বাংলাদেশ আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্মলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান, গণ টেলিভিশনের চেয়ারম্যান, দৈনিক সময় পত্রিকার সম্পাদক, বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ আনিছুর রহমান আওয়ামী স্বাধীনতা প্রজন্মলীগ, খুলনা জেলা কর্তৃক আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন আমাদের আবেগ,অনুভুতির নাম শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ৭৫ সালের পরে আমরা যারা জন্মেছি শেখ হাসিনা আমাদের মা হয়, মা। শেখ হাসিনা আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বিকেলে শেখ হাসিনা অনেকটা ছত্রভঙ্গ আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দিল্লি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। সেই বিকেলটা ছিল বেশ ঝোড়ো ও বৃষ্টিস্নাত। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে স্বাগত জানাতে সেদিন ঢাকার রাজপথে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল। এমনটি দেখা গিয়েছিল শুধু পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন। শেখ হাসিনাকে স্বদেশের মাটিতে স্বাগত জানাতে ঢাকায় যে জনসমুদ্র সৃষ্টি হয়েছিল, তা দেখে এটি মনে হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল যে এই দেশের মানুষ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘদিন তাঁর রক্তের উত্তরাধিকারের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষা করেছে। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে দেশ থেকে বিদেশ যাওয়ার সময় শেখ হাসিনার সব ছিল। ফিরলেন একাকী, বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার নিয়ে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাতে আসা লাখো মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে বুঝলেন, আগামী দিনে এই নিঃস্বার্থ লাখো মানুষই হবে তাঁর পথচলার অনুপ্রেরণা।
ঢাকায় তখন শেখ হাসিনার থাকার জন্য নিজের একচিলতে আশ্রয় নেই। উঠলেন ফুফুর বাসায়। স্বজন হারানোর প্রাথমিক ধাক্কাটা সামলে নিয়ে নেমে পড়লেন দল গোছানোর কাজে।
শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে এবং দূরদর্শিতার ফলে অনেক চড়াই-উতরাই আর ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দীর্ঘ একুশ বছর পর যখন আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলো, তখন রাতারাতি ঘরে ঘরে আওয়ামী লীগ আর অঙ্গসংগঠনের জন্ম হলো, যাদের বেশির ভাগই ছিল সুযোগসন্ধানী। এদের চরিত্র হচ্ছে উইপোকার মতো। এই উইপোকাদের দাপটে প্রকৃত কর্মীরা এখন অনেকটা কোণঠাসা। এই উইপোকারা এখন বেশ সক্রিয়; এবং এই সব মোকাবেলা করেই একজন শেখ হাসিনা উজান স্রোতে নৌকা ঠেলে বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে একটি নতুন পরিচয় দিয়েছেন, যাকে বলে আইডেন্টিটি।
তিনি বলেন ,শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ঠিক, তবে তাঁকে ঘিরে শঙ্কাও কম নয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তিনি বিদেশে থাকার কারণে বেঁচে গিয়েছিলেন, তবে সেদিন তাঁর জন্য যে বুলেট বরাদ্দ ছিল তা তাঁকে এখনো তাড়া করছে। এ পর্যন্ত তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। ২০০৪ সালের ২৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় সমাবেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যা মিশন। দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবন দিয়ে শেখ হাসিনাকে সেদিন রক্ষা করেছে। সেই গ্রেনেড হামলার কুশীলবরা এখনো বাংলাদেশ, লন্ডন, পাকিস্তান, দুবাইসহ একাধিক দেশে সক্রিয়। দলের ভেতরে যেসব উইপোকা বাসা বেঁধেছে, তারা সময়মতো দলের সর্বনাশ করার জন্য সদা প্রস্তুত। সামনে জাতীয় নির্বাচন এলে তাদের অনেকের মুখোশ খুলে যাবে। গত এক বছরে যেসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা হেরেছে, তারা যত না প্রতিপক্ষের কাছে হেরেছে, তার চেয়ে পরাজয়ের পেছনে নিজ দলের এই উইপোকাদের অবদান অনেক বেশি। পরাজয়ের পর প্রতিবার বলা হয়, পরাজয়ের কারণ খতিয়ে দেখা হবে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। যার ফলে আগের মতো পরাজয় আরো এক স্থানে পুনরাবৃত্তি হয়। এই সত্যটা অনেকে উপলব্ধি করে না যে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হলে তাকে পরাজিত করা এখনো কঠিন। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর দলের হাল ধরে আওয়ামী লীগকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা অনাদি কাল ধরে আওয়ামী লীগের কাণ্ডারি থাকবেন না। ঠিক করতে হবে তাঁর হাতের বইঠা কে তুলে নেবেন। এ ক্ষেত্রে আবেগ দিয়ে কাজ হবে না; যা হবে তা বাস্তবতার নিরিখে।
আর এক বছরের কম সময়ে জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের দল হিসেবে প্রস্তুতি শুরুর এখনই সময়। এটি মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্য সময়মতো বহুমাত্রিক জোট হবে। সেখানে আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনার বিরোধীরা তো থাকবেই, সঙ্গে যুক্ত হবে দেশের বেশ কিছু শক্তিশালী মিডিয়া, পরিচিত ‘নিরপেক্ষ’ সুধীজন আর অতি পরিচিত কিছু আন্তর্জাতিক শক্তি। এই সব মোকাবেলা করার দায়িত্ব এককভাবে একজন শেখ হাসিনার ওপর ছেড়ে দিলে তা হবে মহা অন্যায়। দলের নেতাকর্মীদের মনে রাখতে হবে, এই একজন শেখ হাসিনাকে ঘিরেই দেশের কোটি কোটি মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখে; কারণ তিনি তাদের একটি পরিচয় দিয়েছেন। পিতার মতো শেখ হাসিনার পদচিহ্নও এই দেশে হাজার বছর থাকুক—এই প্রত্যাশাই করি।