লিবিয়ায় গত ২৮ মে ২০২০ খ্রি. তারিখে ২৬ বাংলাদেশী নাগরিকের হত্যাকান্ডের বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার)। গত ০১ জুন ২০২০ খ্রিঃ বিকালে এ বিষয়ে আয়োজিত এক জরুরী ভিডিও কনফারেন্সে আইজিপি বলেন, যেভাবে আমাদের দেশের মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না। জরুরী এই ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ পুলিশ সকল ইউনিট প্রধানসহ পুলিশের সকল উর্দ্ধতন কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেছেন। পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সকল উর্ধ্বতন কর্মকর্তার উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, আমাদের দেশের মানুষকে এভাবে অসহায়ভাবে মৃত্যু বরণ করতে হবে, সেই অবস্থানে এখন বাংলাদেশ নেই। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্যাগী ও মোহনীয় নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ আত্ম—মর্যাদায় বলীয়ান এক অন্য বাংলাদেশ। অর্থ উপার্জন ও জীবিকার জন্য দুর্গম ও অবৈধ পথে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমানোর কোনো কারনই নেই। এই বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের একটি উন্নয়ণশীল দেশ। অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছি আমরা।
যারা আমাদের দেশের নাগরিকদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে বিদেশে নিয়েছে, যাদের কারনে এই নির্মম মৃত্যু ঘটেছে তাদের একজনকেও ছাড় দেয়া হবে না। তন্ন তন্ন করে খুঁজে বের করে এই চক্রের প্রত্যেক সদস্যকে আইনী প্রক্রিয়ায় কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে যেনো ভবিষ্যতে কোনো বাংলাদেশীকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে, তার জীবন নিয়ে খেলার দুঃসাহস কোনো মানুষ দেখাতে না পারে। দেশে ও বিদেশে যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেনো — এদের প্রত্যেককে খুঁজে বের করা হবে।
স্বজনদেরকে যারা ভাই বোন পিতা মাতা হারা করেছে তাদের কোনো ক্ষমা নেই। নেয়া হবে কঠোর আইনী ব্যবস্থা। স্বজনদের কান্নার দাগ শুকানোর আগেই, এই অপরাধী চক্রকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক আইনী পদক্ষেপ নেয়ার কঠোর নির্দেশ দেন আইজিপি। অত্যন্ত কঠোর নির্দেশে আইজিপি বলেন, “এদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার পর আমি দ্বিতীয়বার তোমাদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলবো, এর আগে নয়।”
আইজিপি’র কঠোর নির্দেশে, তাৎক্ষনিকভাবে র্যাব, ডিএমপি, সিআইডি, পিবিআইসহ বাংলাদেশ পুলিশের মাঠ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সকল ইউনিট একযোগে অভিযানে নামে। এরই মধ্যে এ বিষয়ে ০৭ জুন ২০২০ খ্রি. পর্যন্ত মোট ২২ টি মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামীদেরকে চিহ্নিত করে আইজিপি’র নির্দেশে গ্রেফতারে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। ইতিমধ্যেই ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট। সংশ্লিষ্ট অন্যদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অবৈধ প্রত্যেক মানব পাচারকারীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের এই অভিযান চলমান থাকবে।
উল্লেখ্য, এভাবে বিদেশ গমণকারী বাংলাদেশিগণ সাধারনত বৈধ উপায়ে, বৈধ পাসপোর্টে, বৈধ ট্যুরিস্ট বা অন্যান্য ভিসায় প্রথমে ভারত বা অন্য কোনো দেশে গমণ করেন। এ সকল ক্ষেত্রে, উপযুক্ত ও বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট প্রদর্শণ করেই তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করে থাকেন। তারপর, দালাল ও পাচারকারীদের সহযোগিতায় ভারত বা সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে নানা উপায়ে তারা লিবিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান।
এছাড়া, কখনও কখনও দালালের সহযোগিতায় ভিন্ন উপায়ে সীমান্ত পাড়ি দেন কেউ কেউ। বিদেশ গমণের পন্থা যাই হোক, সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষ বা ব্যক্তির কাছ থেকে মানব পাচারের কোনো অভিযোগ পেলে পুলিশ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যথানিয়মে আসামী গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরণ করে এবং যথা নিয়মেই তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন বিচারিক কার্যক্রমের জন্য আদালতে প্রেরণ করে থাকে।