সাতক্ষীরা জেলার নওয়াপাড়া গ্রামের আলো-বাতাসে মনোরম পরিবেশে আমরা বড় হয়েছি। বন্ধুর নাম বিশেষ কারণে উচ্চারণ করলাম না। আমার বাড়ি থেকে খুব কাছেই
তার বাড়ি। প্রাইমারির পরে আর তাকে কেন জানি খুঁজে পেতাম না। হাইস্কুল ভিন্ন হওয়ায় আর তার দেখা পেতাম না।
মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে গেলেও আমি আর তাকে পাই নি। তার মাকে জিজ্ঞেস করলেও সঠিক জবাব পেতাম না।পড়াশোনায় সে সিরিয়াস ছিল কিন্তু আর্থিক সীমাবদ্ধতা তাকে অক্টোপাসের মতো ঘিরে ধরেছিল। আজ অনেক বছর পর তার খবর পেলাম। তার কথা শুনে আমার চোখে জল চলে আসছিল। আমার বন্ধুরা দেশ-বিদেশে ভালো অবস্থানে আছে। তাদের নিয়ে গর্ব করি। আমি জিলাস হই না। একইভাবে আমি আমার গ্রামের বন্ধুদের নিয়েও গর্ব করি।
তবে আমার বন্ধুটি জীবন-জীবিকার জন্য ঢাকা শহরে এসেছে। বর্তমানে রিক্সা চালায়! হতভম্ব হয়ে গেলাম শুনে।
বোবা কান্না থামাতে পারছিলাম না। তার জন্য কিছু করার দায়বদ্ধতা অনুভব করলাম। গ্রামে কিছু করার উপায় থাকলে হয়তো ঢাকা শহরের কঠিন জীবনে তাকে আসা লাগতো না। তার উন্নয়নের জন্যই আমার গ্রামের উন্নয়ন করা দরকার। তার মতো আরো অসহায় মানুষ আছে এলাকায়।
–গ্রামের রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করতে হবে।
— শিক্ষিত ছেলে মেয়েদের কর্মের ব্যবস্থা করতে হবে।
– বেকার যুবকরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্ম উপযোগী হবে।
— ক্ষুদ্র পরিসরে ব্যবসার সুযোগ করে দিতে হবে।
— এলাকার স্কুলের শিক্ষা মান সম্মত হতে হবে।
— খেলাধুলার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
–স্বাস্থ্য রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে।
— উন্নয়ন সংস্থার ব্যবস্থা করতে হবে।
–ঢাকাতে সাময়িক থাকার ব্যবস্থা থাকবে।
— প্রয়োজনে পাশে থাকতে চাই।
যার জন্য, এত কথা, সেই বন্ধুটির পাশে অচিরেই দাড়াব ইনশাআল্লাহ। আমার গ্রামের কোন বন্ধুর আর দুরাবস্থার
কথা আর শুনাতে চাই না। তাদের উন্নয়নের জন্য আমার
জ্ঞান -বুদ্ধি-মেধার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে চাই। সবাই মিলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। জীবন তো একটাই !
আর যদি বর্ণিত পরিকল্পনার কিছুই করতে না পারি,তাহলে আমি আমার সরকারি চাকরির প্রভিডেন্ট ফান্ডের যাবতীয় টাকা আমার অসহায় বন্ধুদের একেবারে দিয়ে দিব। গ্রাম ও গ্রামের মানুষের উন্নয়নে আমার আয়ের কিছু অংশও ব্যয় করতে চাই।
লেখকঃ আলমগীর হোসেন, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এবং কার্যনির্বাহী সদস্য অফিসার্স’ ক্লাব ঢাকা।