বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৩০ অপরাহ্ন

ভৈরবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত অর্ধশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর

ভৈরবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে আহত অর্ধশত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর

১৯ নভেম্বর, মোঃ ছাবির উদ্দিন রাজু  ভৈরব ( কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা॥

 ভৈরবে গোছামারা গ্রামে বালু উত্তোলণকে কেন্দ্র করে ২ পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত আহত ও ১০ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর করা হয়েছে । আজ রোববার সকালে সাবেক মেম্বার শাহজাহান সরকার ও একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়ার লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

জানা যায় এল জিইডির তত্বাবধানে কোদালকাটি নদীর গোছামারা থেকে কালিকাপ্রসাদ সিদ্দিরচর পর্যন্ত খালটি ৩ টি ধাপে খনন করা হবে। খালটি খননে ১২ কোটি টাকা টেন্ডার আহ্বান করা হয় । কিন্ত সিডিউল অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর থেকে খাল খননের কথা থাকলে ও ওয়ার্ক অর্ডারের ১ মাস আগে থেকেই কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসাস মমিনুল হক এন্ড হাসান কনষ্ট্রাকশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ( জেভি) খনন কাজটি ৭০ ভাগ এসকে ভেটর ও ৩০ ভাগ লেবার দিয়ে কাজটি করার কথা থাকলে ও নির্ধারিত সময়ের আগেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে কৃষকরা ক্ষতির আশংকায় বালু উত্তোলনে বাধা দেয়। বালু উত্তোলনের ফলে পক্ষে বিপক্ষে একাধিকবার মারামারির ঘটনা ঘটে। সিডিউল অনুযায়ী শুকনো মৌসুমে বালু উত্তোলনের কথা থাকলেও বর্ষাকালেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করেন ঠিকাদার প্রতিষ্টানের স্বত্তাধিকারি সেলিম মিয়া। প্রতিকার চেয়ে একাধিক বার স্থানী য় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১৫ দিন আগে ভৈরব উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। নির্দেশনা অমান্য করে বালু উত্তোলন করায় গত ১৬ নভেম্বর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইকবাল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুর্ব নির্দেশনা অমান্য করায় ড্রেজারে পাইপ খুলে ফেলে দেয়। উক্ত ভ্রাম্যমান আদালতে স্থানিয়রা সহযোগিতা করায় ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুল চেয়ারম্যানের লোকজন শাহজাহান মিয়ার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এতে উভয় পক্ষের ৫০ জনের মত আহত হয়। এদের মধ্যে রাশেদ মিয়া (৬৫) কে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। জনি মিয়া, সফি উদ্দিন ও আমির হোসেনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রাখা হয়েছে। রুবেল, মহরম আলী, সফি উদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, মোস্তফা, সৌরভ আহমেদ, জীবন, জিলানী, ইবাদুল, জোবায়ের, সজীব সরকার ও সালামসহ সবাই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান বলে নিশ্চিত করেন ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. রেজিনা পারভীন। এ ছাড়া অন্যান্য আহতরা বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

শিমুলকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ভূইয়া রিপন বলেন, আজ সকালে ড্রেজারের বালু উত্তোলনকারী লেবার সরাফত উল্লাহকে মারধোর করে শাহজাহান মিয়া মেম্বারের পক্ষের লোকজন। এ সময় কিছু পাইপও তারা ভেঙ্গে দেই। এতে করে সাবেক চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া পক্ষের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন।

সাবেক শাহজাহান মেম্বার বলেন, নিয়ম না মেনেই মোমিনুল হক ট্রেডার্স নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তারা সিডিউলে ট্রেন্ডার অনুযায়ী শুকনো মৌসুমে ৭০% কাজ ভেক্যু দিয়ে, ৩০% কাজ লেবার দিয়ে করাবে। তা না করে বর্ষা মৌসুম থেকেই তারা অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন শুরু করে দিয়েছে। এতে আমাদের অনেক জমি ক্ষতি হয়েছে। আমরা বাধা দিলে আমাদের উপর চড়াও হয়ে আক্রমণ করছে।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু একটি মহল ড্রেজারের শ্রমিককে মারধোর করে প্রায় শতাধিক পাইপ ভেঙ্গে দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রতিবাদ করতে গেলে এতে সংঘর্ষ বাধে।

ভৈরব থানা অফিসার ইনচার্জ মো. সফিকুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। ড্রেজারের মাধ্যমে বালু উত্তোলন নিয়েই দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। তবে একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই বিবাদ তৈরি করে দিয়েছে। ইতিমধ্যে দুই পক্ষের ৪ জন ৪জন করে ৮ জনের মোছলেখা নেয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, এলাকা বাসিদের অভিযোগ পেয়ে খাল খননে অনিয়ম পাওয়ায় খনন বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

Comments are closed.




© All rights reserved © MKProtidin.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com