উন্নয়নের অভিযাত্রায় অদম্য বাংলাদেশ গড়ার গর্বিত অংশীদারজেলা প্রশাসন স্বাভাবিক সময়ে বা জরুরী পরিস্থিতিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে আসছে। যেকোন স্থানীয় বা জাতীয় দুর্যোগে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যদের দুর্গতদের পাশে থাকার অভিজ্ঞতা নতুন কিছু নয়। যেকোন ধরনের দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা প্রচলিত আইন-বিধি ও সৃষ্ট পরিস্থিতির আলোকে সকল কাজের সমন্বয় করে থাকি। শুধুমাত্র জাতীয় দুর্যোগকালীন সময়ে নয়, যেকোন পরিস্থিতিতে প্রশাসন পরিবারের সদস্যরা ব্যক্তিস্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে জাতীয় স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। জনস্বার্থ রক্ষায় সরকার কর্তৃক প্রদেয় এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন করতে গিয়ে ঘটে যাওয়া দুই-একটি নেতিবাচক ঘটনার ব্যাপক প্রচারণায় ব্যস্ত থাকা কিছু মানুষের জন্য আমাদের ইতিবাচক কর্মকান্ডগুলো হারিয়ে যায়। তারই সাথে হারিয়ে যায় আমাদের প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিন-রাত সেবা প্রদান করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা, কর্মজীবনে ছুটি বিলাসিতায় পরিনত হওয়ার করুণ নিয়তি ,আর কর্মস্থলে কাটানো প্রতিটা ঈদের দিনের দীর্ঘশ্বাসের ইতিহাস। করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত ঝুঁকির বিশ্বব্যাপী এই ক্রান্তিকালীন সময়েও আমাদের প্রশাসন পরিবার অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কোন ধরনের প্রতিরোধী ব্যবস্থা ছাড়াই সংক্রমনের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে জেলা প্রশাসক, ইউএনও, এসিল্যান্ড থেকে শুরু করে নবীন সহকারী কমিশনারগণও দিনরাত খেটে যাচ্ছেন। হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে আমরা সংক্রমনের ঝুঁকি থাকা সত্বেও সবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করছি, চিহ্নিত করার জন্য লাল পতাকা সাথে মেয়াদোর্ত্তীকালীন সময় উল্লেখ করে স্টিকার লাগিয়েছি। বাজারে পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ ও দ্রব্যমূল্যের দাম যাতে বৃদ্ধি না পায় এ বিষয় নিশ্চিত করতে গলদঘর্ম হচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও জনসাধারণকে নিরাপদে ঘরে রাখতে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। করোনা সংকটের বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের এই দিনে সবাই যখন ঘরে বসে ছুটি কাটাচ্ছে সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারেও দেশের সকল জেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন শুক্র ও শনিবারে যে কাজগুলো করেছে তার একটি ছোট্ট ফিরিস্তি তুলে ধরছি:
• করোনা সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় পৌরসভা ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় শহরজুড়ে জনসমাগমের স্হানগুলোতে ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হয়।
• নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও ঔষধের দোকানে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার জন্য দোকানের সামনে দাগ দিয়ে জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়। জেলা প্রশাসকসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা প্রত্যক্ষভাবে এ কর্মসূচীতে অংশ নেন।
• মানুষ যাতে অযথা আতঙ্কগ্রস্ত না হয়ে পড়ে এজন্য জেলা প্রশাসন কর্তৃক করোনা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ , চিকিৎসা সুবিধা,দ্রব্যমজুদ পরিস্হিতি সম্পর্কে প্রতিমূহূতে প্রতিবেদন প্রেরনসহ প্রেসরিলিজ দেওয়া ।
• সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ও জনসাধারণকে নিরাপদে ঘরে রাখতে প্রতিদিন জেলার সকল নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ,এসিল্যান্ড, ইউএনও সবাই পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সাথে সারা জেলায় চষে বেড়াচ্ছেন।
* শনিবার সকালে সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত কর্মকর্তা,SP, CSসহ জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের নিয়ে করোনা প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেলে এই জেলার করণীয় সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
* করোনা আক্রান্ত রোগীদের সম্পূর্ণ আলাদাভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য জেলার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নবনির্মিত হাসপাতালটি পরিদর্শন করে শয্যাসহ সকল প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণ মজুদের পরিকল্পনা করা হয়।
*জেলা প্রশাসনের সকল কর্মকর্তাদের সাথে বর্তমান বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে সর্বোপরি সাধারণ জনগণের সাথে সদ্ব্যবহার করে দায়িত্ব পালনের জন্য সকলকে উদ্বুদ্ধ করা হয়।
• জেলার দুস্হ,ভাসমান ও করোনার কারণে কর্মহীন পরিবারগুলোকে সুবিধা দেওয়ার জন্য তাদেরকে চিহ্নিতকরণপূর্বক ত্রানসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিতরণ করার জন্য সকল ইএনওদের জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করা হয়।
• জেলার দুস্হ,ভাসমান ও করোনার কারণে কর্মহীন পরিবারগুলোকে যাতে বাইরে গিয়ে তার করোনার ঝুকিতে না পরে এবং না খেয়ে তাদের দিন কাটাতে না হয় এজন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশনায় দুস্হ পরিবারসমূহকে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি মসুরডাল, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিড়া একটি সাবানসহ প্যাকেট তাদের বাড়িতে গিয়ে বিতরণ করা হয়।
*এখানেই শেষ নয় ভ্রাম্যমান দোকান পরিচালনা, স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধকরণ বিষযয়ে বাজার কর্মকর্তার সাথে আলোচনা করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
• এছাড়াও যেকোন ধরণের সংকটকালীন অবস্হা মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সর্বদা সতর্ক অবস্হায় রয়েছে। শুধুমাত্র সরকারি দায়িত্বপালনের বাধ্যবাধকতা পালনের অংশ হিসাবে নয়, মানবতার কল্যানে প্রশাসন পরিবার সর্বদা নিঃস্বার্থভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং আগামী দিনেগুলোতেও জাতির প্রতি আমাদের এ প্রতিশ্রুতি বহাল থাকবে।
আমাদের এই কর্মস্পৃহা দেখে কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোকজন হয়তো আমাদেরকে হতোদ্যম করতে নেতিবাচক মন্তব্য করে থাকেন তারা জানেন না যে তাদের এই নেতিবাচক মন্তব্য আমাদেরকে কখনোই হতোদ্যম করতে পারেনি পারবেও না । আমাদের কর্মস্পৃহা পূর্বের মতোই অটুট থাকবে বরং জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে আরো বেগবান হবে।