বড় কষ্টে আছে আইজুদ্দিন। এই আধুনিক ডিজিটাল যুগের সাথে খাপ খাওয়াতে যেয়ে আইজুদ্দিনের হাপিত্যেশ অবস্থা। কিন্তু কতটুকুই বা তিনি খাপ খাওয়াতে পেরেছেন!!! পারতপক্ষে তিনি কোন বিষয়ে কারো উপর নির্ভরশীল হতে চান না। কিন্তু এই পড়তি বয়সে এমন এক জামানায় এসে তিনি উপনীত হয়েছেন যেখানে তথ্য-প্রযুক্তির বড়ই কদর। আর এই তথ্য-প্রযুক্তির মূল আধার হলো বিভিন্ন প্রকারের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস, যেমন-ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, ট্যাব, মোবাইল ইত্যাদি। এ সকল ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস সমূহের মধ্যে থাকা ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, মেসেঞ্জার, ভাইবার, ইন্সটাগ্রাম, ই-মেইল, লিংকডইন ইত্যাদি মেকানিজম সমূহের মাধ্যমে তথ্য- লেখালেখি-ছবিসমূহ এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে প্রবাহিত হয়ে থাকে। ই-মেইল এর আবার বিভিন্ন রকমফের আছে। এই যেমন- ইয়াহু.কম, জিমেইল.কম, আউটলুক.কম, জহু.কম ইত্যাদি। ডিভাইস সমূহের মধ্যে আবার বিভিন্ন প্রকারের সাইট আছে, এই যেমন-গুগোল, ক্রম, ইউটিউব ইত্যাদি। এগুলোর সার্চ অপশনে কোন কিছু লিখে ছেড়ে দিলে সে সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত তারা সরবরাহ করে থাকে। ডিভাইস গুলোর মেকানিজম সমূহ ব্যবহারে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করতে হয়। কেউ কেউ বলেন যে এগুলো নাকি এখন ব্যক্তিত্ব এবং রুচিবোধের পরিচায়ক। আপনি কেমন সব লেখালেখি লিখছেন এবং ছবি আপলোড করছেন তার উপরেই মূলতঃ এ জগতের অভিজ্ঞজনদের দ্বারা আপনার ব্যক্তিত্ব ও রুচিবোধের পোস্টমর্টেম হয়ে থাকে।
আইজুদ্দিন মহা ব্যস্ত মানুষ। উল্লেখিত মেকানিজম সমূহতে ঢু মারার একমাত্র সময় হল অফিসে যাওয়া-আসার পথটুকু আর শুক্রবারের সকালের ঘন্টাদুয়েক। গতকাল অফিসে ঢোকার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে এক বন্ধুর পরিবর্তিত প্রোফাইল পিকচার দেখে আইজুদ্দিনেরও একটু বাসনা হল কিন্তু তাড়াহুড়োর মধ্যে কিসে কি করতে যেয়ে তার ফেসবুকের প্রফাইল পিকচারটি অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে পরিবর্তিত হয়ে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই অফিসের ফাইল-পত্র চলে আসে বিধায় প্রোফাইল পিকচারে কি আকাম হয়ে আছে সারাদিনে তা আর দেখার ফুরসত হয়নি। সন্ধ্যার পরে লন টেনিস খেলে বাসায় ফেরার পথে তিনি দেখেন যে তার প্রোফাইল পিকচারের মাথার অর্ধেক কাটা। বাসায় ফিরে লজ্জাবনতভাবে আমতা আমতা করতে করতে-
-সুমি, তুমি কি একটু সাহায্য করবা? দেখোতো আমার মাথা কেটে গেছে।
– আ হা রে!!! ক্যামনে কাটলো? কই? দেখি। বারবার বলি ওই লন টেনিস খেলাটি বাদ দাও কিন্তু কে শুনে কার কথা………
– আরে ধুত্তরি!! হার্ড কপিতে না, সফট কপিতে- ফেসবুকের প্রোফাইল পিকচারে।
– ও বুঝছি!!! ছবি তো ভালই হইছে, আমি তো কমেন্ট করেছি।
– নিশ্চয়ই তুমি মহব্বতের নজর দিয়ে দেখনি।
– রাখো তোমার মহব্বত। সারাদিন পর বাসায় এসে আমার খবর নেওয়ার খবর নেই, ওনার মাথা কাটা পড়েছে। রাখো তুমি…….., গোসল সেরে বাচ্চাদেরসহ দ্রুত খেতে বস।
আইজুদ্দিন অগত্য গেলেন বড় মেয়ের কাছে–
– মা, আমার মাথাটা ঠিক করে দিতে পারবা?
– মাথা ব্যথা করছে, আব্বু? তেল-পানি মালিশ করে দিব?
– না রে, মা। আমার প্রোফাইল পিকচারের মাথা কেটে গেছে।
– ও বুঝছি। ওটা রিসাইজ করতে সময় লাগবে, আমার পরীক্ষা। অনেক পড়ালেখা…..
– আসলে তোমরা কেউই চাও না যে অনলাইনে আমি একটু সময় ব্যয় করি।
এরই মধ্যে বাসার উইকএন্ডের মেহমান আমার একমাত্র ডাক্তার শালা এসে হাজির।
– শাওন, তুমি কি একটু আমার প্রোফাইল পিকচারটা ঠিক করে দিতে পারবা?
– জাস্ট ওয়ান মিনিট, ভাইয়া।
হাফ মিনিটের মধ্যেই আইজুদ্দিনের কাটা মাথার সার্জারি হয়ে গেল। সম্পূর্ণ মাথা সহ আইজুদ্দিন তার প্রফাইল পিকচার পেলেন যা তিনি রাত্রে “অনলি মি” করে রেখেছিলেন, এখন এই লেখাটুকু সহ “পাবলিক” করে দিলেন। এই “অনলি মি” আর “পাবলিক” করাটাও সম্প্রতি তিনি বউ এর নিকট থেকে শিখেছেন।
সুপ্রিয় ফেসবুক বন্ধুদেরকে একই বিষয়ে দ্বিতীয়বার কষ্ট দেওয়ার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
লেখকঃ বাংলাদেশ পুলিশ এর ডিআইজি মোঃ গোলাম রউফ খান।