ্বল কন্ঠে বলল- ‘স্যার আমাদের ভয় পেতে নেই। আমরা ভয় পেলে তাহলে দেশ নির্ভয়ে রবে কিভাবে!’ আজ সুস্থ হবার পর একজনকে বললাম এখন কোথায় যাবেন? জবাবে উত্তর দিল, ‘স্যার আবার নামবো করোনা যুদ্ধে’। চোখ দুটো যেন ভিজে উঠল আমার। তড়িঘড়ি করে সেখান থেকে সরে এলাম। ভাবতে লাগলাম চাকরি জীবন নিয়ে। আজ বড় গর্ব হয় এই ভেবে, আজ যাদের টাকায় আমরা পুলিশ, তাদের নিরাপদ রাখতে আজ আমরা বদ্ধপরিকর। জ্বি হ্যাঁ, আমি সেই পুলিশ। আমরা সেই গর্বিত পুলিশ।

লেখক: অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার, প্রটেকশন বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, ডিএমপি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

এই ক্যাটাগরীর আরো খবর

পুরাতন খবর

SatSunMonTueWedThuFri
    123
11121314151617
18192021222324
25262728293031
       
     12
24252627282930
       
2930     
       
    123
       
    123
25262728   
       
     12
31      
   1234
262728    
       
  12345
2728     
       
   1234
       
     12
31      
1234567
891011121314
15161718192021
2930     
       
    123
11121314151617
       
  12345
20212223242526
27282930   
       
      1
2345678
23242526272829
3031     
      1
       
293031    
       
     12
10111213141516
       
  12345
       
2930     
       
    123
18192021222324
25262728293031
       
28293031   
       
      1
16171819202122
30      
   1234
       
14151617181920
282930    
       
     12
31      
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
       
© All rights reserved © MKProtidin.Com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com