উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধিঃ স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রী জখমের অভিযোগ। হাসপাতালে ভর্তি স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে দোষারোপ ভারতের মুম্বাই এলাকায় পতিতালয়ে যেতে অস্বীকৃতির কারণে স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ (২৮) এমনই অভিযোগ করেন। উজ্জ্বল রায় নড়াইল জেলা প্রতিনিধি জানান,
মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর আগে রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টার দিকে ওই গৃহবধূকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নড়াইল সীমান্তবর্তী খুলনার ফুলতলা উপজেলার যুগ্নীপাশা গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে তার স্বামী (৩৭) লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে। পরে গৃহবধূকে ঘরের মধ্যে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতিবেশিদের মাধ্যমে খবর পেয়ে বাবার বাড়ির লোকজন গত সোমবার সন্ধ্যায় উদ্ধার করে গৃহবধূকে নড়াইল সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
তবে নির্যাতিতা গৃহবধূর স্বামী এ অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেন, আমি স্ত্রীকে ভারতে যেতে নিষেধ করলেও সে কোনো ভাবে মানতে রাজি নয়। তাকে বাঁধা দেয়ায় দেড় বছরের ব্যবধানে আমাকে দুইবার ডির্ভোসপত্র পাঠিয়েছে। আমি ডির্ভোসপত্র গ্রহণ না করে তাকে বুঝিয়ে আমাদের বাড়িতে রাখার চেষ্টা করেছি। আমাদের দাম্পত্যজীবনে সাত বছরের একটি মেয়ে সন্তান আছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রায় ১০ বছর আগে নড়াইল সদরের রুখালী গ্রামের দরিদ্র ঘরের মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেন পাশের খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলার যুগ্নীপাশা গ্রামের এক কাঁচামাল (তরকারি) বিক্রেতা। তবে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। স্বামী তার স্ত্রীকে প্রায়ই মারধর করে ভারতে যাওয়ার জন্য চাপ দেয়। একপর্যায়ে ওই গৃহবধূকে তার স্বামী ২০১৪ সালে ভারতে নিয়ে মুম্বাই এলাকায় দেহব্যবসায় বাধ্য করে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় তিন বছর আগে সেখান (ভারত) থেকে ওই গৃহবধূ স্বামীসহ বাড়িতে চলে আসেন। এরপর আবারো গৃহবধূর ওপর শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এ নিয়ে অন্তত পাঁচবার এলাকায় শালিস হয়েছে। তবে তাদের দাম্পত্য জীবন সুখের হয়নি। প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকে। এরই মধ্যে গত রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৩টার দিকে ওই স্বামী তার স্ত্রীর হাত-পা ও মুখ বেঁধে বাথরুমের মধ্যে লোহার রড দিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতন চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় স্ত্রীর মাথা ও কপালে একাধিক সেলাই দেয়া হয়েছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গৃহবধূ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার স্বামী আবারো আমাকে জোর করে ভারতে নিয়ে দেহব্যবসা করাতে চায়। যেতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে আমাকে মারধর করা হয়েছে। ওর (স্বামী) নামে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আজ বুধবার মামলা দায়ের করব।
অন্যদিকে অভিযুক্ত স্বামী বলেন, স্ত্রীকে ভারতে যেতে বাঁধা দেয়ায় প্রায়ই আমার সঙ্গে তার ঝগড়া-বিবাদ হয়। এ নিয়ে পারিবারিক এবং গ্রাম্য পর্যায়ে অনেক শালিস হয়েছে। এলাকার লোকজনের কাছে খোঁজখবর নিলে আমার কথার সত্যতা মিলবে। আমি আগে কাঁচামাল বিক্রি করতাম। এখন ইটভাটায় কাজ করে কষ্টের মধ্যে সংসার চালালেও স্ত্রীকে ভারতে যেতে দিতে রাজি না। তবে স্ত্রীকে সামলাতে না পেয়ে আমাদের মেয়ের বয়স যখন আড়াই বছর, তখন আমরা ভারতে যাই। প্রায় তিন বছর ওইখানে (ভারত) থাকার পর স্ত্রীকে বুঝিয়ে বাড়িতে চলে আসি। এখন আমার স্ত্রী আবার ভারতে যেতে চায়। নিষেধ করায় আমাদের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ হয়েছে। রাগের মাথায় তাকে আমি মারধর করেছি। নড়াইল স্বামীর নির্যাতনে স্ত্রী ছটপট করছে হাসপাতালে।