আশা:বৈশি^ক উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলবায়ু পরিবর্তন এবং এরই সাথে মনুষ্যসৃষ্ট নানা ধরনের সমস্যার পরিনতিতে দেশের দক্ষিন উপকূল জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। দিনদিন এই জলাবদ্ধতা সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগামী কোন এক সময় সাতক্ষীরার উপকূলভাগ পুরোপুরি পানিমগ্ন হয়ে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে জেলা শহর সাতক্ষীরাও জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে। উপকূলজুড়ে এখন জলাবদ্ধতা এক ভয়ানক আতংকের নাম।
শনিবার সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে কেন এই জলাবদ্ধতা এবং কি এর প্রতিকার এসব বিষয় নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহনকারীরা বলেন, জরুরী ভিত্তিতে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে কাজ না করলে এ অ ল বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে। কৃষি, মৎস্য, গবাদিপশু পালন স্থবির হয়ে পড়তে পারে। নোনা পানিতে উপকূল সয়লাব হচ্ছে এবং সেই সাথে পরিবেশ ও শ্যামল প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। ‘সুজন’ এর জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ সুভাষ চন্দ্র সরকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আরিফুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অনেকগুলি নদীর সংযোগ রয়েছে। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হলে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রয়োজন। নানা কারনে এই সমন্বয় না থাকায় আমাদের দেশের নদীগুলি মরনোন্মুখ হয়ে উঠছে। বাড়ছে নদীভাঙন। মানুষ হারাচ্ছে তার সহায় সম্পদ। সেইসাথে সাতক্ষীরা সহ দেশের উপকূলীয় অ ল হয়ে উঠছে জলাবদ্ধ। এই দুরাবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে সরকারের যেমন মহাপরিকল্পনা দরকার পাশাপাশি প্রশাসন এবং জনসম্পৃক্ত সংগঠনগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত চিংড়ী চাষ, নদীখাল দখল করে মাছের চাষ, নদীতে নেটপাটা ফেলা এসবকিছুই বন্ধ করতে না পারলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিদের আরও সোচ্চার হতে হবে। তাদেরকে প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজে নামতে হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধে নদীর বর্তমান অবস্থা, নদী অথবা প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষনে প্রচলতি আইনসমূহ, বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় পানি নীতি ১৯৯৯, পরিবেশ সংরক্ষন আইন ১৯৯৫, জলাধার সংরক্ষন আইন ২০০০, পানিসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সভার সিদ্ধান্ত সমূহ তুলে ধরা হয়। এতে সাতক্ষীরার কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর, আশাশুনি, তালা, শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা সহ ৭টি উপজেলার নদনদী ও খালসমূহের বর্তমান অবস্থাও তুলে ধরা হয়।
আলোচনায় অংশগ্রহন করে বক্তারা বলেন, সরকারের মহাপরিকল্পনার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহন করা দরকার। এর মধ্যে রয়েছে নদীর দুইপাশ দখলদার উচ্ছেদ, নদীতে বাঁধ দিয়ে মাছের চাষ বন্ধ করা, কৃষিজমি নষ্ট করে বাড়িঘর তৈরী না করা, সাতক্ষীরা শহরের পানি নিষ্কাশনের জন্য পরিকল্পিত ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, জেলার সবগুলি নদী ও খাল খননের আওতায় এনে পানিপ্রবাহ সচল করা, বাড়িঘর নির্মান আইন অনুসরন করা, বসতঘরের ভিটা উঁচু করা, পুকুর জলাশয় ভরাট বন্ধ করা, সাতক্ষীরার প্রানসায়ের খাল খননের নামে চলমান দূর্নীতি রোধ করা। বক্তারা আরও বলেন, ২০১৯ সালে হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী নদী দখলকারীর শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দেশের নদী দখলকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরী বলে উল্লেখ করেন। অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ী চাষের নামে ব্যবসা বন্ধ করে জলাবদ্ধতা দূরীকরনের উদ্যোগ নিতে হবে। এছাড়া সব খালগুলি খনন করে নদীর সাথে সংযুক্ত করে দেওয়া অত্যন্ত জরুরী। স্থানীয়ভাবে এসব উদ্যোগ গ্রহন করে জলাবদ্ধতার অভিশাপ থেকে সাতক্ষীরাবাসী মুক্ত হতে পারবে বলে গোলটেবিলে জানানো হয়।
গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মোঃ শহিদুর রহমান, সুজন উপদেষ্টা এ্যাড. শাহনাজ পারভিন মিলি, টিআইবির অধ্যাপক পবিত্র মোহন সরকার, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, জেলা দূর্নীতি দমন বিরোধী কমিটির অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা স্বদেশ পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, হাঙ্গার প্রজেক্টের রুবিনা আক্তার, প্রভাষক হেদায়েতুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু নাসের, অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন, ফিংড়ী ইউপি চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, মুরারী মোহন সরকার, সাংবাদিক সুকুমার দাস বাচ্চু, মোঃ শাহ আলম, সাংবাদিক আব্দুল ওহাব প্রমুখ। ————