মাজহারুল রাসেল : সোনারগাঁ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় রমজান উপলক্ষে ও প্রচন্ড গরমে বাড়ছে ডাবের কদর। সচেতন মানুষ ইফতারের সময় পানির তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বেছে নিচ্ছেন ডাবের পানি। তৃষ্ণা পিপাসুদের মতে, পৃথিবীতে যত পানীয় পাওয়া যায় তার মধ্যে ডাবের পানিই সবচেয়ে নিরাপদ। তাই অনেকে ইফতারের সময় কোমল পানীয়র বদলেও তারা বেছে নেন ডাবের পানি।
ডাব বিক্রেতা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে নারকেল গাছ মালিকের কাছ থেকে ডাব ক্রয় করেন। কখনো গাছ থেকে নিজেরা আবার কখনো বা শ্রমিক দিয়ে ডাব পাড়ানো হয়। এর পর ভ্যানে করে বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ার সাথে কিছু মানুষ জড়িত। বর্তমানে অনেকেই এখন বেছে নিচ্ছেন ডাব বিক্রির পেশা। ডাবের উপর নির্ভর করে সংসার চলছে অনেকেরই। উপজেলা ১০ টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কিছু দূর পরপরই চোখে পড়ে ভ্যানে করে ডাব বিক্রির দৃশ্য।
আবার কোথায়ও ভাসমান ডাবের দোকানে দেখা গেছে, ক্রেতার ডাব পছন্দ এবং দরদাম ঠিক হলে বিক্রেতা দা দিয়ে একপাশে কেটে ফুটো করে দেন। এই প্রচন্ড গরমে যাঁরা রোজা আছে তারা তাদের পছন্দ মতো ডাব ক্রয় করে বাড়িতে নিয়ে যায়। আর যারা রোজা নেই তারা বিক্রেতার কাছে থেকে ডাবের মুখ কেটে ছোট পাইপ দিয়ে বা মুখ লাগিয়ে ক্রেতা পানি পান করেন। আকার ভেদে একেকটি ডাবের দাম ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত হয়।
সোনারগাঁ উপজেলা সরকারি হাসপাতাল এর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা বলেন, ‘ডাবের পানি প্রাকৃতিক পানীয়। এতে প্রচুর পটাশিয়াম আছে। ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে প্রায় ১৮০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। ডাবের পানি খাওয়ার পর পটাশিয়ামের কারণে শরীরে একটা শীতল অনুভুতি আসে। ডাবে ক্যালরি কম থাকে। তাই ডাব খেলে অনেক মোটা মানুষেরও কোন সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা নেই। কার্বোহাইড্রেডও তুলনায় কম থাকে। ক্যালসিয়াম ভালই থাকে। তা প্রায় ১৫ মিলিগ্রামের মত। ডাবে সোডিয়াম থাকে খুব কম।’ তিনি বলেন, ‘অনেকের ধারণা, ডাব খেলে সর্দি হয়। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভুল। কারণ, ডাবের সাথে সর্দি বা ভাইরাসের কোন সম্পর্ক নেই। গরমে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। ডায়রিয়া রোগে ডাবের পানি খুবই উপকারী। এটি শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে। আমাদের ঘামের সঙ্গে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফ্লোরাইড-অনেক কিছুই শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এগুলো পুরণ করার জন্য আমরা প্রতিদিন যদি একটা বা দুটো ডাব খেতে পারি তাহলে আমাদের শরীর বেশ ভাল থাকবে। সুতরাং ডাব শরীরের জন্য সব দিক থেকে ভাল। অন্য সব পানীয় থেকে ডাবের পানি নিরাপদ কিন্তু একটু ব্যয়বহুল পানীয়।
দাম বেশি হওয়ায় অনেক মানুষ ডাব না খেয়ে অন্য পানীয় পান করেন। তারা মনে করেন, সফট ড্রিঙ্ক ১৫ টাকা করে হলে, একটা ডাবের টাকায় তিনটা থেকে চারটি সফট ড্রিঙ্ক খেতে পারবেন। তাই টাকা বাঁচাতে ডাব না খেয়ে তারা সফট ড্রিঙ্ক খেয়ে থাকেন। আর টাকা বেশি খরচ হলেও একটু সচেতন যারা তারা ডাব খান। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. পলাশ কুমার সাহা আরো বলেন, এক কাপ ডাবের পানিতে যা খনিজ পদার্থ আছে, তা অনেক স্পোর্টস ড্রিংকের চাইতেও বেশি।
ডাবের পানি কিডনির পাথর সৃষ্টি রোধ করে এবং ডায়রিয়া, আলসার, গ্যাসটাটাইটিস বা অ্যাসিডিটি, মূত্রনালীর সংক্রমণ ও ইউরোলিথিয়েসিস প্রতিরোধ করে। ডাবের পানিতে এন্টিসেপটিক গুণ থাকাতে কাটা-ছেড়া জায়গায় ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। মুখের ক্ষত যেমন ব্রণ, মেছতা ও বসন্তের ক্ষত ডাবের পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন সি, রিবোফ্লোভিন ও কার্বোহাইড্রেট আছে।
ডাবের পানি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। উপজেলা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি সাংবাদিক সোহেল বলেন, ডাব বিক্রির কারনে আজ নারকেলের তৈরি পিঠা তেমন পাওয়া যায় না ছোট বেলায় নারকেলের তৈরি কুলি পিঠা, পাটিসাপটা, ধুপিপিঠা, নাড্ডু সহ বিভিন্ন ধরনের পিঠা পাওয়া যেত। বিভিন্ন সময় পিঠা উৎসব হতো এখন আর দেখা যায় না। তিনি আরো বলেন, অন্যদিকে ডাব এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। যায় ভালো বেতন বা ভালো ব্যবসা করে সাধারণত তারা ৬০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করে ডাব ক্রয় করে খাচ্ছে।
সরজমিনে গিয়ে কথা হয় উপজেলার ঈশাখাঁ মোবাইল মার্কেটের সামনে বসে ডাব বিক্রি করছিলেন মিণ্টু মিয়া । তিনি জানান, আমি ৬ বছর ধরে ডাবের ব্যবসা করে আসছি। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় জড়িত থাকার কারণে তিনি ডাব হাতে নিয়েই বুঝতে পারেন কোনটায় কতটুকু পানি আছে , কোনটায় কতটা পানি কম। তিনি জানান, ৬ বছর আগে একশ ডাব কিনতেন ১০০০ টাকায় আর এখন একটু বড় সাইজের একশ ডাব কিনতে অন্তত তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা লাগে।
ডাব বিক্রিতে তার খুব সুনাম রয়েছে। অনেকেই তার কাছ থেকে ডাব কিনে খান। এবার গরম ও রোজা মৌসুম থাকার কারণে বিক্রি অনেক বেশি ,প্রতিদিন ৭০থেকে১০০টি ডাব বিক্রি হচ্ছে। এতে তার সব মিলে ৫০০টাকা থেকে ৬০০টাকা লাভ থাকে। মিণ্টু জানান, তার বাড়ি উপজেলা মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বাড়িমজলিশ গ্রামে। তিনি প্রতিদিন সকাল হওয়ার সাথে সাথে ডাব নিয়ে হাজির হন তার গন্তব্য স্থানে।