আপডেট টাইম :
শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৯.১০ পিএম
৭
বার পঠিত
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের রাজনীতিতে তরুণদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, একটি বড় অংশ রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় থাকলেও তাদের স্বাধীন চিন্তার বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির মাধ্যমে। তরুণরা যখন আদর্শিক ও সৃষ্টিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরিবর্তে ক্ষমতাসীন দলের আনুগত্যকেই অগ্রাধিকার দেয়, তখন তাদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এই গবেষণায় লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক তরুণদের ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ করা হবে এবং এর সম্ভাব্য সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব আলোচনা করা হবে।
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি: ‘লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি’ বলতে বোঝায় যখন রাজনৈতিক কর্মীরা আদর্শ ও নীতির চেয়ে কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি, পরিবার, গোষ্ঠী বা দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রকাশ করে। এই প্রক্রিয়ায় তরুণরা স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর চারপাশে আবর্তিত হয়।
লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য
১। দলীয় নেতাদের প্রতি অন্ধ আনুগত্য
২। বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অনুপস্থিতি
৩। ব্যক্তিস্বাধীনতার সংকোচন
৪। ক্ষমতার বিনিময়ে সুবিধা লাভের মানসিকতা
দলের বাইরে চিন্তা ও সমালোচনার অনীহা
* লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির পেছনের কারণ
বাংলাদেশসহ অনেক দেশে ছাত্র ও যুব রাজনীতি মূলত ক্ষমতাসীন দলের নিয়ন্ত্রণে চলে, যেখানে তরুণদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করার সুযোগ সীমিত থাকে।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক নির্ভরশীলতা: রাজনৈতিক কর্মীদের একটি বড় অংশ ছাত্রাবস্থায় দলীয় নেতাদের দ্বারা আর্থিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়, যা তাদের লেজুড়বৃত্তিক হতে বাধ্য করে।
কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা: সুশৃঙ্খল ও যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরি লাভের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেক তরুণ রাজনীতিকে ক্যারিয়ারের মাধ্যম হিসেবে দেখে এবং দলীয় আনুগত্যের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সংহত করতে চায়।
ক্ষমতার আকর্ষণ: তরুণদের মধ্যে একটি বড় অংশ রাজনৈতিক ক্ষমতার মাধ্যমে সামাজিক প্রতিপত্তি ও অর্থনৈতিক সুবিধা অর্জনের লক্ষ্যেই লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ে।
* লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে তরুণদের ভবিষ্যৎ
নেতৃত্বের সংকট: স্বতন্ত্র চিন্তার অভাবের ফলে তারা প্রকৃত রাজনৈতিক নেতা হয়ে উঠতে পারে না।
পরনির্ভরশীলতা: সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা নির্ভরশীল হয়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতে তাদের ক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
রাজনৈতিক জীবনের অনিশ্চয়তা: ক্ষমতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তাদের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে, কারণ তারা কেবল ক্ষমতাসীনদের ছায়ায় বেড়ে ওঠে।
সৃজনশীলতার অভাব: এ ধরনের তরুণরা সমাজে নতুন উদ্ভাবনী চিন্তা ও পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হয়।
নেতিবাচক সংস্কৃতি বিস্তার: দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অযোগ্য ব্যক্তিদের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ তৈরি হয়।
চাকরি ও ক্যারিয়ারের প্রতিবন্ধকতা: স্বাধীন চিন্তার অভাবে তারা ব্যবসা, চাকরি বা অন্য কোনো ক্ষেত্রে টিকে থাকতে সমস্যায় পড়ে।
* লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে উত্তরণের উপায়
রাজনৈতিক সংস্কার: দলের ভেতরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী করতে হবে। তরুণদের জন্য রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও আদর্শভিত্তিক নেতৃত্ব বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন: শিক্ষায় সমালোচনামূলক চিন্তা ও রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নিরপেক্ষ ছাত্ররাজনীতির চর্চা করতে হবে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি: তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করলে তারা রাজনৈতিক সুবিধাভোগী হওয়া থেকে বিরত থাকবে। দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে তাদের স্বাধীন ক্যারিয়ার গড়ে তোলার সুযোগ দেওয়া যেতে পারে।
পরিশেষে, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি স্বল্পমেয়াদে সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে এটি তরুণদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়। আদর্শগত ও নীতিনির্ভর রাজনীতির অনুপস্থিতি তাদের স্বাধীন চিন্তাশক্তি ও সৃষ্টিশীলতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এজন্য রাজনৈতিক দল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমাজকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই গড়ে তুলতে পারে এবং রাজনীতির একটি সুস্থ ধারার প্রতিষ্ঠা হয়।