লিটন সরকার ॥ আগামী ২১ মে আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত রবিবার (০২ মে) প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে ৪ হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রচার প্রচারনা চলছে বেশ জোরে শোরে। এক কথায় বলতে গেলে এ ৪ প্রার্থীর ভোটের মাঠের লড়াই বেশ জমে উঠেছে। এবারের নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো অংশগ্রহণ না করায়, অংশগ্রহণকারী প্রার্থীর অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা। আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম চিংড়ী মাছ প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. শহিদুল ইসলাম পিন্টু আনারস প্রতীক, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম ঘোড়া প্রতীক এবং শিল্পপতি আলহাজ্ব গাউসুল হোসেন রাজ দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে মাঠের লড়াইয়ে নেমেছেন। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোট ও দোয়া চেয়ে এ চার প্রার্থীর পোস্টার ও লিফলেটে উপজেলার ৯৯টি ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছেয়ে গেছে। এসব প্রার্থীর অধিকাংশই প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় গণসংযোগ, উঠান বৈঠক, নির্বাচনী সভা করে চলেছেন। ওয়াজ মাহফিল, জানাজা নামাজ, পূজা-পার্বন, শ্রাদ্ধানুষ্ঠান, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ অনুরুপ বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহনের মাধ্যমে ভোটারদের আস্থাভাজন হওয়ার চেষ্টা করছেন। উপজেলাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ আর নিজের পক্ষে অধিক জনসমর্থন প্রদর্শন করতে মাঝে মধ্যে কোন কোন প্রার্থীর পক্ষে মোটরসাইকেল বহরযোগে গণসংযোগ করতেও দেখা যাচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন চায়ের স্টল, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় আর রাজনীতি সচেতন মানুষের মুখে মুখেও চলছে আগামী ২১মে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনা। কখনো কখনো আবার চায়ের আড্ডায় বা রাজনৈতিক পরিচয় এর সূত্র ধরে প্রার্থীদের ভালো-মন্দ দিক, জনসেবা, যোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, এ নির্বাচনে যে ৪ প্রার্থী উপজেলা চেয়াম্যান পদে নির্বাচন করছেন তার মধ্যে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব এবিএম মোস্তাকিম দীর্ঘ ১৫ বছর সুনামের সাথে উপজেলা চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। নির্বাচিত হয়ে তিনি এলাকায় বেশ কিছু উন্নয়ন করেছেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে উপজেলার রাস্তাঘাট, মাঠ ভরাট, গেট নির্মাণ, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরঞ্জামাদি প্রদান, বিভিন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ/সংস্কার, সোলার সিস্টেম বিতরণ, স্ট্রীট লাইট স্থাপন, রেইন ওয়াটার হার্বেস্টিং প্লান্ট স্থাপন, সেলাই মেশিন বিতরণ, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, হতদরিদ্রদের জন্য সরকারী ঘর নির্মাণ, মসজিদ-মন্দির সংস্কার/নির্মাণ কাজে সহযোগিতা করা, গরীব-দুঃস্থদের বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা করাসহ উপজেলার নানা উন্নয়নমূলক কাজ করে চলেছেন। আগামীতে তিনি চিংড়ী মাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হতে পারলে উপজেলার সকল অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করবেন বলে ভোটারদের কাছে ইতিমধ্যে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শহিদুল ইসলাম পিন্টু বিগত সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক এর দ্বায়িত্ব পালনকালে তিনি সদর ইউনিয়নের কালভার্ট, রাস্তা, মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান, মন্দির, শ্মশানঘাটের উন্নয়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন করেছিলেন। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও তিনি আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরে গেলেও তার বেশ জনপ্রিয়তা আছে। আগামীতে তিনি নির্বাচিত হতে পারলে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা ও গৃহিত কার্যক্রম মাথায় নিয়ে উপজেলাকে ঢেলে সাজাবেন বলে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পথ সভায় ঘোষনা দিয়েছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক ও খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের তিনবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এসএম শাহনেওয়াজ ডালিম খাজরা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালনকালে তার ইউনিয়নে বিভিন্ন উন্নয়ন করেছেন। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এর পদ থেকে পদত্যাগ করে প্রথমবারের মত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে ইতিমধ্যে অনেক ভোটারের মন জয় করে নিয়েছেন। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতে পারলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারাকে অব্যহত রাখবেন বলে ইতিমধ্যে বিভিন্নস্থানে মতবিনিময়কালে তিনি ঘোষনা দিয়েছেন। এছাড়াও বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব গাওছুল হোসেন রাজ একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তার সুনাম থাকলেও এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দোয়াত কলম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রথমবারের মত প্রার্থী হয়েছেন। এ নির্বাচন দিয়েই তিনি নতুন জনপ্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখছেন। তিনি বিগত দিনে অসহায় মানুষের পাশে থেকে কাজ করেছেন। তিনি নির্বাচিত হতে পারলে সকলকে সাথে নিয়ে আশাশুনি উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়তে চান এমন ঘোষনা তিনি ইতিমধ্যে দিয়েছেন। নির্বাচন বিষয়ে ভোটারদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যে চারজন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন তাদের মধ্যে যিনি বিপদে আপদে আশাশুনি উপজেলাবাসীর পাশে থাকবেন ও এলাকার উন্নয়নে নিজেকে সর্বোচ্চভাবে আত্মনিয়োগ করবেন তাকেই এবারের নির্বাচনে ভোট দিবেন। এদিকে এ নির্বাচনে মাঠের লড়াইয়ে ৪ জন প্রার্থী সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও তারা চারজনই জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। এখন দেখার বিষয় আগামী ২১ মে (মঙ্গলবার) আশাশুনি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহন শেষে ৪ প্রার্থীর মধ্যে কোন প্রার্থী বিজয়ের শেষ হাসিটা হাসতে পারেন।