সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০২:২৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম:
বাঘ বিধবা… ভৈরবে একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি আবদুল্লাহ ওরফে জুয়েল গ্রেফতার। প্রফেসর আফসার আহমেদ বাবলুর ভাইঝি ‘সুপ্তি’র স্ট্রোকে মৃত্যু লালমনিরহাটে চালের বস্তায় ৩৮ লাখ টাকা জব্দ করেছে পুলিশ। স্মার্ট ভূমিসেবা সপ্তাহে নাগরিকের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছি—সহকারী কমিশনার মোঃ আজাহার আলী কালিগঞ্জে সড়ক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু নিহত কালিগঞ্জ উপজেলায় পিস ফ্যাসিলিটিটর গ্রুপ এর ফলোআপ মিটিং অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সংঘাত চায় না : বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে আইজিপির সাক্ষাৎ ধুনটে কেরাম বোর্ড ও লুডু খেলার নামে রমরমা জুয়ার আসর 
মনীষা চক্রবর্তী বিসিএসের চাকরি ছেড়ে তিনি আজ গরীবের ডাক্তার”

মনীষা চক্রবর্তী বিসিএসের চাকরি ছেড়ে তিনি আজ গরীবের ডাক্তার”

 

মোঃ শামীম স্টাফ রিপোর্টার।

সাহসী ও প্রতিবাদী এক নারীর নাম মনীষা চক্রবর্তী (২৯), নারীর প্রতি সহিংসতা, সবধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্যের লড়াই করে যাচ্ছেন ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। শুধু নারীদের অধিকার আদায়ে-ই নয়; তনু হত্যার প্রতিবাদে বরিশালে ছাত্র ধর্মঘটসহ ধারাবাহিক আন্দোলন, সারাদেশে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব, নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন ও শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময়ই রাজপথে ছিলেন সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকায়। মেডিক্যালে লেখাপড়া শেষ করে ৩৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন মনীষা চক্রবর্তী। যার হাতে থাকার কথা ছিলো-স্টেথোস্কোপ সার্জারির যন্ত্রপাতি। যার থাকার কথা ছিলো হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে জনগণের সেবায়। সেই মনীষা চক্রবর্তী আজ রাজপথে-রাজনীতির মাঠে। সরকারী চাকরিতে যোগ না দিয়ে তিনি বিনা পয়সায় গরীব মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। নারী, শিশু ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে আন্দোলনে থাকেন। এ কারণে বরিশালের শ্রমিকদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়। শ্রমিক ও বস্তিবাসীর কাছে তিনি ‘দিদি’ নামে পরিচিত। আবার কারও কাছে তিনি পরিচিত গরিবের ডাক্তার নামে। ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর জন্ম বরিশাল নগরীর শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেনের পৈত্রিক বাড়িতে। নগরীতেই তার বেড়ে ওঠা। তার বাবা আইনজীবী তপন কুমার চক্রবর্তী ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা। মা রিনা চক্রবর্তী গৃহিণী। তিন বোনের মধ্যে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সর্বকনিষ্ঠ। মনীষা চক্রবর্তী দাদা বিশিষ্ট আইনজীবী সুধীর কুমার চক্রবর্তীকে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী নৃশংসভাবে হত্যা করে। অসংখ্য প্রগতিশীল মানুষদের সানিধ্যে বেড়ে ওঠা ডাঃ মনীষার ছোটবেলা অতিবাহিত হয় ফুপা লেখক ও নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার সংস্পর্শে। এইচএসসি পাশের পর মনীষা চক্রবর্তী ভর্তি হন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজে। ওই কলেজে পড়ার সময় তিনি যুক্ত হন বাসদের রাজনীতিতে। তিনি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বরিশালের সদস্য সচিব। বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে তিনি এমবিবিএস পাস করেন। ৩৪তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগ পেলেও ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সরকারী চাকরিতে যোগ না দিয়ে নারীর প্রতি সহিংসতা, সবধরনের নিপীড়ন ও বৈষম্য, নারী নির্যাতন বিরোধী আন্দোলন এবং শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ে সোচ্চার ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে নয় বছরের পথচলায় নানা চড়াই-উতরাই পেরোতে হয়েছে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীকে। বরিশালের রাজনৈতিক অঙ্গনে রাজপথে নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করা নারী সংখ্যা খুব বেশি নেই। একজন নারী হয়ে রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রাম, হরতালে পিকেটিং অনেকেই ভালো চোখে দেখেনি। প্রথম প্রথম নারী নেতা বলে অনেকেই ব্যঙ্গ করতো। হাসি-তামাশাও করেছে অনেকে কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন মনীষা। কারও সমালোচনাকে তিনি পাত্তা দেননি। প্রতিবাদী কর্মকান্ডের কারণে হামলা, মামলা ও কারাভোগও করতে হয়েছে ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীকে। বরিশাল নগরী থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশা উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত বছরের ১৯ এপ্রিল শ্রমিকরা শহরে মিছিল বের করেন। তাদের সাথে ছিলেন মনীষাও। সেদিন পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। ২৬ এপ্রিল জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তাকে অসংখ্যবার লাঠিপেটা, মারধর ও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে। তার পরেও অদম্য মনোবল এবং সাহসিকতার কারণে তিনি রাজনীতি ছেড়ে পিছপা হননি। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের গত নির্বাচনে প্রথম নারী মেয়র প্রার্থী হিসেবে লড়েছেন ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। চরম আর্থিক সঙ্কটও তাকে দমাতে পারেনি। ডাঃ মনীষার নির্বাচনী ব্যয় নির্বাহ হয়েছে নগরীর খেটে খাওয়া দিনমজুরদের মাটির ব্যাংকে সঞ্চয় করা টাকায়। মেহেনতি মানুষ তাদের মাটির ব্যাংকের সঞ্চয়ী অর্থ তুলে দিয়েছিলেন ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীর হাতে। সেই অর্থেই তিনি লড়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের সাথে। ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী বলেন, প্রাচীনকাল থেকেই সভ্যতা বিকাশে নারীর ভূমিকা অপরিসীম। যুগে যুগে নারীরা সময়ের মাইলফলক হিসেবে অবদান রেখে চলেছেন। সেই নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। নারীর স্বার্থ রক্ষা এবং নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে নারীবান্ধব রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। শুধু নারীবান্ধব রাষ্ট্রই নয়, নারীবান্ধব সমাজ ও পরিবার গঠণ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, নারীদের বাঁকা চোখে দেখার দিন শেষ। তারা এখন নিজেরা জায়গা করে নিচ্ছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াচ্ছেন। নারীরা যথেষ্ট সবল। নারীরা ভাবেন, স্বপ্ন দেখেন কিন্তু সেটার বাস্তব রূপ দিতে সাহস পাচ্ছেন না। সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে ও মনোবল বাড়াতে তিনি আজীবন লড়াই করে যাবেন।

Print Friendly, PDF & Email

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Comments are closed.




© All rights reserved © MKProtidin.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com