উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে:
২৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে না খুঁড়েই সাড়ে চার কিলোমিটার প্রশস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া এলাকায় ২৭কিলোমিটার সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে না খুঁড়েই সাড়ে চার কিলোমিটার প্রশস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া এলাকায় যথাযথ মান ও প্রশস্ততার কাজ চলছে জেলা সড়কটিতে। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ২৭ কিলোমিটার সড়কের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে না খুঁড়েই সাড়ে চার কিলোমিটার প্রশস্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সড়কটি হলো নড়াইল-ফুলতলা জেলা সড়ক। এর ছয় কিলোমিটার পড়েছে যশোরের অভয়নগর উপজেলায়। সড়ক ও জনপথ বিভাগ, নড়াইলের কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘দুই বছর আগে মহাসড়কটিতে সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। আমি সম্প্রতি এখানে বদলি হয়ে এসেছি। সম্প্রসারিত অংশের কাজ ঠিকমতো না করে মেকাডাম করা অসম্ভব। এরপরও যখন অভিযোগ উঠেছে মহাসড়কের ওই অংশ পরীক্ষা করা হবে। কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ আশরাফুজ্জামান আরও বলেন, ‘সড়কে মাটির কাজের জন্য ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু ঠিকাদার ওই কাজ করেননি। তাঁরা এখন বলছেন, তিন মাসের মধ্যে মাটির কাজ করবেন। মাটির কাজে ঠিকাদারকে কোনো বিল দেওয়া হবে না। সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, নড়াইল কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের আওতায় নড়াইল থেকে খুলনার ফুলতলা উপজেলা পর্যন্ত নড়াইল-ফুলতলা জেলা মহাসড়ককে যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণের কাজ করা হচ্ছে। মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ২৭ কিলোমিটার ৩০০ মিটার এবং প্রশস্ত ৫ দশমিক ৫ মিটার। সড়কটির ৬ কিলোমিটার অভয়নগর উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নে পড়েছে। এই কাজের দায়িত্বে রয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মঈনউদ্দিন। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২২ সালের ৩০ জুন। সড়কটির অভয়নগর অংশের ৪ কিলোমিটার ৬০০ মিটারে বর্তমান প্রস্থ ৩ দশমিক ৬৬ মিটার। এটি বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৫ মিটার করা হচ্ছে। বর্ধিত অংশ প্রথমে তিন ফুট খুঁড়ে গভীর করতে হবে। এরপর বালু দিয়ে সমান করতে হবে। এরপর খোয়া ও বালু দিয়ে সমান করতে হবে। পরে পাথর ও বালু দিয়ে সমান করতে হবে। শেষে বিটুমিন (পিচ) দিতে হবে। গত সোমবার গিয়ে দেখা যায়, অভয়নগর অংশের প্রায় ছয় কিলোমিটারে পিচের কাজ শেষ হয়েছে। তবে শুভরাড়া গ্রামের সর্বজনীন গাছতলা মন্দিরের থেকে একটু সামনের মোড়ে ১১০ মিটার মতো অংশে পিচ দেওয়া হয়নি। মহাসড়কের ওই অংশে বালু এবং পাথর দিয়ে সমান করে রাখা হয়েছে। দুটি গ্রামের অন্তত ১০ জন অভিযোগ করেন, প্রশস্ত করার সময় ঠিকাদার মাটি কাটার যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে একেবারেই পাশের ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে সড়কে দিয়েছেন। এতে সড়কের ঢালের গোড়ার দিকের মাটি আলগা হয়ে গেছে। এ জন্য সামান্য বৃষ্টিতে গোড়ার মাটি সরে সড়কের পাশ ভেঙে পড়ছে। সড়কে অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া বালু, খোয়া, পাথর ও পিচ ঠিকমতো দেওয়া হয়নি। বাশুয়াড়ী গ্রামের রেজাউল মোল্যা বলেন, ‘রাস্তাটি আগে ১২ ফুট ছিল। পরে দুই পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট বাড়িয়ে ১৮ ফুট করা হয়েছে। কিন্তু ওই বাড়ানো ৬ ফুট খোঁড়া হয়নি। আগের রাস্তার পিচ ও খোয়া উঠিয়ে ফেলে পরে পুরো ১৮ ফুট রাস্তা পাথর ও বালু দিয়ে সমান করে তার ওপর পিচ দেওয়া হয়েছে। আমরা সিডিউল দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার তা দেখাননি। সে সময় কোনো সাইনবোর্ডও দেওয়া হয়নি। কাজ শুরুর দেড় বছর পর গত দেড় মাস আগে ইংরেজিতে লেখা একটি সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে।
শুভরাড়া গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, ‘রাস্তার দুই পাশে আমার জমি। ঠিকাদার জোর করে জমির মধ্যে বড় বড় গর্ত করে মাটি কেটে রাস্তায় দিয়েছে।’ এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য ঠিকাদার মো. মঈনউদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়েও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সওজের যশোর সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহমেদ শরীফ বলেন, সড়কের ওই সাড়ে চার কিলোমিটার অংশ পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।