ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানের মোবাইল গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর। মোবাইল অপারেটরসমূহ গ্রাহকদের প্রতিশ্রুত সেবা প্রদান, গ্রাহক পর্যায়ে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট প্রদান এবং অপারেটর যে সকল সুবিধাগুলো আমরা দিচ্ছি সেগুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি। এরই ধারাবাহিকতায় ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ এবং মোবাইল অপারেটরসূমূহের সম্মিলিত উদ্যোগে দেশে মোবাইল সেবাকে গ্রোবাল স্ট্যান্ডার্ডে উপনীত করতে সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিটিআরসি ভবনে মোবাইল অপারেটরদের গ্রাহক সেবার মান সংক্রান্ত বিটিআরসি আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অ্যামটব সভাপতি ও গ্রামীণ ফোন সিইও ইয়াসির আজমানসহ মোবাইল ফোন অপারেটরসমূহের শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
কোভিডকালে মোবাইল অপারেটরসমূহে ভূমিকার প্রশংসা করে জনাব পলক বলেন, মোবাইল ফোন এখন জীবনের একটা অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু আমরা দেখছি যে, আমাদের গ্রাহকেরা অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সেবা নিয়ে সন্তুষ্ট নন। ‘কলড্রপ একটা নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের মোবাইল গ্রাহকেরা যেমন এ বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট। বিটিআরসি যে পরীক্ষাগুলো করেছে সে রিপোর্ট অনুসারে কোয়ালিটি অব সার্ভিস খুব একটা সন্তোষজনক নয়। হ্‘ে
‘আমরা একটা স্মার্ট টেলিকম ইকোসিস্টেম বাংলাদেশকে উপহার দিতে চাই’ উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে কলড্রপ নিয়ে অপারেটরগুলো থেকে যে তথ্য দিক না কেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না গ্রাহকদের কাছ থেকে একটা উল্লেখযোগ্য চিত্র না পাব বা রিক্যাকশন না পাব ততক্ষণ পর্যন্ত শুধুমাত্র কাগজে-কলমে বা ডিজিটাল উপস্থাপনায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সন্তুষ্ট হব না। যেভাবেই হোক আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কে উন্নীত হতে চাই। কারণ এটা আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংয়ের একটা বড় প্রভাব ফেলে। ’
জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কলড্রপের জন্য গ্রাহকের যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা সেটা আমরা আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে যাব। মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটরগুলো যদি প্রতিশ্রুত সেবা না দেয় তাহলে তাদের গ্রাহককে আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিনি বলেন, আমরা মনিটরিং এবং অডিট নিয়মিত করব। কল ড্রপ নিয়ে ঢাকার কয়েকটি এলাকার ড্রাইভ টেস্টের ফলাফল পর্যালোচনা করে জনাব পলক বলেন, শহর বা গ্রাম যেখানেই হোক আমরা মিডিয়ার যে রিপোর্ট, সেগুলো আমলে নেব এবং সেখানে আমরা ড্রাইভ দেব।
ফাইন্যান্সিয়াল অডিট এবং টেকনিক্যাল অডিটের ওপর জোর দেওয়া হবে জানিয়ে জনাব পলক বলেন, ইন্টারনেটের গতি কেন কম হচ্ছে, গ্রাহকের প্রতিক্রিয়া কী সেগুলো আমলে নিয়ে ড্রাইভ দেব। আমরা কারিগরি পরিদর্শন দল গঠন করেছি, তারা সেগুলো টেস্ট করছে।
এক্ষেত্রে অপারটেরদের সহায়তাও দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অপারেটরদের হাত-পা বেঁধে নদীতে ফেলে সাঁতার শেখাব না, আমরা সাঁতার শিখিয়ে সক্ষমতা দিয়ে দেব যাতে নদীটা পার হওয়া যায়।
তিনি মোবাইল অপারেটরদের উদ্দ্যেশে বলেন ‘কলড্রপ যাতে বিশ্বের অন্যতম একটা ভালো বেঞ্চমার্কে পৌঁছাতে পারি। সেটা আমাদের মূল লক্ষ্য। কলড্রপে সময় নষ্ট হয়, এনার্জি নষ্ট হয়, গ্রাহক বিরক্ত হয়। পাশাপাশি আপনাদেরও কিন্তু টেকনিক্যাল এবং ফাইন্যান্সিয়াল লস হয়। এসব বিষয় খেয়াল করে সমাধানে যেতে হবে। সমস্যা যত কঠিনই হোক না কেন সমাধান করতে হবে। ’
পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল সেবা নিয়ে জনাব পলক বলেন, ফাইভজি রোল আউটেরও একটা নির্দিষ্ট টার্গেট বিটিআরসি এবং চারটি মোবাইল অপারেটরকে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এয়ারপোর্ট, সি পোর্ট এবং কিছু বিজনেস ডিস্ট্রিক্টস, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক-শিল্পাঞ্চলে ফাইভজি রোল আউট করা। তারপর গ্রাজুয়েলি রোল আউট করা।
তিনি বলেন, আমাদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্টের থার্ড টার্মিনাল অক্টোবরে উদ্বোধন হতে পারে। অক্টোবরকে টার্গেট করে চারটি মোবাইল অপারেটরকে একটা চ্যালেঞ্জ দিতে চাই, যেন অক্টোবরের ৩০ তারিখের মধ্যে ফাইভজি ওখানে নিশ্চিত করতে পারে। পাশাপাশি গুলশান, বনানী, মতিঝিল, আগারগাঁও এলাকায় ফাইভজি এনাবল অনেক স্মার্টফোন ব্যবহার করা হয় বেশি। আমার বিশ্বাস এখানেও মনোযোগ দেবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনায় কীভাবে ফাইভজি ও আইওটি কীভাবে ব্যবহার করতে পারি সে বিষয়েও কাজ করছি। আমরা আশা করি সেখানেও দ্রুত আমরা ফাইভজি ব্যবহার করতে পারব।