নিউজ ডেস্কঃ দেশের ১৩টি কেন্দ্রিয় কারাগারের কারাকর্মীদের তিনটি ব্যাচের মাধ্যমে ‘মাদক নির্ভরশীল কারাবন্দিদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা’’ শীর্ষক প্রশিক্ষণটির প্রথম ব্যাচটি আজ ২৯ মে ২০২১ তারিখে উদ্বোধন করা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী প্রশিক্ষণটি জার্মান সরকার ও ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়নে সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জিআইজেড এর যৌথ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ কারা অধিদপ্তর ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজন করেছে।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) জনাব মোঃ খাইরুল আলম শেখ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন এবং জিআইজেড বাংলাদেশের iæj Ae j প্রোগ্রামের অপারেশন্স ডিরেক্টর মিজ তাহেরা ইয়াছমিন ও ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় মাদক বিরোধী কমিটির সদস্য ইকবাল মাসুদ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোঃ খাইরুল আলম শেখ তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কারাগারসমূহকে সংশোধনাগারে রূপান্তর ও বন্দিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ প্রিজন্স এন্ড কারেকশনাল সার্ভিসেস অ্যাক্ট’ এর খসড়া প্রণয়ন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি আরো বলেন, মাদক গ্রহণ একটি ব্যাধি, প্রত্যেক ব্যাধির ন্যয় মাদক নির্ভরশীলতা থেকেও মুক্তি সম্ভব। বন্দিদের পুনর্বাসনে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে কাজ করার বিষয়েও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোঃ মোমিনুর রহমান মামুন বলেন, মাদকাসক্ত কারাবন্দিদের সুস্থ করতে দেশের প্রতিটি কারাগারে গড়ে তোলা হয়েছে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র, যেখানে আড়াই হাজারের বেশি মাদক নির্ভরশীল বন্দিদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দেশের ৫৯টি কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দিদের জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মাদকাসক্তি নিরাময় ইউনিট চালু রয়েছে। এছাড়াও জেলা প্রশাসন ও কারা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ২৮টি কারাগারে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের সব কারাগারের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কারা অধিদপ্তর ও জিআইজেড বাংলাদেশ ‘সুষ্ঠু কারা ব্যবস্থাপনা’, ‘মাদক চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা, ‘মোটিভেশনাল সেশন, ‘মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট’ বিষয়ক ২৪টি প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল যেখানে ৪৮৯জন কারা কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেছিলেন।
জিআইজেড বাংলাদেশের রুল অব ল প্রোগ্রামের অপারেশন্স ডিরেক্টর তাহেরা ইয়াছমিন বলেন, ৩০ শতাংশ কারাবন্দি মাদকসংক্রান্ত অপরাধের সাথে জড়িত এবং সম্প্রতি কারা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী তা বেড়ে ৩৫ শতাংশের বেশি দাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে এই অবস্থা থেকে উত্তরন বেশ দূরূহ এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক অংশীদারত্ব কারাভ্যন্তরে ও সমাজে মাদকাসক্ত কারাবন্দিদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকে সফল করতে পারে।
প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে প্রশিক্ষণার্থীগণ মাদক নির্ভরশীল কারাবন্দিদের চিকিৎসা সেবা প্রদানে সক্ষমতা অর্জন ও সঠিকভাবে সঠিক জায়গায় তাদের চিকিৎসার জন্য রেফার করতে পারবে ফলে কারাগারে মাদকাসক্ত কারাবন্দিদের নিয়ে যে সকল অসুবিধা হয় তা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দুর করা সম্ভব হবে।
প্রশিক্ষণটিতে মাদকাসক্তি বিষয়ে আন্তর্জাতিক সনদ অর্জনকারী বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষকগণ বিভিন্ন সেশন পরিচালনা করবেন । উল্লেখ্য যে, স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তত্ত্বাবধানে তিনটি ব্যাচের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগারের ১১৭ জন কারা কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণটি প্রদান করা হবে। প্রথম ব্যাচে কাশিমপুর কেন্দ্রিয় কারাগার ১, কাশিমপুর কেন্দ্রিয় কারাগার ২, কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রিয় কারাগার ও কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে ৩৬ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করছেন।