রেললাইনে বসন্ত
তৌফিক জহুর
একটা দুপুর ঘুমিয়ে গেলে
মাথার উপর রোদের সবজি বহন করে হেঁটে যাই
বসন্তের সিটি বাজিয়ে যে ট্রেন একটু পরেই আসছে
সেই ট্রেনের সওয়ারী আমরা দু’জন
মেজেন্ডা খোঁপায় হুইসেল বাজিয়ে ট্রেন আসে
প্যারিস রোড থেকে পশ্চিমপাড়া পেরিয়ে
রিকশা অদ্ভুত ছন্দে পাড় হয় রেশম বাগান
শত পাখির মিছিলে এগিয়ে যাই প্লাটফর্মের বারান্দায়
অপেক্ষা দাঁড়িয়ে আছে সানগ্লাস চোখে
যে চোখের শুভ্র চাহনি পৃথিবীতে যুদ্ধ থামায়
ট্রেনের দুলুনি সমুদ্র ঢেউয়ের ওমে
বসন্ত ট্রেন ঝিরিঝিরি কুয়াশায় ঢোকে সন্ধ্যার গলুইয়ে
আত্মায় আত্মা মিশে গেলে ঋতুরাজ স্বাগত জানায়
এই বসন্তে উন্মুক্ত গগনে আকাশগঙ্গায় ভাসে তাঁর মুখ
রোদের সানকিতে হলুদে নৃত্য করে প্রজাপতি
ট্রেন এসে থামে স্বপ্নে আচ্ছন্ন অচেনা প্লাটফর্মে
এসো, এবার হেঁটে হেঁটে বৃষ্টির আদর নিয়ে
রিজার্ভ করি পরবর্তী ট্রেনের কামরা
এবার চলো প্রকৃতির কাছে, বৃক্ষের প্রেমে।
আমার কফিন
তৌফিক জহুর
আলোর শাওয়ারে ভিজতে ভিজতেই একদিন
একটা সন্ধ্যায় ঢেকে যায় বিকেলের সোনালি রোদ
পাখিরা আকাশে উড়তে উড়তেই কর্পূর হয়ে গেলো
হঠাৎ উধাও প্রিয় অপেক্ষার চোখ
এতো আলো চারদিকে তবু অন্ধকার
গোরস্থানে হেঁটে গেলো আমার স্বজনেরা
নতুন সফরে আব্বা আম্মা যে স্টেশনে পৌঁছেছেন
স্পষ্ট কোদালের ঘাই শুনছি
অচেনা কন্ঠের কথোপকথন পরিস্কার শুনতে পাচ্ছি
গোরখোদকদের একজন বললো-
লোকটা কবিতা লিখতো, আমি নিজেই হেসে ফেললাম
আশ্চর্য, আমার ঠোঁট জোড়া নড়ছে না
আমার মাথার উপর মাছি বিষাদ সুরে উড়ছে
মাছি কি জেনে গেছে দেহঘড়ির ব্যাটারী শেষ
গোসল শেষে খাটিয়ায় কাফনে আবৃত আমি
আতর লোবানের গন্ধে বিদায়ের সুর বাতাসে
জানাজায় আমার প্রশংসা করলেন ইমাম সাহেব
সকলেই সমস্বরে বললেন, তিনি ভালো মানুষ ছিলেন
বারজাক জীবনের আলোর সাইরেন বাজে
কয়েক সেকেন্ডে মায়া জড়িয়ে যায়… এতো মায়া
সাড়াহীন শব্দহীন চোখ খোঁজে তোমাকে
কাঁধে চেপে গন্তব্যে নিয়ে গেলো ওরা
পৃথিবী ভ্রমণ শেষ হলে মাটির বিছানায় বিশ্রাম শুরু
অন্ধকারের মধ্যে সুড়ঙ্গ পথে আলো আসে
দুয়ার খুলে দু’জন হাতে ধরিয়ে দেয় অনন্তের গ্রীনকার্ড
সেতু পার হয়ে যাই যেখানে অপেক্ষায় স্বজনেরা
পৃথিবীতে রেখে এলাম কবিতার খাতা, প্রেম, মায়া
প্রিয় নারীর উষ্ণ সান্নিধ্য এবং মুঠো মুঠো আবেগ।