তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিলেন সংসদ সদস্য ও চিকিৎসকগণ। বিশেষত, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের দূর্বলদিকগুলো সংশোধন করা প্রসঙ্গে আলোচকগণ গুরুত্বারোপ করেন। ৭ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন আয়োজিত সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এমপি, গাইবান্ধা-১ এবং সদস্য, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, এমপি, মহিলা আসন-২৪ এবং সদস্য, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব এপিডেমিওলজি এন্ড রিসার্চ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সঞ্চালনায় ‘করোনা সংলাপ: পর্ব-৩১’ আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ ছিল ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধন’।
এসময় ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, এমপি বলেন, তামাক বা তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর স্বাস্থ্যরক্ষায় তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বর্জনের বিকল্প নেই। কিন্তু ই-সিগারেট আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের কারণে তরুণ প্রজন্মের এর শিকার হওয়ার আশঙ্কা বেশি, যা জাতির জন্য সমূহের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বাংলাদেশে ই-সিগারেট/হিটেড টোব্যাকো/ভ্যাপিং টোব্যাকো বা এ ধরণের পণ্য নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট আইন নেই। যেহেতু বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক সিগারেট এবং এর সাথে সম্পর্কিত সমস্ত উপাদান আমদানির উপর নির্ভর করে এবং এখন পর্যন্তও এটি তৈরি বা উৎপন্ন শুরু হয়নি তাই এটি এদেশে নিষিদ্ধ করা সহজ হবে এবং আইন সংশোধনের মাধ্যমে এটি নিষিদ্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়।
অ্যাডভোকেট সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা, এমপি বলেন, আমাদের দেশে পাবলিক প্লেসে ধূমপান নিষিদ্ধ থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা মানা হয় না। বিশেষ করে পর্যটন সেক্টরের বিকাশের জন্য পর্যটন বান্ধব পরিবেশ জরুরী। সেজন্য রেস্তোরা ও পর্যটন এলাকা সহ সব ধরনের পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা উচিত। এজন্য আইন সংশোধনের মাধ্যমে পাবলিক প্লেসকে শতভাগ ধূমপানমুক্ত করা জরুরী।
অধ্যাপক ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হিট-নট-বার্ন বা ই-সিগারেট যে নামেই অবহিত করা হোক না কেন, এ ধরনের পণ্যকে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০টি সিগারেটের সমান ক্ষতি করে একটি ই-সিগারেট। ই-সিগারেট ব্যবহারে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে। ই-সিগারেটে যে উপাদানগুলো পাওয়া যায়, সেগুলোর মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন সেলের বিকল করাসহ ক্যান্সার সৃষ্টির জন্য দায়ী। ই-সিগারেটের তরল মিশ্রণের (ই-লিকুইড) মধ্যে থাকে প্রোপেলিন গ্লাইসল, গ্লিসারিন, পলিইথিলিন গ্লাইসল, নানাবিধ ফ্লেভার ও নিকোটিন। এই রাসায়নিকগুলো গরম হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটের ধোঁয়ার সমপরিমাণ ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হয়, যা মানব শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে অসম্ভব ক্ষতি করে।
অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণে যে বাধা রয়েছে সেগুলো হলো- বিদ্যমান আইনে গণপরিবহন ও রেস্তোঁরাসমূহে ক্ষেত্রবিশেষে ধূমপানের সুযোগ রাখা হয়েছে, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়নি, বিড়ি-সিগারেটের সিঙ্গেল স্টিক বা খুচরা শলাকা বিক্রি নিষিদ্ধ নয়, ই-সিগারেটের মতো এমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসমূহ আমদানি ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, সব ধরনের তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের আকার ও আয়তন নির্ধারণ না করায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা কার্যকর ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে ও তামাক কোম্পানির ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি’ বা সিএসআর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়নি। এছাড়া পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে সিঙ্গেল স্টিক সিগারেট কেনার সুযোগ নেই। কিন্তু আমাদের দেশে কোন বাধ্যবাধ্যকতা নেই। এই বিষয়গুলোতে আইনী বাধ্যবাধকতা দরকার। এজন্য আইনের সংশোধন জরুরী।