ফেসবুকে এক ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে আমি একটা স্ট্যাটাস দিয়ে যে ভয়াবহ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি তা বলে বুঝাতে পারবো না। একইসঙ্গে আমার প্রতি বহু মানুষের ভালবাসা থাকার বিষয়টিও প্রথমবারের মতো অন্যভাবে অনুভব করতে পারলাম। সে ভালবাসায় অবিরাম শুভ কামনা রয়েছে, সে আন্তরিকতায় আমাকে মমতার ছায়ায় ঘিরে রাখা আছে, আছে অকৃত্তিম শ্রদ্ধার নিদর্শন। আমার প্রতি এত শত মানুষের অন্ধ বিশ্বাসের বিশালতায় আমি তটস্থ। এতগুলো মানুষ এমনভাবে মূল্যায়ন করেন আমাকে, এতোটা গুরুত্ববহ অবস্থানে রেখেছেন…তা ভাবতেই দায়িত্ববোধের পাহাড়সম বোঝা বহনের আতঙ্ক আমাকে পেয়ে বসে। আমার প্রতি আস্থা, ভালবাসার টান থেকেই হয়তো অনেকে অতিমাত্রায় মূল্যায়নের চেষ্টা করেছেন, এতে তাদের দোষের কিছু দেখি না। তবে তাদের এ মমত্ববোধের বিপরীতে কেবলই নিজের অযোগ্যতা আর দায়িত্বহীন ব্যর্থতার ক্ষতিয়ান দেখতে পাই। এ কারণেই লজ্জাবোধে থমকে দাঁড়ালাম, সকল ক্ষেত্রে আরো আরো আরো….দায়িত্বশীলতার অঙ্গিকার গ্রহণে বাধ্য হলাম।
আমার তথ্যসূত্র যাবতীয় তথ্য উপাত্ত, রেকর্ডিং পৌঁছে দিয়ে নিশ্চিত করে যে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় এক মানবাধিকার সংগঠনের মহাসচিব জনৈক আলমগীর সেলিমকে ঘিরে র্যাব ১০ এর একটি মিথ্যা নাটক সাজিয়ে চুড়ান্ত হয়রানি করছেন। এটুকু নিশ্চিত হয়েই “এবার হোটেল মালিকদের ঠ্যালা দেখুন…” শীর্ষক একটা স্টাটাস পোস্ট করি ফেসবুকে। সেখানে পক্ষে বিপক্ষে নানা মন্তব্য এলেও তাতে কিছু টের পাইনি। তবে আমার শুভাকাঙ্খীরা ঠিকই আমাকে টের পাইয়ে দিয়েছেন রাত সাড়ে তিন টার পর থেকে। একের পর এক ফোন আসতে থাকে, দেশ এবং বিদেশের। ফোন আসার ধকল চলতে থাকে একটানা বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত। অটো ফোন রেকর্ডের হিসেব অনুযায়ী ১৫৩টি ফোন কল রিসিভ করেছি, অন্যদিকে এফবি ইনবক্সে এসেছে ৮৯টি ম্যাসেজ। অধিকাংশ শুভাকাঙ্খীর অভিন্ন বক্তব্য: “অতি নি¤œমানের এ অপরাধীকে নিয়ে আপনার কাছ থেকে ভাল মন্দ কোনো লেখা আশা করছি না। প্লীজ! আপনি এখনই ফেসবুক স্ট্যাটাসটি রিমুভ করে দিন।”
অষ্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে বসবাসকারী সিদ্দিকুর রহমানের বাড়ি আমিনবাজার সংলগ্ন বড়দেশী এলাকায়। ফোনে বলছিলেন, কোনদিন দেখিনি, আপনার সঙ্গে কোন ভাবে পরিচয়ও হয়নি। কিন্তু মেজর সিনহা হত্যারহস্য উদঘাটনমূলক প্রতিবেদনগুলো পাঠ করতে করতেই আমরা কয়েকজন বাঙালি আপনার লেখার ভক্ত হয়ে উঠেছি। দুদন্ড সময় পেলেই আপনার ফেসবুকের ওয়ালে ঢুকে অনেক পুরনো সংবাদগুলো খুটিয়ে খুটিয়ে পড়ি। অনেক ভালবাসি আপনাকে। আপনার লেখনি বাংলাদেশকে প্রিজাইড করে, কোনো বাটপারের জন্য সাঈদুর রহমান রিমনের জন্ম হয়নি। মালয়েশিয়ার জহুরবারু এলাকায় “মালয় বাংলা” রেস্টুরেন্টের অংশীদার এনায়েত হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। খুবই আবেগঘন সম্বোধনের মাধ্যমে কথা বলছিলেন তিনি। এনায়েত বলেন, উলফা নিয়ে আপনার অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট থেকেই আমি আনার ভক্ত। সেই হিসেবে অনেক সিনিয়র ভক্তই বলতে পারেন, সেই ২০০৬ সালে পাঠ করেছিলাম রিপোর্টগুলো। বিশ্বাস করেন, আজও আপনার রিপোর্টগুলোতে চোখ বুলিয়েই বাংলাদেশটা দেখার চেষ্টা করি। আপনার রিপোর্টে কোনো পতিতা সর্দারের চেহারা ফুটে উঠুক তা মনে প্রাণেই চাই না। ভাই আল্লাহরওয়াস্তে আপনার ফেসবুকে এসব মানুষের নামটাও লেখার দরকার নেই। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থেকে নাহার আক্তার ফোন দিয়েছেন ফজর নামাজের পর পরই। বললেন, নামাজ শেষ করেই আপনাকে ফোন দিলাম। তিন বছর ধরেই আপনার নাম্বার সংগ্রহ করে রেখেছি, কিন্তু কোনদিন ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করিনি। ভাইয়্যা আপনি কোন্ এক নারী ব্যবসায়ির নাকি পক্ষে ফেসবুকে লিখেছেন তা নিয়ে এখানকার মানুষজন সনানা সমালোচনা করছে। দেশের নাম্বার ওয়ান সাংবাদিক হিসেবেই আপনাকে জানি, আপনার সব রিপোর্ট আমরা পড়ি, সংগ্রহে রাখি। কত রকম ঝুঁকি নিয়ে তবুও আপনি দেশবাসীকে সত্য খবরটা জানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেন। আপনার একেকটা রিপোর্ট বের হলেই মাকে পড়ে শোনাই। তিনি শুধু বলেন, নামাজ পড়ে তার নিরাপদ জীবন চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। নিজেদের অজান্তেই আমাদের শ্রদ্ধার একটা বড় জায়গা জুড়ে অবস্থান রয়েছে। আপনার ব্যাপারে ফেসবুকে কেউ বাজে কমেন্টস করলেও আমাদের অনেক খারাপ লাগে। নারী ব্যবসায়িকে নিয়ে লেখা আপনার পোস্টটা মুছে ফেলবেন কি ফেলবেন না তা আপনার ব্যাপার। তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার লেখা পছন্দ করি বলে কোথাও যেন আমরা ছোট না হই।
অভিন্ন সুরেই কথা বলেছেন রাজশাহীর বেড়পাড়ার বাসিন্দা শামী মেম্বার, শরীয়তপুরের নড়িয়া এলাকার মজু মিয়া, পুলিশের এসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তা আনিসুর রহমান ও মোমেনা জাহান, আরো অন্তত ১১ জন ইন্সপেক্টর, কোলকাতার প্রীতি সূত্রধর, আকাশবাণীর ইলারা, সুবেল, গৌরনন্দ, আর যাত্রাবাদী ও তার আশপাশ থেকে আরো অন্তত ২০ জন সাধারণ পাঠক।
সত্যিই, এ ভালবাসার কোনো তুলনা হয় না। সবচেয়ে ভাল লেগেছে ভক্ত পাঠকরাই যখন আমার মর্যাদার জায়গাটি নির্ধারন করে দিচ্ছেন, কী লিখতে পারবো কী পারবো না তা নির্ধারন করে দিচ্ছেন। পরিবারের অতিআপনজন ছাড়া আর কেইবা ভাবে কাউকে নিয়ে? অথচ কত বড় সৌভাগ্যবান আমি…ঝুঁকিপূর্ণ কোনো নিউজ ছাপা হলেই অজানা শঙ্কায় কোনো ভক্ত পাঠক নামাজে দাঁড়িয়ে আমার জানমালের হেফাজত কামনা করছেন, সেটা আমি জানি না, আমাকে জানাবার বোধও করা হচ্ছে না; একবার বিষয়টি ভেবে দেখুন তো। আমার ভুলভ্রান্তিতে ভরা লেখা পাঠ করেও তৃপ্তিবোধ করা আরেকজন মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল বলেন, রিমন ভাই আপনাকে চিনি না, দেখিনি অথচ শুধু নিউজ পাঠ করেই আমার আলিয়া মাদ্রাসার ৩৫ জন শিক্ষকই আপনার অন্ধ ভক্ত হয়ে আছেন। আমার নিজ বাড়িতেও অভিন্ন অবস্থা। আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, প্রতি রাতের তাহাজ্জুতের নামাজ শেষে মহান আল্লাহপাকের দরবারে দুটি হাত তুলে ফরিয়াদ করি..হে আল্লাহ, আমার এ ভাইটা নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে তোমার বান্দাদের অপরাধমুক্ত পরিবেশ তৈরির জন্য কাজ করছে, দুর্নীতি, লুটপাট, জুলুমবাজি থেকে তোমারই বান্দাদের হেফাজতের জন্য প্রানপণ লড়াই করছে। আমাদের জীবন থেকে দিন, মাস, বছর হায়াত কেটে হলেও রিমন সাহেবের আয়ু বাড়িয়ে দাও
এমন ভক্ত পাঠকদের কাছে নতশীরে দাঁড়িয়ে বলতেই পারি: আমি আমার বিষয় নির্ধারণ আর লেখার মানের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবো, সাবধান থাকবো…কোনভাবেই আমার লেখাকে ভালবেসে ছোট হবেন না আপনারা।
তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ইনভেস্টিগেশন সেল এর ইনচার্জ সাইদুর রহমান রিমন এর ফেসবুক থেকে।