“Lies are necessary if the truth is too hard to believe🔥” এরকম আগুণঝরা অনেক কথাই বলে গেছেন তিনি। মৃত্যুর তিন দশকের পরেও থামেনি তাকে নিয়ে গল্প, সিনেমা, ডকুমেন্টারি কিংবা গান বানানো। সর্বকালের সেরা ড্রাগলর্ড, নিষ্টুর খুনী, দক্ষ আলোচক অথবা একজন ভালো স্বামী কিংবা পিতা পাবলো এসকোবার…
কৃষক পিতা আর স্কুল শিক্ষক মাতার ছেলে এস্কোবার কিশোর বয়সেই জাল সার্টিফিকেট বিক্রি, স্টেরিও সরঞ্জাম পাচার, সমাধির পাথর চুরির মাধ্যমে অপরাধ জগতে পদার্পন। বড় হয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হবার ইচ্ছাও প্রকাশ করেন বন্ধুদের কাছে। ১৯৭৪ সালে গাড়ি চুরি করে গ্রেফতারের পর আপরাধ জগতের গুরুদিক্ষা লাভ করেন, অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত মাদক চোরাকারবারী হয়ে ওঠেন…
প্রতি সপ্তাহে আনুমানিক ৪২০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় নাম ওঠান। ছিলো ব্যক্তিগত বিমান, নিজস্ব বিমানপোত, বিলাসবহুল প্রাসাদ, চিড়িয়াখানা আর সে সময়ের সবচেয়ে দামী বিলাসবহুল গাড়ি। বিমানে করে কোকেনের চালান পাঠাতেন আমেরিকায়। তখনকার ৮২% কোকেন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ছিলো তার হাতে। পাচারের কাজে সাবমেরিনও ব্যবহার করতেন। ফলে এফবিআই য়ের তালিকায় মোষ্ট ওয়ান্টেড অপরাধী। কলাম্বিয়া সরকারকে চাপ দেয়া হয় তাকে আমেরিকার কাছে প্রত্যর্পণের। সেসময় তাকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর না করার বিনিময়ে সমস্ত বৈদেশিক ঋণ ১০ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের প্রস্তাব দেন সরকারকে। সহজেই ম্যানেজ করতে পারতেন সরকারী কর্মকর্তা, পুলিশ, বিচারক অথবা রাজনীতি বিদদের । তাদের প্রস্তাব দিতেন, প্লাটা ও প্লমো অর্থাৎ সিলভার (টাকা) চাও নাকি সিসা (বুলেট)। এদের বেশীর ভাগ প্লাটাই চয়েজ করতো। আর প্লাটা অপছন্দকারিদের জন্য খুব তাড়াতাড়ি সিসার ব্যবস্থা হয়ে যেতো। ১৯৮৫ সালের ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে এক সিসা হামলায় কয়েকজন বিচারপতি সহ শতাধিক নিহত হন। তার বিরোধিতাকারি রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে মারতে গিয়ে ১১০ জন যাত্রিসহ আস্ত বিমান উড়িয়ে দেন, যদিও টার্গেট সে বিমানে ছিলো না। এফবিআইয়ের মোষ্ট ওয়ান্টেড থাকা অবস্থায় ছেলেকে সাথে নিয়ে আমেরিকা বেড়িয়ে আসে, ছবি তোলে খোদ হোয়াইট হাউজের সামনে (ছবি কমেন্টে)।
অথচ এই লোকটি গরীবদের কাছে ছিলো “রবিনহুড” তাদের মাঝে অকাতরে অর্থ বিলি করতেন। দরিদ্রদের জন্য হাসপাতাল, গির্জা, স্কুল, স্টেডিয়াম এবং আবাসন নির্মাণ করেছিলেন। এমনকি তিনি স্থানীয় ফুটবল দলগুলোকে স্পনসর করতেন। তিনি ১৯৮২ সালে দেশটির কংগ্রেসে একটি বিকল্প আসনে নির্বাচিত হন। দুই বছর পরে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রকাশের পর তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। বিচারমন্ত্রী যিনি এই পদত্যাগে ভূমিকা রেখেছিলেন কয়েকদিনের মধ্যে তিনি অজ্ঞাত ব্যক্তির হামলায় নিহত হন।
বছরে তার আয় ছিলো প্রায় করতেন প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার। যার ১০% মানে ২ বিলিয়ন ডলার নাকি ইঁদুরের পেটে কিংবা পানিতে ভিজে নষ্ট হতো।
১৯৯১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপে এসকোবার ৫ বছরের জন্য জেলে যেতে রাজি হন। তবে শর্ত দেন যে, জেলখানা হতে হবে তার নিজের বানানো। শর্ত মোতাবেক ৬৩ মিলিয়ন ডলার খরচায় ৭০০০ একর জায়গায় নির্মান করেন নিজস্ব জেলখানা “লা ক্যাথেড্রাল”, যেখানে ছিলো কৃত্রিম জলপ্রপাত, পূর্ণাঙ্গ বার, ফুটবল মাঠ, টেলিফোন যোগাযোগ এমনকি বিমান উঠানামা করার জন্য রানওয়ে। আর কারারক্ষী সব তার পছন্দের লোকজন…!
এত কিছুর পরেও ঝামেলা বাধে লা ক্যাথেড্রালে তার অনুগতদের গুলিতে দুজন রক্ষী নিহত হলে তাকে সরকারী জেলে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তা জানতে পেরে জেল থেকে পালায় এসকোবার। ১৯৯৩ সালের ২রা ডিসেম্বর পলাতক থাকা অবস্থায় আমেরিকান প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত টাস্ক ফোর্স, তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক কারবারির দল আর তার হাতে নিহতদের পরিবারের গঠিত বাহিনী তাকে তিন দিকে ঘিরে ফেলে। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে ছাদে উঠে পালাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে সমাপ্তি ঘটে এস্কোবার যুগের। তবে কে তাকে গুলি করেছে এমন দাবী করার সাহস কারো হয়নি। আমেরিকার জেলের চাইতে দেশের কবরই তার পছন্দ ছিলো। সে ইচ্ছাই পুরণ হয়…শেষকৃত্যে প্রায় ২৫০০০ লোক জড়ো হয়েছিলো।
শোনা যায় পলাতক অবস্থায় তার মেয়ে শীতে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ঘরে আগুণ জ্বালানোর মতো কিছু না থাকায় ঘর গরম রাখার জন্য ডলার পোড়াতে থাকেন, এক রাতে নাকি প্রায় ৩ মিলিয়ন ডলার পোড়ানো হয়েছিলো। তিনি নাকি বলতেন, “আমি সবকিছু replace করতে পারি শুধু বউ আর সন্তান ছাড়া….”