উজ্জ্বল রায়, নড়াইল জেলা প্রতিনিধিঃ
মাদকের এক মামলায় রায়ে এক বছরের সাজা হয়েছিল নড়াইলের নড়াগাতী থানার নলামারা এলাকার বাসিন্দা মো:বালাম মিনা, তবে আদালত তাঁকে কারাগারে না পাঠিয়ে সংশোধনের জন্য ব্যতিক্রমী আদেশ দেন,এবং একজন প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে নিজ বাড়িতে থেকে ওই সাজা ভোগের আদেশ দেন।
সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ায় আদালতের আদেশে মুক্ত হয়েছেন বালাম মিনা,নড়াইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঙ্গলবার সকালে এই আদেশ দিয়েছেন।
চূড়ান্তভাবে মুক্ত হয়ে খুশিতে হত বাক ইজিবাইক শ্রমিক বালাম মিনা।
বালাম মিনাকে দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স ১৯৬০’এর ৪ ধারা মোতাবেক ১বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল।
আদালতের বিচারকের আদেশে জেলা প্রবেশন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থেকে সাজাভোগ করেন,বালাম মিনা।
বালাম মিনা জানান,আমার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মাদক সেবনের দায়ে একটি মামলা হয়,এই মামলায় আমার এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট,কিন্তু আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়নি।
বিচারক আমাকে সংশোধনের জন্য জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা বাপ্পী কুমার সাহার তত্ত্বাবধানে নিজ বাড়িতে থেকে সাজাভোগের আদেশ দেন।
পুরো এক বছরই নির্ধারিত সব শর্ত মেনে চলি,ফলে প্রবেশন কর্মকর্তা ভার্চ্যুয়াল আদালতে ওই আমাকে চূড়ান্তভাবে মুক্তি দিতে আবেদন করেন।
এই আবেদনের শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার চূড়ান্তভাবে মুক্তি দেন বিচারক আমাকে।
একই সঙ্গে প্রবেশন কর্মকর্তা বাপ্পী কুমার সাহা বালাম মিনাকে একটি জায়নামাজ একটি টুপি ও ফুলেল তোড়া উপহার দেন।
‘দ্য প্রবেশন অব অফেন্ডার্স অরডিন্যান্স ১৯৬০’এর ৪ ধারা মোতাবেক নড়াইল জেলায় বিচারিক আদালতের এটিই প্রথম কোনো মামলার সফল প্রয়োগ বলে উল্লেখ করেন আদালতের একাধীক ব্যক্তী।
এই আইনের ৪ ধারা অনুযায়ী,আগে দণ্ডিত হননি এমন কোনো অপরাধী অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে আদালত অপরাধীর বয়স,স্বভাব-চরিত্র,পরিচয় অথবা শারীরিক বা মানসিক অবস্থা এবং অপরাধের ধরন অথবা অপরাধ সংঘটনে শাস্তি লাঘবকারী পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক যদি মনে করেন যে দণ্ড প্রদান অসমীচীন এবং প্রবেশনের আদেশ প্রদান করা যথাযথ নয়,তাহলে আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে সতর্ক করত অপরাধীকে অব্যাহতি দিতে পারেন অথবা উপযুক্ত মনে করলে আদেশে বিবৃত সময় হতে অনধিক এক বছর সময়ের জন্য কোনো অপরাধ না করার এবং সদাচরণে থাকার শর্তে জামিনদারসহ বা জামিনদার ছাড়া মুচলেকা প্রদানে বিমুক্ত হওয়ার আদেশ দিতে পারেন।
জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা বাপ্পী কুমার সাহা বলেন,নিজ বাড়িতে সাজা খাটার বিষয়ে আসামির শর্ত ছিল,বালাম মিনার এই সময়ের মধ্যে জেলার বাইরে যেতে পারবেন না।
পরিবার, প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকবেন,আর কোনো অপরাধে জড়াবেন না।
নিয়মিত প্রবেশন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন,এবং তিনি সব শর্ত মেনেছেন।
তাঁর পরিবার,প্রতিবেশী সবাই বলেছেন,তিনি সংশোধন হয়েছেন,সে পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন এবং মাদক কে ঘৃণা করেন,তাই আদালত তাঁকে চূড়ান্তভাবে মুক্ত করে দিয়েছেন এবং নড়াইলে প্রবেশন কেস মোট ৪২টি প্রবেশন সময় শেষ করে এই প্রথম নড়াইলে মুক্তি পেয়েছেন বালাম মিনা নামের এক ব্যক্তী বলে জানান তিনি।