জীবনে সুস্থতা যেমন বড়ো একটা নেয়ামত তেমনি অসুস্থতায় নেমে আসে হতাশার দীর্ঘশ্বাস। তাই সঠিকভাবে ভরপুর জীবনের জন্য সুস্থ থাকাটা বাঞ্ছনীয়। কিন্তু এমন একটি সময়েই তাবৎ বিশ্বে চলছে স্মরণকালের ভয়াবহতম প্রাণঘাতী করোনার” মহাদুর্যোগের মহারণ। করোনার করুণা সহজে কেউ পাচ্ছে না, দোর্দন্ড প্রতাপে ভৌগোলিক রাজনৈতিক সীমা রেখাকে অতিক্রম করে গ্রাস করে চলেছে রাষ্ট্রের পর রাষ্ট্র, অঞ্চলের পর অঞ্চল। বিজ্ঞান- গবেষণা, বুদ্ধি – বিবেচনা, চিন্তা – চেতনা সবকিছুকেই হতবিহবল করে দিয়ে সে তার বিষধর- বিস্তার সুরক্ষিত করে চলেছে। সময়ের সাহসী যোদ্ধা আমাদের চিকিৎসকেরা।
আমাদের দেশে ও কিছু ডাক্তার আছে যারা সমস্ত রকম সামাজিক, অর্থনৈতিক, মানসিক প্রতিকূলতাকে একে একে জয় করে নীরবে নিভৃতে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে টিকে থাকার জন্য জীবন যুদ্ধটা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাস দেশে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কাজ যেন বেড়ে গেছে অনেকগুণ। দিন-রাত এক করে কাজ করে যাচ্ছেন তারা, কোনো প্রকার অভিযোগ ছাড়াই। হ্যাঁ, আমাদের ডাক্তার ও নার্সদের কথা বলছি। তারা সত্যিই অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন, শুধু আমাদের করোনা নামক মহামারী থেকে সুরক্ষিত রাখতে।
ডাক্তার ও নার্সদের সময় কাটে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কোভিড-১৯ রোগীদের সঙ্গে। আবার কিছু করোনা রোগী, জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন এবং বেঁচে থাকতে চাচ্ছেন, ডাক্তার ও নার্সরা মিলে তাদের বেঁচে থাকার যুদ্ধে সহায়তা করছে। ডাক্তার ও নার্সদের কে অনেকেই বলেন, এই যে প্রতিদিন করোনা রোগীদের মাঝে যাচ্ছেন নিজেও তো আক্রান্ত হতে পারেন। অনেক ডাক্তারও তো মারা যাচ্ছেন— এসব মনে হয় না? ডাক্তার ও নার্সরা বলে, আমরা তো একটা যুদ্ধের মাঝে আছি। সৈনিক তো যুদ্ধে যেতে ভয় পায় না। ডাক্তার হিসেবে মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়াই তো আমাদের কাজ। আমরা সেই কাজই করছি।
কলামিস্ট হিসাবে আমার পর্যবেক্ষণ মতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি অনুমান করা খুব কঠিন। প্রতিদিন সংখ্যা বাড়ছে। আরও বেশি পরীক্ষা করলে সংখ্যা আরও বাড়বে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।
কোনো কিছুর প্রাপ্তির আশায় নয় বরং দায়িত্ববোধ ও মানবসেবার ব্রত থেকেই করোনা সংকটের এ সময়ে রোগীর পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে এ চিকিৎসকদেরই হতে হয় বঞ্চনার শিকার, শুনতে হয় নানা কটাক্ষ।
আবার ব্যক্তিগত মতে, বিপদের সময় বন্ধু হয়ে পাশে থাকা চিকিৎসকদের মনোবল বাড়াতে শুধু আর্থিক প্রণোদনা নয়, নিশ্চিত করতে হবে সামাজিক সুরক্ষা।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জীবন বাঁচানোর প্রতিদান হয়তো মিলবে না কোনো কিছুতেই। তবে কিছুটা কৃতজ্ঞতা, কিছুটা ধন্যবাদ জানাতে কেউ ভুল করবেন না।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারিকালে সম্মুখসমরের যোদ্ধা বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও। করোনা পজেটিভ স্বজনকে নিয়ে স্বজনই যখন আতঙ্কগ্রস্থ তখন এগিয়ে আসছেন চিকিৎসক। আছে পরিবারের পিছুটান, মায়ার বন্ধন। কিন্তু সবার আগে মহান ব্রত, সবার আগে মানব সেবা।
তবে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া মানুষগুলোকে কখনো আমরা যেন অসম্মান না করি।
এই দুঃসময়ে আমরা যেন সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোবল ধরে রাখি।
সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক চিকিৎসকই আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। অনেকের নাম যুক্ত হচ্ছে মৃতের তালিকায়ও।
সব ঋণ যেমন শোধ করা নয় তেমন সব কৃতজ্ঞতাও হয়তো ঢাকঢোল পিটিয়ে জানানোর মতো নয়। তবে জীবনের বিরুদ্ধে অদম্য লড়ে যাওয়া চিকিৎসক ও চিকিৎসা কর্মীদের অন্তরের অন্তরস্থল থেকে জানানো যেতে পারে শ্রদ্ধা ভালোবাসা।
বাংলাদেশ করোনা ভাইরাস মহামারী নিয়ে লড়েছে। লড়ছেন চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। এই লড়াইয়ের প্রথম সারিতে থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবা কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর সৃজনশীল উপায়ও বের করে ফেলছেন সাধারণ মানুষ।
মানবতার জননী মাননীয় প্রধান মন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এবং সকল চিকিৎসক বীরদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন। মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বারবার চিকিৎসক দের বলছেন, আমি সব সময় আছি আপনাদের সাথে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন বিশ্বজুড়ে মারাত্মক সংক্রামক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একেবারে সামনের সারিতে রয়েছেন চিকিৎসকরা।
আজকের এ জাতীয় দুর্যোগে যেভাবে মানুষের বিপদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়িয়েছে দেশের চিকিৎসক সমাজ, জীবন পণ করে মানুষের জন্য লড়ে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি বিন¤্র কৃতজ্ঞতা। তারাই আজকের যুদ্ধাবস্থার হিরো। এসব চিকিৎসাবীরদের প্রতি আপনার মানসিক প্রেরণা, একটু সহযোগিতা ও শুভ কামনা হয়তো ¤্রয়িমান প্রাণে আশার আলো সঞ্চার করবে।
করোনাকে রুখতে বিশ্বব্যাপী যে শ্রেণিটি সবার সামনে থেকে যুদ্ধ করছে, সে শ্রেণির মানুষগুলো সবার সামনে থেকে বন্দুকবিহীন নিরস্ত্র ঝাঁপিয়ে পড়ছে মৃত্যুর মুখে, যুদ্ধ করছে লাখো মুখে হাসি ফোটানোর জন্য, সে শ্রেণির মানুষগুলোই আজ সবচেয়ে বেশি বিপদে। দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করছে যারা, যাদের নাওয়া, খাওয়া, ঘুম সবই ভেস্তে গেল এ নতুন নীরব যুদ্ধে, সেই যোদ্ধাদের জীবনই আজ হুমকির মুখে। এ যুদ্ধ কঠিন যুদ্ধ। পৃথিবীতে বিরল। এ যুদ্ধ পালাবার নয়। এ যুদ্ধে জয়ী হতেই হবে। আমি ডাক্তারদের বলতে চাই, আপনারা একা নন, সারাদেশ আপনাদের পাশে আছে, শুভকামনা আপনাদের জন্য।
মোঃ কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক
মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন ।